আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com

মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের ছোট্ট একটি স্বপ্ন- রাজধানীর কোথাও ছোট একটি ফ্ল্যাট কেনার। পূর্বে অনেকেরই ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য বাহিরে থাকলেও এখন তা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কারণ, ঢাকায় গত চার বছরে এলাকাভেদে ফ্ল্যাটের দাম ১০ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনায় বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আগের চেয়ে কম সুদে আবাসন ঋণ দিচ্ছে। এছাড়া, ক্রেতার আস্থা বাড়াতে দেশের আবাসন কোম্পানিগুলো এখন মানসম্পন্ন ফ্ল্যাট ও প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। তার পরও মন্দা কাটছে না আবাসনশিল্পে।

আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা কমলেও বিক্রি বাড়েনি। ঢাকাসহ সারা দেশে দশ হাজারেরও বেশি ফ্ল্যাট অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বাজারের প্রকৃত চাহিদা বুঝতে ব্যর্থ হওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে তাঁরা জানান। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) বলছে, এ খাতের অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী অনভিজ্ঞ ভুঁইফোড় ব্যবসায়ীরা। তবে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আবাসন ক্রেতাদের কম সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়ায় এ খাতে সুদিন ফিরবে বলেও আশা করছে সংগঠনটি।

চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আবাসন খাত নিয়ে অনলাইন ক্লাসিফায়েড প্রতিষ্ঠান লামুডি। সংবাদ সম্মেলনে লামুডির এক গবেষণায় বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার বছর কঠিন সময় পার করেছে দেশের আবাসন খাত। এতে ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান টিকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। তবে এ অবস্থা পার করে এখন প্রকৃত আবাসন কোম্পানিগুলো ব্যবসা করছে, যারা গ্রাহককে সেবা দেওয়ার মনমানসিকতা নিয়ে কাজ করছে। মন্দার কারণেও অনেক কোম্পানি ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পারায় এখন ঢাকায় এলাকাভেদে ফ্ল্যাটের দাম ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের যৌক্তিকতা তুলে ধরে গবেষণায় আরও বলা হয়, এখন আবাসন ঋণের সুদের পরিমাণ বেশ কম। আবাসনের জন্য ঋণ পেতে সরকারও এখন সহায়ক বেশ কিছু নীতিমালা নিয়েছে। এ জন্য ফ্ল্যাট কেনার উপযুক্ত সময় এখনই।

গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন লামুডি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যানি মারিয়া হারম্যানস। প্লট বা ফ্ল্যাট কেনাবেচায় ক্রেতা ও আবাসন কোম্পানির সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে লামুডি। ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা করা হয়েছে।

ঢাকায় ফ্ল্যাট বা প্লট কেনার জন্য ক্রেতার চাহিদার শীর্ষে আছে উত্তরা এলাকা। এর কারণ ব্যাখ্যায় বলা হয়, সুযোগ-সুবিধা অনুসারে ক্রেতা যে দামে ফ্ল্যাট কিনতে চান সেগুলোর বেশির ভাগই উত্তরায় অবস্থিত। এ এলাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম ৬ হাজার ৯০০ টাকা। বনানী বা ধানমন্ডিতে বর্গফুটপ্রতি ফ্ল্যাটের দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। দামের তুলনায় উত্তরায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধার মান বেশ ভালো। এসব কারণেই ক্রেতার পছন্দের শীর্ষে আছে উত্তরা এলাকা। তবে ধানমন্ডি, বনানী ও বসুন্ধরার মতো এলাকায় গত এক বছরে সম্পত্তির দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে।

File Photo.

লামুডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যানি মারিয়া হারম্যানস বলেন, বাংলাদেশে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার উপযুক্ত সময় এখনই। তবে ঢাকার মতো শহরে উপযুক্ত সম্পত্তি কোনটি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। লামুডির মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেস ক্রেতার চাহিদা ও আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী বাজারে সবচেয়ে উপযুক্ত সম্পত্তি খুঁজে পেতে ক্রেতাকে সহযোগিতা করে।

জানা যায়, রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ার একটি আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় ২ বছর আগে। কিন্তু এখনো বিক্রি হয়নি সবগুলো ফ্ল্যাট। তাই দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

রিফা প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাঈদ উল্লাহ কোয়েল বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণ পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে ফ্লাটের দাম কিন্তু ঢাকার শহরে প্রতি স্কয়ার ফিটে এক থেকে চার পাঁচ হাজার টাকা কমেছে।’

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের তথ্যমতে, ঢাকাসহ সারা দেশে দশ হাজারেরও বেশি ফ্লাট অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। আর এতে বড় অংকের বিনিয়োগ আটকে পড়ায় এ খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বাজারের প্রকৃত চাহিদা বুঝতে ব্যর্থ হওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে যে আবাসন ব্যবস্থা করা হয়, বিশেষ করে অ্যাপার্টমেন্ট হাউজিং, সেখানে চাহিদার চেয়ে যোগানটা বেশি হয়ে গেছে। এছাড়া, উচ্চমূল্যর ফ্লাট সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

দ্রুত বর্ধনশীল আবাসন শিল্প সম্প্রসারণের একপর্যায়ে অনভিজ্ঞ ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে বলে মনে করেন রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন)। তিনি বলেন, ‘রং মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্র, টাইলস মিস্ত্রি এরা পাঁচজনে মিলে দেখা যাচ্ছে একটা রিয়েলস্টেট কোম্পানি বানিয়ে ফেলছে। সাইনিং মানি কাঠাপ্রতি দশ লক্ষ টাকা, সেখানে তারা ভূমি মালিককে বিশ লক্ষ টাকার অফার করে। কারণ, ব্যবসা সম্বন্ধে তাদের তো কোন জ্ঞানই নেই।’

আবাসন খাত সম্প্রতি শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও, ব্যবসায়ীদের অভিযোগ শিল্পের কোন সুবিধাই পাচ্ছেন না তাঁরা। আবাসন খাতের নির্মাণব্যয় কমাতে তাদের দাবি- অগ্নিনির্বাপক পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা, শিল্প হারে বিদ্যুৎ বিলের সুযোগ, ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি কমিয়ে সাড়ে ৬শতাংশ করা। তবে সম্প্রতি সহজ শর্তে ঋণের সুযোগ বৃদ্ধিতে স্বস্তি প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।

রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, হাউজ বিল্ডিং আমাদের ২৫ বছর মেয়াদী লোন দেবে বলে কথা দিয়েছে। যেখানে তাদের সুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশে এনেছে। আমরা মনে করি, এখন গ্রাহকরা হাউজিংয়ের ক্ষেত্রে লোন নিতে আগ্রহী হবে।’

ঢাকায় জনসংখ্যার তুলনায় জমির অভাব এবং দামও আশাকচুম্বী, তাই নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন নিশ্চিতে পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলার পক্ষে মত দেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন…
আবাসন শিল্পের সংকট উত্তরণে রিহ্যাবের দাবী ও প্রস্তাবনা সূমহ..