আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
কনক্রিট ব্লকে বাড়ি নির্মাণে মিলবে যেসব সুবিধা

মানুষের আয় বৃদ্ধির ফলে দেশে ইটের বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ইট নির্মাণ হয় জমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে। যেই মাটি ফসলের জন্য উর্বর। এছাড়া, ইট নির্মাণে পোড়ানো হয় কাঠ। ফলে একদিকে অক্সিজেন উৎপাদক গাছ কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে ইটের ভাটা থেকে বিষাক্ত কার্বন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। এতে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। তাই পরিবেশ ও জলবায়ুর কথা বিবেচনা করে ২০২০ সালের মধ্যে সব ইটভাটা বন্ধের দাবি উঠেছে পরিবেষবাদীদের  তরফ থেকে। তাহলে ঘর-বাড়ি নির্মাণের উপায়?

ইটের বিকল্প ও ব্যয় সাশ্রয়ী নির্মাণ উপকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (এইচবিআরআই)। প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে আসে ইটের বিকল্প কনক্রিটের ব্লকের কথা। এই ব্লক নির্মাণ করা হয় সিমেন্ট ও নুড়ি পাথর দিয়ে। ইটের মতো পোড়াতে হয় না। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের নির্মাণে ব্যবহার করছে ইটের বিকল্প কনক্রিট ব্লক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো তো সেই ব্লক খোলা বাজারে বিক্রি করে না। তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে?

এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ি থানার বালিগাঁওয়ের ছেলে মোহাম্মাদ শাহাদাৎ হোসেন শিপু নির্মাণ করেছেন কনক্রিটের ব্লক তৈরির মেশিন বা ফর্মা। এই মেশিন দিয়ে একজন মানুষ দিনে খুব সহজেই ১০০টি ব্লক বানাতে পারে। প্রত্যেক ব্লকে খরচ পড়বে ৩০ টাকা। একটি ব্লক সাড়ে পাঁচটি ইটের সমান। সাড়ে পাঁচটা ইটের দাম যেখানে কমপক্ষে ৫৫ টাকা, সেখানে ৩০ টাকায় কাজ হয়ে যাচ্ছে।

শিপু সাংবাদিকদের জানান, এই ব্লক ব্যবহার দামে তো সাশ্রয় হচ্ছেই, মূল সাশ্রয় হয় অন্য জায়গায়। যেই বাড়িতে ইট লাগবে ১৫ হাজার, সেখানে ব্লক লাগবে ৩ হাজার। এখানে সিমেন্ট বালুও সাশ্রয় হবে। কমবে মিস্ত্রি খরচ, সময়ও লাগবে কম। এছাড়া, এই ব্লকের মাঝখানে ফাঁকা থাকে বলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এসি ঘরের মতো। আর প্লাস্টার খরচও খুব কম। এছাড়া, ইলেকট্রিক ওয়্যারিং করতেও কষ্ট কম হয়।

সব মিলিয়ে কনক্রিটের ব্লক দিয়ে বাড়ি নির্মাণে ৩০ শতাংশের উপরে টাকা সাশ্রয় হয়। একটি বাড়ি নির্মাণে যদি এক লাখ টাকার ইট লাগে, সেটা কংক্রিটের ব্লক দিয়ে ৭০ হাজার টাকায় করা যাবে।

বর্তমানে শিপু নিজে দুইটি ফর্মা বানিয়ে তা দিয়ে ব্লক তৈরি করছেন নিজের ঘরের জন্য। নিজের ঘর তৈরি হয়ে গেলে বাণিজ্যিকভাবে ব্লক তৈরি করবেন। এবং তাঁর এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেবেন দেশের নানা প্রান্তে।

এ বিষয়ে শাহাদাৎ হোসেন শিপু সাংবাদিকদের বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনও খুব একটা জানে না। পদ্ধতিটাকে পরিচিত করতে হবে। এর সুবিধাগুলো মানুষকে জানাতে হবে। আর তাই আমার নিজের বাড়ি বানাচ্ছি কংক্রিটের ব্লক দিয়ে। আমার মেশিনে নিজেরাই ব্লক বানাচ্ছি। বাড়িটা প্রস্তুত হয়ে গেলে সবাইকে দেখাতে পারব- দেখেন, আমার এই বাড়িটা বানিয়েছি ব্লক দিয়ে। ব্লক দিয়ে বাড়ি বানালে এই এই সুবিধা হয়। সবাইকে হাতে কলমে দেখিয়ে দিলে ব্লকের গুরুত্ব সবাই বুঝতে পারবে।

বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (এইচবিআরআই) এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রুবেল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, শিপুর উদ্ভাবিত প্রযুক্তির ব্লকের মাধ্যমে নির্মাণ ব্যয় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। যে কেউ নিজহাতে খুব সহজেই এই ব্লক বানাতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এই প্রযুক্তি সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়নি বলে দেশবাসী এর সুফল পাচ্ছে না।

রুবেল আহমেদ বলেন, আমরা বর্তমানে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তা জনগণের কাছে জনপ্রিয় করতে কাজ করে যাচ্ছি। পোড়া ইটের বিকল্প হিসেবে কনক্রিট ব্লক অনেক বেশি কার্যকর, সাশ্রয়ী, টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব। আমরা চাই এই প্রযুক্তি কুটির শিল্পের মতো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে। এমনটা হলে শিপুর এই প্রযুক্তি খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দার।

পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নেতিন দিনব্যাপী গ্রিন এক্সপো

এদিকে, শনিবার (২৫ নভেম্বর) থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী গ্রিন কনভেনশন এন্ড এক্সপো-২০১৭। চলবে আগামী সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত। দেশে টেকসই অর্নৈতিক উন্নয়নের লক্ষে পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানীসাশ্রয়ী নির্মাণসামগ্রী প্রযুক্তির প্রসারে এ সম্মেলন ও প্রদর্নীর আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিডেট (বিআইএফএফএল)।

এক্সপোতে এবারের আকর্ষণ পরিবেশবান্ধব ইট কারখানা, নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশবান্ধব ভবন/শিল্প নির্মাণসহসহ অন্যন্ন প্রদর্শনী।