
ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণায় শেষ হলো তিন দিনব্যাপী ‘গৃহায়ন অর্থায়ন মেলা-২০১৭’। গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) থেকে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে এ মেলা শুরু হয়ে চলে আজ শনিবার (২১ অক্টোবর) রাত ৯টা পর্যন্ত। গৃহায়ণ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসতে প্রথম এই মেলাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি)।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সার্বিক সহযোগিতায় মেলায় ৩১টি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান, সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সর্বমোট ৪৭টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। মেলায় সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে গ্রীনবীজ এ্যাড পয়েন্ট। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলাটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিলো। এছাড়া, প্রতিদিন র্যাফেল ড্রতে ছিলো আকর্ষণীয় পুরস্কার।
১৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় সোনারগাঁও হোটেলের বেলকোনি হলে এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন ষোষণা করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। আগ্রহীরা একই ছাদের নিচে এসে কোন আবাসন কোম্পানি কী দামে প্লট বা ফ্ল্যাট দিচ্ছে তার পাশাপাশি তা নিতে কোন ব্যাংক কত শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে- তাও জানতে পারেন মেলায় এসে।
উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরিতে ক্রেতাদের নানা ধরনের ছাড় দিয়ে থাকেন তাঁরা। কিন্তু অনেকেই বিষয়গুলো জানেন না, তাই এসব তথ্য তুলে ধরতেই এ মেলায় অংশ নিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি মেলা উপলক্ষেও নিয়ে এসেছেন বাড়তি কিছু সুবিধা।
বিএইচবিএফসি জানিয়েছে, মেলায় বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের ছিলো বিশেষ অফার। অনেকেই দেন বুকিং মানিতে বিশেষ ছাড়। এছাড়া, মেলা উপলক্ষ্যে প্রায় প্রতিটি ফ্ল্যাটে ছিলো বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা।
প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, মেলার মূল উদ্দেশ্যই গৃহায়ণ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে এক ছাদের নিচে এনে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি করা, যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।
মেলা উপলক্ষে এককালীন মূল্য পরিশোধে ৩০ শতাংশ ছাড় দেয় পূর্বাচল মালুম সিটি। রাজউক পূর্বাচলের ৪ ও ২১ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন এই আবাসনে প্রতি কাঠা জমি ১৪ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ ৭২ মাসের মধ্যে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে বলে জানান মালুম গ্রুপের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. মেশকাত হোসেন। তিনি বলেন, প্রতি কাঠা জমি এক লাখ টাকায় বুকিং দিয়ে বাকি টাকা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। গৃহায়ন মেলায় যেহেতু এক সাথে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, তাই গ্রাহকরাও একই জায়গা থেকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী বাড়ি বানানো বা ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ পাবেন।
মেলায় আসা ক্রেতারাও জানান, বেশি পরিমাণ ছাড়ের সুবিধা নিতে একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখছেন তাঁরা। এক ব্যবসায়ী বলেন, কে কেমন সুবিধা দেয় তা তো জানতাম না। এখানে বিভিন্ন স্টল আছে, ঘুরে দেখতেছি। যেখানে বেশি কিস্তির সুবিধা পাব, সেখান থেকেই কিনব।
এদিকে, বাড়ি বা ফ্ল্যাট নির্মাণের ক্ষেত্রে মোট ব্যয়ের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয় সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার গোলাম নবী মল্লিক বলেন, আমরা প্রথমবারের মতো গ্রাহকদের সুবিধার্থে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে দেড় বছর ও ফ্ল্যাট নির্মাণের ক্ষেত্র ছয় মাস পর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দিচ্ছি। যেহেতু ঋণ নেওয়ার পর বাড়ি বানাতেও সময় লাগে, তাই ঋণ নেওয়ার পরের মাস থেকে কিস্তি দেওয়াটা গ্রাহকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। সে কারণেই আমরা তা ঋণদানের দেড় বছর পর থেকে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দিচ্ছি। ৯ শতাংশ হারে ঋণ দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটি। ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিচ্ছে তারা।
মেলায় অংশ নেওয়া জাপান গার্ডেন সিটির সিনিয়র এ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার (মার্কেটিং) মাকসুদুর রহমান জানান, ১৮৬৮ থেকে ২০৫৬ বর্গ ফুটের অ্যাপার্টমেন্টগুলো তারা ৩০ শতাংশ এককালীন পরিশোধের পর মাসিক কিস্তিতে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন। তবে ক্রেতারা নগদ অর্থে ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটি কিছুটা ছাড় দেবে।
এদিকে, পৃথকভাবে মেলা পরিদর্শন করেন বিএইচবিএফসি’র চেয়ারম্যান শেখ আমিনউদ্দিন আহমেদ, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্ী, রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) লিয়াকত আলী ভূইয়া, সংগঠনটির পরিচালক কামাল মাহমুদ, মো: শাকিল কামাল চৌধুরীসহ আরো অনেকে।
আরএ/আরবি