রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আয়কর মেলা শুরু হয়েছে। করদাতারা যাতে সহজে বার্ষিক কর বিবরণী জমা দিতে পারেন, সে জন্য সাত দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে আজ বুধবার (১ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামি মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) পর্যন্ত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল কার্যালয়গুলো উক্ত মেলার আয়োজন করেছে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্মাণাধীন ভবনের নীচতলায় সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। এবার আয়কর মেলা থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এবার একযোগে আটটি বিভাগীয় শহরে সাত দিনব্যাপী, ৫৬টি উপজেলায় চারদিন, ৩৪টি উপজেলায় দুইদিন ও ৭১টি উপজেলায় (ভ্রাম্যমাণ) একদিনের আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার যারা রিটার্ন দাখিল করবেন, তাদেরকে ‘ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড’ ও ‘ইনকাম ট্যাক্স পেয়ার স্টিকার’ দেওয়া হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের করদাতারা এই কার্ড ও স্টিকার পাবেন। এটি এনবিআরের নতুন উদ্ভাবন বলে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, রাজধানীতে অষ্টমবারের মতো সাতদিনব্যাপী আয়কর মেলায় ৩৮টি আয়কর রিটার্ন গ্রহণ বুথ, ২২টি হেল্প ডেস্ক বুথ, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের একটি, সঞ্চয় অধিদপ্তরের একটি, কাস্টমসের একটি, মূসকের একটি, কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চলের একটি, মুক্তিযোদ্ধার একটি, সিনিয়র সিটিজেন একটি এবং প্রতিবন্ধীদের একটি বুথ বসানো হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ২০১০ সালে প্রথম আয়কর মেলায় রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ১১৩ কোটি টাকা। আর গতবছর মেলায় আয় হয়েছে ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। গত আট বছরের মেলায় প্রায় ৮ গুণ আয়কর আহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এবার ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথম বছর মেলায় ৬০ হাজার ৫০০ জন করসেবা নিয়েছেন। আর গতবছর করসেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২৮ হাজার। এবারের মেলায় সেবা গ্রহিতার সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। এ সংখ্যা প্রমাণ করে জনগণ আয়কর মেলাকে গ্রহণ করেছে।
এম এ মান্নান বলেন, গতবছর আয়কর মেলায় জায়গা না পেয়ে করদাতারা ফ্লোরে বসে রিটার্ন পূরণ করেছেন। এ জন্য এবার মেলায় করদাতাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ চেয়ার টেবিল দেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনগণ যে কর দেন, এটা ব্যবহারে আপনাদের আরো সচেতন হতে হবে। জনগণের করের টাকার সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো.নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিআই) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, এনবিআর সদস্য ও আয়কর মেলার আহ্বায়ক মো. আব্দুর রাজ্জাক প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, করদাতা সনাক্তকরণে উন্নত দেশের মতো বাংলাদশেও প্রতিটি করদাতাকে একটি করে পিন কোড দেয়া হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আধুনকি সংস্কৃতিতে বিভিন্নি ক্ষেত্রে পিন কোড ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। উন্নত দেশে পিন নম্বর দিয়ে সনাক্ত করা হয়। আমাদের দেশে করদাতাদের একটি পিন কোড দিয়ে আমরা করদাতাকে সনাক্ত করতে চাই। এটাকে আমরা ট্যাক্স পেমেন্ট পিন হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করবো। শিগগিরই সব করদাতাকে একটি করে পিন কোড প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
নজিবুর রহমান আরো বলেন, এবার আয়কর মেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে করদাতারা কর প্রদান ও সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। আমাদের সহকর্মীরা সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সারা দেশে ট্যাক্স ক্যাম্প করেছি। ট্যাক্স ক্যাম্পের তুলনায় মেলায় করদাতারা আরো বেশি সেবা পাবেন বলে তিনি জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, দেশের মানুষের মাঝে কর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকেই কাজ শুরু করা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-লার্নিং যোগ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এতে এফবিসিসিআই সব ধরনের সহযোগিতা দেবেও বলে জানান তিনি।
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রামে আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়।
সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এসএ