আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
আবাসন মেলায় উপচেপড়া ভিড়, মূল্য ছাড়ের হিড়িক

আবাসন মেলায় চলছে মূল্য ছাড়ের হিড়িক। গ্রাহকরা ফ্ল্যাট-প্লট বুকিং দিলেই পাবেন নগদ ছাড়সহ নানা সুবিধা। আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষেও মূল্য কাটছাঁটের সুযোগ দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। রয়েছে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তের আবাসন অফার। ক্রেতারা বিভিন্ন স্টলে খোঁজখবর নিয়ে পরে জানাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার বুকিং দিচ্ছেন। আয়োজকরা মোটামুটি সন্তুষ্ট বলে জানা গেছে। আগামীকাল শনিবার এই মেলা আরো জমজমাট হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন তাঁরা। আজ শুক্রবার মেলায় গিয়ে বিভিন্ন স্টল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় চলছে তিন দিনব্যাপী আবাসন ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলনমেলা রিয়েল এস্টেট এক্সপো- ২০১৭। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে আগামীকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক আয়োজক সংস্থা কনফারেন্স এন্ড এক্সিবিশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড- সেমস্ গ্লোবাল আয়োজিত এই প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত।

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ আশ্রয় ও নিরাপত্তার জন্য ভালো বাড়ির স্বপ্ন দেখে। আদিম মানুষেরা পাহাড়ের গুহা ও বনেবাদাড়ে খড়কুটো, লতাপাতা, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে আবাস বানাতো। এখনও মানুষের আবাস গড়া থেমে নেই। আধুনিক মানুষ এখন উন্নত ও বিলাসবহুল নিরাপদ আর টেকসই বাড়ি বানাচ্ছে। তারই একটি ফল হচ্ছে আধুনিক স্থাপত্যের বাড়ি। মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষেরও যাতে একটি বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় সেজন্য সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে এই আবাসন মেলা। একই ছাদের নিচে হরেক রকমের অফার নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা; যেখান থেকে পছন্দ করে ফ্ল্যাট-প্লট কিনতে কিংবা বুকিং দিতে পারছেন ক্রেতারা।

সেমস গ্লোবালের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনস নাঈম আশরাফ বলেন, রিয়েল এস্টেট এক্সপোতে রিয়েল এস্টেট খাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। যার মধ্যে দেশের পিওর রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ১২টি আর দেশের বাইরের দু’টি। আর বাকী চারটি কনসালটেন্সি ও আবাসন খাতে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান।

মেলার আয়োজকরা আজ শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, অষ্টাদশ মেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার উপস্থিতি আগের দিনের তুলনায় বেশি হওয়ায় বাড়তি বিক্রির আশা তাদের মনে। শনিবার ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি আরো বাড়বে বলে আশা করছি।

ছুটির দিন সকালে উত্তরা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় আসা ব্যবসায়ী এম রব্বানী বলেন, পূর্বাচলের দিকে প্লট দেখার জন্য এখানে এসেছি। ঘুরে দেখছি, খোঁজখবর করছি। পছন্দ হলে পরে যোগাযোগ করে বুকিং দিব।

মেলায় আসা এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরের আবাসিক খাত এলাকা শিফট করছে অন্যদিকে; পূর্বাচল ও কেরানীগঞ্জের দিকে ঝুঁকছে, পূর্বাচলের দিকে প্লট বুকিং ও বিক্রি চলছে। তাদের কার্যক্রমের নানাদিক দিক দেখছি।তবে প্লট বা ফ্ল্যাট কিনলেও আবাসন ব্যবসায়ীরা ঠিক সময়ে তা ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করতে পারে না বলে সাধারণ অভিযোগের কথা শোনালেন তিনি। তাদের প্রতিশ্রুতি যেন বহাল থাকে সেই প্রত্যাশা আবদুল খালেকের।

রূপায়ন হাউজিং এস্টেটের সহকারী ব্যবস্থাপক (সেলস) মোতালেব হোসেন বলেন, বসুন্ধরা এলাকায় আমাদের ১০৭ কাঠার আবাসিক কন্ডোমিনিয়াম প্রজেক্ট আছে। সেখানে অ্যাপার্টমেন্টের পাশাপাশি খেলার মাঠ, সুপারশপ, মেডিসিন সেন্টার ও মসজিদ থাকবে। ৯০ কাঠা ও সাড়ে ৪২ কাঠার দুইটি কমার্শিয়াল প্রজেক্টও আছে। আবাসিক প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, মেলায় বুকিং দিলে আমরা সব প্রজেক্টে ১০ শতাংশ করে ছাড় দিচ্ছি। আবাসিক প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। মানুষের কাছে মেলায় ‘আশানুরূপ সাড়া’ পাওয়ার কথা জানান তিনি।

পূর্বাচলে প্লট বিক্রির পসরা নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছে বায়ো গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিপিএল হাউজিং লিমিটেড; প্লট কিনে এককালীন পরিশোধ করলে ৫০ হাজার টাকা ছাড় দেওয়ার কথা জানান সেখানকার ব্যবস্থাপকরা।

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার তিনটি হলে চলছে তিনদিনের ‘১৯তম পাওয়ার বাংলাদেশ এক্সপো ২০১৭’, ‘১৪ তম সোলার বাংলাদেশ এক্সপো ২০১৭’, ‘২১তম কন-এক্সপো বাংলাদেশ ২০১৭’, ‘১৮তম রিয়েল এস্টেট এক্সপো বাংলাদেশ ২০১৭’, ‘২য় ইন্টারন্যাশনাল সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো বাংলাদেশ ২০১৭’, এবং ‘ওয়াটার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো ২০১৭’। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার সেমিনার কক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে এসব প্রদর্শনীর শুভ উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

তিনটি হলে উক্ত প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া, জাপান, আমেরিকা, ইউক্রেন, সিঙ্গাপুর, চায়না, ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইউএই, সাউথ কোরিয়া, ইতালি, জার্মানি ও তুরস্কের ভোক্তা/উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেছেন। এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ, সৌর বিদ্যুৎ, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, নির্মাণসামগ্রী, নির্মাণকৌশল, যন্ত্রাংশ, সেফটি ও সিকিউরিটি, ওয়াটার, ওয়েস্ট ওয়াটার টেকনোলজি ও আবাসন শিল্পের পণ্য ও সেবার সমাহার রয়েছে।

সেমস্ গ্লোবালের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেরুন এন ইসলাম এর আগে জানিয়েছিলেন, বিশ্বের ১৫টি দেশ, ২৫০টি প্রতিষ্ঠান, ৩৫০টি স্টলের এই প্রদর্শনী ভোক্তা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য একটি যুপোপযোগী প্লাটফর্ম, যেখানে কার্যকরী যোগাযোগের মাধ্যোমে উদ্যোক্তারা নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সেবার সাথে পরিচিত হতে পারবেন। ভোক্তা, উদ্যোক্তা, আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের সরাসরি সাক্ষাৎ এবং আলাপচারিতার এই সুযোগের ফলে সকলের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে উঠবে যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখবে।

সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এসএ