
দেশে এমনিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। এর মধ্যে আবার সরকারের পক্ষ থেকে এলো বিদ্যুতের দাম বাড়ার ঘোষণা। সাম্প্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় বাড়ির মালিকরা আসছে নতুন বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন। রাজধানীর বাড়িওয়ালারা সাধারণত বছরের শুরুতে একবার বাড়ি ভাড়া বাড়ান। আর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার তাদের ভাড়া বাড়ানোর আরো ‘সুযোগ তৈরি’ করে দিলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা জনজীবনে দুঃসহ যন্ত্রণা বয়ে আনবে।
ভাড়াটিয়ারা বলছেন, রাজধানী ঢাকা এমনিতেই একটি ব্যয়বহুল শহর। খুবই সাধারণ জীবনযাপনে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঢাকায় বসবাসকারী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের। মাসের শুরুতেই আয়-রোজগারের অর্ধেকটা ভাড়া বাবদ খরচ হয়ে যায়। এছাড়া, নিত্যপণ্যের দামও আকাশছোঁয়া। এ অবস্থায় বাড়তি ভাড়া পরিশোধ আর্থিক চাপ বাড়াবে। আরো কঠিন করে তুলবে জীবনযাপন।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষিত আদেশ অনুযায়ী, সারা দেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতি ইউনিটে গড়ে ৩৫ পয়সা। ১ ডিসেম্বর থেকে এই বাড়তি দাম কার্যকর হবে। গ্রাহকদের জানুয়ারি মাস থেকে বর্ধিত বিল দিতে হবে।
একাধিক ভাড়াটিয়া গণমাধ্যমকে বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুতের দাম বেশি দিতে হলে জানুয়ারিতে বাড়ি ভাড়া বাড়াবেন। যদিও বছরের শুরুতে বাড়ি ভাড়া বাড়ানো অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার তো অজুহাত পেলো। আমাদের কিছু বলার থাকবে না। কারণ, রাজধানীর আবাসন সংকটে আমরা তো বাড়ির মালিকদের হাতে জিম্মি।
মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার এক ভাড়াটিয়া তাইফুল ইসলাম জোনায়েদ সাংবাদিকদের বলেন, দেশে নিত্যে প্রয়োজনীয় জিনিসের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দিলো। যারা বছরের শুরুতে বাড়ি ভাড়া বাড়াতো না তারাও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে। বিদ্যুতের দাম যদি ১০০ টাকা বাড়ে বাড়িওয়ালা বাড়াবেন এক হাজার টাকা। এসব দেখার তো কেউ নেই। কষ্ট শুধু সাধারণ মানুষের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আদাবর এলাকার আরেক বাসিন্দা পলাশ শরীফ বলেন, সরকারের পক্ষে বলা হয় মানুষের আয় বেড়েছে। বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। সরকারি চাকরিজীবীদের আয় বাড়লেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের আয় তো বাড়েনি। হিমশিম খেতে হয় বাজার করতে গিয়ে। মাস শেষে কোনো টাকা সঞ্চয় করতে পারি না। এর মধ্যে আবার বাড়ি ভাড়ার বাড়তি বোঝা টানতে হবে।
মিরপুরের কয়েকজন বাড়ির মালিক মারজিয়া জান্নাত রঞ্জনা ও মাহিনাথ জিথি বেগম, আল ফারুক, শাসসুল হক ও রিয়াজ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদেরও তো ব্যালান্স করতে হবে। এজন্য ভাড়া বাড়তেই পারে। প্রতিবছর ৫০০ টাকা করে বাড়ালোও এবার ঠিক কত টাকা বাড়াবো তা ভেবে দেখতে হবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে আটবার বিদ্যুতের দাম বাড়লো। এর কুপ্রভাব বাড়ি ভাড়ায় পড়বে।
ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণে কর্মরত কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সব কিছুতেই প্রভাব পড়বে। কারণ, বিদ্যুতের সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত। বছরের শুরুতে বাড়িওয়ালারা সাধারণত ভাড়া বাড়ান, এখন আরো বেশি বাড়ানোর সুযোগ পেলেন।
প্রসঙ্গত, ক্যাবের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, রাজধানীতে ২০১৬ সালে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর গত ২৫ বছরে বেড়েছে প্রায় ৩৮৮ শতাংশ।