আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
চট্টগ্রামে আবাসনের আওতায় আসছে আড়াই লাখ মানুষ

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি নগরীর এই সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ লক্ষ্যে অনন্যা-২ নামে একটি আবাসিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার কুলগাঁও এলাকায় ৪১৮ দশমিক ৭৩ একর জমির ওপর এ প্রকল্প গড়ে তোলা হবে ২ হাজার ৯৩৫টি প্লট। এর মধ্যে বাণিজ্যিক প্লট হবে ১১০টি। প্রতিটি প্লটের আকার হবে ৪ ও ৫ কাঠা। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। অন্তত আড়াই লাখ মানুষ আবাসন প্রকল্পের সুফল ভোগ করবে। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। সিডিএ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেছেন, সিডিএ’র উদ্যোগে আগামী বছর আবার আবাসিক প্লট বরাদ্দ শুরু হচ্ছে। অন্তত এক যুগ পর সিডিএ প্লট বরাদ্দের এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি অথবা শেষ দিকে প্লটের জন্য দরখাস্ত আহ্বান শুরু হবে। এ প্রকল্পের নাম হবে অনন্যা আবাসিক এলাকা-২। প্রায় ৩ হাজার প্লটের এ আবাসন প্রকল্প একটি উপশহর হবে। যেখানে নগরবাসী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

জানা যায়, সিডিএ এতদিন ফ্লাইওভারের মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যস্ত ছিল। তাই আবাসন প্রকল্পে এত দিন জোর দেয়া হয়নি। কিন্তু নগরীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দেখা দিয়েছে আবাসন সংকট। তাই নতুন একটি প্রকল্প নিয়ে সিডিএ’র নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে বিস্তর আলোচনা হয়। নগরবাসীর পক্ষ থেকেও দাবি উঠতে থাকে একটি নতুন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। মূলত চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই ২০১৬ সালে কুলগাঁও এলাকায় আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ৩১ জানুয়ারি একনেক সভায় ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। অর্থের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে। বাকি টাকা সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ৪১৮ দশমিক ৭৩ একর জমির ওপর এ প্রকল্প গড়ে তোলা হবে ২ হাজার ৯৩৫টি প্লট। এর মধ্যে বাণিজ্যিক প্লট হবে ১১০টি। প্রতিটি প্লটের আকার হবে ৪ ও ৫ কাঠা। প্রাথমিকভাবে প্রতি কাঠা প্লটের দাম ১৫ লাখ টাকা এবং আবেদনের বিপরীতে ১০ লাখ টাকা জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।

নতুন প্রকল্পের বাণিজ্যিক প্লটগুলোতে থাকবে নানা স্থাপনা। ১১০টি বাণিজ্যিক প্লটে মার্কেট ছাড়াও অফিস, কমিউনিটি সেন্টার, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, থিম পার্কের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হবে। বাণিজ্যিক এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়ক হবে ৩০ থেকে ৮০ ফুট প্রশস্ত। আর আবাসিক এলাকায় থাকা প্রধান সড়কের নাম হবে ‘বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’, যা ৬০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে। বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা আছে। এসব নীতিমালা অনুসরণ করে বরাদ্দ হবে প্লট।

এ বিষয়ে সিডিএ’র চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম সাংবাদিকদের বলেন, সিডিএতে অনেক দিন ধরে আবাসন প্রকল্প হচ্ছে না। সম্প্রতি নগরীর আবাসন সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে অনন্যা-২ নামে একটি আবাসিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনও পাওয়া গেছে। সহসাই আবাসন প্রকল্পে প্লটের জন্য আবেদন জমা নেওয়া হবে। এ প্রকল্পটি হবে আধুনিক একটি উপশহর।

সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, ২০০৪ সালে নগরীর কুয়াইশ ও চান্দগাঁও মৌজায় ১৭৯ একর জমির ওপর অনন্যা নামে একটি আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সিডিএ। ২০০৮ সালের জুলাইয়ে এ প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর পর আর কোনো আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়নি। সিডিএ বড় প্রকল্পের মধ্যে ফ্লাইওভার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তৈরি করা হয়েছে একাধিক ফ্লাইওভার। আরও কয়েকটি নির্মাণাধীন আছে। তবে আবাসন প্রকল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে নতুন করে উদ্যোগ নিতে শুরু করে সিডিএ। অনন্যা-২ হচ্ছে দীর্ঘদিন পর নতুন আরেকটি প্রকল্প। যাতে সর্বাধিকসংখ্যক আগ্রহীরা আবেদন করতে পারবেন।

সম্পাদনা: এজিএম/জেডএইচ/আরএ