আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
শ্রমিকদের আবাসন সমস্যা নিরসনের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে শ্রমিকদের আবাসন সমস্যা নিরসনে নতুন প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে দ্রুত বর্জ্য শোধনাগার চালুর জন্যও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছে তিনি। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকারপ্রধান এ নির্দেশ দেন। সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, টেকসই চামড়া শিল্প গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায়ীরা চামড়া শিল্প নিয়ে ইকোনমিক জোন করতে চাইলে, সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় জমি দেওয়া হবে।

ফের ট্যানারী স্থানান্তরের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ একনেকে ৮ প্রকল্প অনুমোদন
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, পরিবেশসম্মত উপায়ে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুরান ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারী স্থানান্তরের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়েছে। এবার আরো দুই বছর সময় বাড়িয়ে তৃতীয়বারের মতো এ সংক্রান্ত প্রকল্পে সংশোধনী এনেছে সরকার। এটিসহ মোট ৮ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৬৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৫১ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে ৮৫৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে গিয়ে ধলেশ্বরী নদীকে দূষিত করা হবে না। এজন্য চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। ট্যানারি মালিকদের সহযোগিতা নিয়েই সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তর করা হচ্ছে। তবে নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও ব্যয় খুব একটা বাড়ানো হয়নি।

কামাল বলেন, শিল্প কারখানা স্থানান্তর একটি জটিল প্রক্রিয়া। ২০০৩ সালে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার কারণে ট্যানারী স্থানান্তর দ্রুত হচ্ছে। এবার আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

প্রসঙ্গত, প্রকল্পটি মোট ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০০৩ সালের জানুয়ারি হতে ২০০৫ সালে ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য ২০০৩ সালে ১৬ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৭ সালের জুনে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

‘চামড়া শিল্পনগরী, ঢাকা (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো- পিইটিপি, ডাম্পিং ইয়ার্ড এবং পানি উত্তোলন, পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, টেকসই চামড়া শিল্প গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায়ীরা চামড়া শিল্প নিয়ে ইকোনমিক জোন করতে চাইলে, সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় জমি দেওয়া হবে।

জানা যায়, বাংলাদেশে বিদ্যমান চামড়া শিল্প কারখানার ৯৫ শতাংশ ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ হাজারীবাগ এলাকায় স্থাপিত। এ শিল্পগুলোর অধিকাংশই নন-মেকানাইজড বা সেমি-মেকানাইজড পদ্ধতিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ফলে প্রচুর পরিমাণে পরিবেশ দূষণকারী তরল ও কঠিন বর্জ্য নির্গত হয়। এ পরিস্থিতে ঢাকার অদূরে সাভারে আধুনিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাসহ একটি চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং এর জন্য উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পসমূহ হচ্ছে– ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্পের বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৮৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা এলাকাকে যমুনা নদীর ভাঙ্গন হতে রক্ষার্থে নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পরিবর্ধন প্রকল্পের ব্যয় হবে ১ হাজার ২৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।

এছাড়া, দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এলায়েড সায়েন্সেস স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সৈয়দপুর-নীলফামারী মহাসড়ক (আর-৫৭০) প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের ব্যয় হবে ২২৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর মহাসড়কে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। জয়পুরহাট- আক্কেলপুর-বদলগাছী (জেড-৫৪৫২) এবং ক্ষেতলাল-গোপিনাথপুর-আক্কেলপুর জেড-৫৫০৮) জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এসএ