
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এবার রাজধানী ঢাকায় গৃহকর বৃদ্ধিতে রাজপথে নেমেছেন বাড়ির মালিক ও সংগঠনের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, একটি মহল সরকারকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে গৃহকর বৃদ্ধি করছে। এটি ঠিক হয়নি। বর্ধিত কর আরোপ অযৌক্তিক এবং নিয়ম বহির্ভূত। তাই অবিলম্বে এই গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার দাবী জানান বক্তারা। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিতরে এবং বাহিরে পৃথকভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এমন কথা বলেন।
গৃহকর বৃদ্ধি বাতিল, বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলের দাম কমানো, নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামবৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। গৃহকর বৃদ্ধির নামে দুর্নীতির মহোৎসব শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ক্যাব নেতারা। একই সঙ্গে নতুন কমিটি করে কর পুনরায় নির্ধারণের দাবিও জানান তাঁরা।
ক্যাব বলেন, সংশ্লিষ্টদের মতামত না নিয়েই পুনঃমূল্যায়নের নামে অযৌক্তিকভাবে তিন থেকে ১০ গুণ গৃহকর বাড়ানো হয়েছে। আবার আপিলের মাধ্যমে কর কমানো যাবে এমন সুযোগও রাখা হয়েছে। এই সুযোগকে ব্যবহার করছে সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তাঁরা টাকার বিনিময়ে কর কমিয়ে দিচ্ছে। এতে সিটি করপোরেশন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছে একটি চক্র।
মানববন্ধনে ক্যাব’র সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একটি মহল সরকারকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে গৃহকর বৃদ্ধি করছে। এটি ঠিক হয়নি। কারণ, শহরগুলোতে নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা তেমন বাড়েনি। একদিকে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিবেন না, অন্যদিকে ইচ্ছে মত কর বাড়াবেন- তা মেনে নেওয়া যায় না।
তাই অবিলম্বে গৃহকরসহ যেসব ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে তা বাতিল করার দাবী জানান দুদকের এ সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, গৃহকর বাতিল না হলে আমরা ভোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করব।
এদিকে, মানববন্ধনে কারণ ছাড়াই বাড়ির মালিকরা যেনো প্রতিবছর ভাড়া বাড়াতে না পারে এ জন্য নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন প্রমুখ।
অন্যদিকে, রাজধানীতে মাত্রাতিরিক্ত গৃহকর কমানোর দাবী জানিয়েছেন বাড়ি মালিকরা। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, সমন্বয়ের নামে ঢাকা সিটি করপোরেশন মাত্রাতিরিক্ত গৃহকর ধার্য করেছে। করপোরেশনের বর্ধিত কর আরোপ অযৌক্তিক এবং নিয়ম বহির্ভূত। তাই অবিলম্বে এই গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার দাবী জানান তাঁরা।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউন্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর সেগুনবাগিচা সোসাইটির নেতারা এ দাবী জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সোসাটির মহাসচিব আক্তার হোসেন চৌধুরী একটি বাড়ির উদাহরণ দিয়ে বলেন, আগের নির্ধারিত গৃহকর ছিল ৬০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে তা ৭৬ গুণ বাড়িয়ে ৪৫ হাজার ৬০০ টাকা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সেগুনবাগিচা সোসাইটির নেতারা অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালে গৃহকরের নতুন মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরুর পর যৌক্তিক মাত্রায় গৃহকর নিতে সিটি করপোরেশনে অনেকবার অনুরোধ করা হলেও তা আমলে নেয়নি করপোরেশন। নতুনভাবে সমন্বয়ের ফলে অনেকের গৃহকর ৩০ থেকে ৪৫ গুণ বেড়ে গেছে। প্রতি ৫ বছর পরপর কর নির্ধারণ না করে ৮-১০ বছর ব্যবধানে করের এ পরিমাণ বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সিটি করপোরেশনের বর্ধিত মূল্যায়ন ও বর্ধিত নতুন করের নোটিস প্রত্যাহার এবং সর্বোচ্চ ৭ ভাগ থেকে ১০ ভাগ পর্যন্ত কর মূল্যায়নের দাবি জানায় সোসাইটি
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সেগুনবাগিচা সোসাইটির সভাপতি এ কে এম জব্বার ফারুক, সহ-সভাপতি এম এ কাইয়ুম, আমিন আহমেদ, মো. মোস্তফা ই জামিল, যুগ্ম মহাসচিব কাজী কামরুজ্জামানসহ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৬ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে রাজধানীতে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং এতে নাগরিকরা ক্ষুব্ধ’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছিলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়নি। আগেও হোল্ডিং ট্যাক্স শতকরা ১২ ভাগ ছিল। এখনও তাই আছে। ২৯ বছর যাবৎ কর এ্যাসেসমেন্ট করা যায়নি বলে নতুন ও পুরাতন ফ্ল্যাট/ভবনের গৃহকরের মধ্যে বিদ্যমান অসমতা দূর করে সমন্বয় করা হচ্ছে মাত্র।
সমতাভিত্তিক সমাজ ও নগরী গড়ে তোলার জন্য এটি জরুরি উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ধার্য্যকৃত গৃহকরও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শতকরা ৪০ ভাগ কমিয়ে আনারও সুযোগ রয়েছে। কোন নাগরিক এতে সংক্ষুব্ধ হলে বা দুর্ভোগের শিকার হলে যৌক্তিক যেকোন বিষয় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের বিষয় বিবেচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, ডিএসসিসি’র এক লক্ষ ৮২ হাজার ট্রেড লাইসেন্স ও এক লক্ষ ৬৫ হাজার হোল্ডিং রয়েছে।
সম্পাদনা: জেডএইচ/এমএন/আরএ/