আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
‘২৫ বছরে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে রিহ্যাব’

দেশের নাগরিকদের আবাসনের চাহিদাকে সামনে রেখে আশির দশকে বেসরকারিভাবে শুরু হয় আবাসন ব্যবসা। পরবর্তীতে এই খাতে শৃঙ্খলা আনতে ১৯৯১ সালে মাত্র ১১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। সংগঠনটি গঠনের পর দীর্ঘ ২৫ বছরে গ্রাহকের কাছে এক লক্ষ ৪৩ হাজার ফ্ল্যাট ও প্রায় ৭০ হাজার প্লট হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল)। গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বেলকোনি হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।

আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, রিহ্যাব বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা শহরকে একটি ঝুঁকিমুক্ত পরিকল্পিত নগরায়নে রূপান্তরের পাশাপাশি আবাসন চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে কাজ করছে রিহ্যাব সদস্যরা। ঢাকাসহ সারা দেশে রিহ্যাবের সদস্য ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান একটি পরিকল্পিত নগর নির্মাণের জন্য তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। তাদের সৃষ্টিশীল চিন্তা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় ঢাকা এবং ঢাকার বাহিরে নির্মাণ হচ্ছে দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা ও সুউচ্চ ভবন। দেশের স্থাপত্য সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এই খাতের গতিকে করেছে তরাণি¦ত। রিহ্যাব গঠনের পর দীর্ঘ ২৫ বছরে গ্রাহকের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে এক লক্ষ ৪৩ হাজার ফ্ল্যাট ও প্রায় ৭০ হাজার প্লট। নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পরিকল্পিত নগরায়নে দেশ এগিয়ে গেছে অনেক দূর। দেশে পরিবেশবান্ধব আবাসনের স্বপ্ন পূরণে আমরা সব সময়ই দৃঢ় প্রত্যয়ী।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, সংগঠনটির বিপুল কার্যক্রমে গত কয়েক দশকে সহজে আবাসনের মালিকানা সৃষ্টি মানুষের মনে আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ বিভিন্ন লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আবাসন খাতের অবদান প্রায় ১৫%। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সাথে ৩৫ লক্ষ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল দুই কোটি লোকের অন্নের যোগান দিয়েছে। রেমিট্যান্স আহরণে আবাসন খাতের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। এছাড়া, আবাসন খাত নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সৃষ্টি করছে, যা প্রকারান্তরে দেশের উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে।

শামসুল আলামিন বলেন, আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশীদারিত্ব হিসেবে অনেক কল্যাণকর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছি। সম্প্রতি আমরা রিহ্যাবের পক্ষ থেকে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিবিরে ৫০০ স্যানেটারি ল্যাট্রিন ও বিশুদ্ধ পানির জন্য ১০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। কুড়িগ্রামে অসহায় দুস্থদের জন্য ২২টি এবং ভোলায় ৬৫ ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এছাড়া, বিভিন্ন সময় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ধানমন্ডি এবং গুলশান থানায় পুলিশের কাজে সহায়তার জন্য গাড়ী প্রদান, অটিস্টিকদের সহায়তাকারী সংগঠনসহ বিভিন্ন সাংবাদিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আর্থিক সহায়তা করেছি। এছাড়াও রোগাক্রান্ত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ যাদের চিকিৎসার সামর্থ্য নেই তাদের আর্থিক সাহায্য করেছি। চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালে ১৬টি বেড প্রদান, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বার্ণ ইউনিটে বেড প্রদানসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে রিহ্যাব। বিভিন্ন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে রিহ্যাব এর পক্ষ থেকে।

তিনি আরও বলেন, “রিহ্যাব” বাংলাদেশের আবাসন খাতে সরকার স্বীকৃত একমাত্র প্রতিনিধিত্বশীল শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করার মহৎ লক্ষ্যে সদস্য ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান, ক্রেতা ও ভূমি মালিকের মধ্যে রিয়েল এস্টেট প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের “বিরোধ” আপোষ-সমঝোতায় সমাধানের জন্য “রিহ্যাব মেডিয়েশন সেলের” মাধ্যমে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, আবাসন খাতে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং সকল ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সকল ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে রিহ্যাব সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করেছে। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করি, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে আগামীতে এই খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা আরো বাড়বে।

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘গৃহায়ন অর্থায়ন মেলা-২০১৭’ মেলার উদ্বোধনী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেলার উদ্ধোধন  করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এসএ