আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com

নিবন্ধন না নিয়েই ব্যবসা, রাজস্ব হারাচ্ছে রাজউক »

নিবন্ধন না নিয়েই ব্যবসা, রাজস্ব হারাচ্ছে রাজউক

ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) আওতাধীন এলাকায় আবাসিক ইমারত নির্মাণকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ডেভেলপারদের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক। ২০১৩ সাল থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার পর গত পাঁচ বছরে নিবন্ধন নিয়েছে ৪৭১টি প্রতিষ্ঠান। এখনো প্রায় দুই হাজার ২০০ ইমারত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রাজউকের নিবন্ধন না নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে রাজউক বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আবাসন ব্যবসায়ী মালিকদের শীর্ষ সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সদস্য সংখ্যা এক হাজার ২০০। রিহ্যাবের সদস্য নয়, ইমারত নির্মাণকারী এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় এক হাজার ৫০০। সব মিলিয়ে ইমারত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ৭০০। অথচ এর মধ্যে মাত্র ৪৭১ প্রতিষ্ঠান রাজউকের নিবন্ধন নিয়েছে। দুই হাজার ২০০ প্রতিষ্ঠানই রয়ে গেছে নিবন্ধনের বাইরে।

জানা গেছে, একটি ইমারত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে রাজউক থেকে নিবন্ধন পেতে হলে আবেদনপত্র প্রক্রিয়াকরণে দুই হাজার টাকা, নিবন্ধন সনদপত্রের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং ভ্যাট বাবদ সাড়ে সাত হাজার টাকা ভ্যাটসহ মোট ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা রাজউকের কোষাগারে জমা দিতে হয়। সব প্রতিষ্ঠান রাজউকের নিবন্ধন নিলে এ খাত থেকে রাজউকের রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা ১৬ কোটি টাকারও বেশি। নিবন্ধন গ্রহণের পর প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিবন্ধন নবায়ন করতে হয়, যার ফি ২৫ হাজার টাকা। এর বিপরীতে রাজউকের তহবিলে জমা হওয়ার কথা আট কোটি ৩০ লক্ষাধিক টাকা। অথচ এ খাত থেকে রাজউকের আয় সাকুল্যে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা।

রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান বলেন, ইমারত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন থাকা দরকার। নিবন্ধন থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন মানার একটা বাধ্যবাধকতা থাকবে। আবার নিবন্ধিত হলে রাজস্ব আদায়ের বিষয় রয়েছে। যেহেতু তারা রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন নেয় সেক্ষেত্রে নিবন্ধনের আওতায় আনা জরুরি। শিগগিরই ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে নোটিশ দেওয়া হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নেয়নি তাদের আওতায় আনার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।

রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১) এবং উদ্যোক্তা নিবন্ধীকরণসংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন রোববার বলেন, ইমারত নির্মাণকারী অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই এখনো পর্যন্ত রাজউকের নিবন্ধন নেয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ইদানীং নিবন্ধন নিতে আসছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিলে আমাদের রাজস্ব আদায়ও বহুগুণ বাড়বে।

রিহ্যাবের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, নিয়ম অনুযায়ী রাজউকের আওতাধীন এলাকায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানকে রাজউক থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। রিহ্যাব সদস্যদের অনেকে নিবন্ধন নিয়েছেন। যারা নেননি, তাদের নিবন্ধন নেওয়ার জন্য রিহ্যাব থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

লিয়াকত আলী ভূঁইয়া আরও বলেন, রিহ্যাবের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২শ হলেও সদস্য নয় এমন ইমারত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আছে ১৫শ। এগুলোরও নিবন্ধনে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

রাজউকের তথ্যানুযায়ী, রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এবং রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১১ অনুযায়ী, রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বেসরকারি ইমারত নির্মাণকারী কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান, অংশীদারি কারবার, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার, সমিতি বা সংগঠনগুলোর রাজউক থেকে নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক। ইমারত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন নিতে ২০১৩ সালের ১০ মার্চ রাজউকের সচিবের দপ্তর থেকে নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান রাজউকের নিবন্ধন নেয়।

ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় যেসব রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন নিতে রাজউক থেকে কয়েক দফায় নির্দেশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ নোটিশ দেওয়া হয়েছে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ওই নোটিশে ২০১৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে নোটিশ দেওয়া হয়। উক্ত সময়ের মধ্যে যারা রাজউকের নিবন্ধন নিতে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তখন জানানো হয়।