
রাজধানীর আবাসিক এলাকায় বর্তমানে অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে ৩৭ হাজার ৫৮৬টি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শপিং কমপ্লেক্স ইত্যাদি গড়ে ওঠায় শহরজুড়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে গণপূর্ত ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। আজ এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য রাজউক কর্মকর্তাদের দায়ী করেন।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত ‘সাংবাদিক এম ওমর ফারুকের স্মরণসভা ও পরিবারকে চেক হস্তান্তর’ অনুষ্ঠানে একথা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, আবাসিক এলাকা কার সামনে বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে, আমার অথরাইজড অফিসারের সামনে হচ্ছে। দে আর ব্লাইন্ড। ব্লাইন্ড হোয়াই? নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে ব্লাইন্ড হওয়ার। তারপর যখন হয়ে যায় তখন আর ভাঙতে পারে না।
অনুষ্ঠানে ওমর ফারুকের স্ত্রী সানজিদা শওকত এবং বড় মেয়ে ফারিহা ওমরের হাতে তিন লাখ টাকার চেক তুলে দেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী। নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম জানায়, সংগঠনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় আসা বিজ্ঞাপনের আয় থেকে ওমর ফারুকের পরিবারকে এই অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
এর আগে আবাসিক এলাকায় ৩৭ হাজার ৫৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সরিয়ে নিতে নোটিশ দিয়েছিল রাজউক। কিন্তু উক্ত এলাকায় অননুমোদিত ওইসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করতে গেলেই সংশ্লিষ্টরা আদালতে মামলা করছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের এক হিসাবে দেখা যায়, অবৈধ হওয়ায় উচ্ছেদ করা হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার মামলা করেছেন। ফলে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থা মিলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
জানা যায়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ১৮ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান ও উত্তরায় একযোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিল রাজউক। যেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তদারকির অভাবে সেগুলোতে আবার বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। এই উচ্ছেদ অভিযানের শুরুতে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, যেকোনো মূল্যে আবাসিক এলাকা থেকে অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। তাই প্রথমে এসব বাড়ির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্নের নোটিশ পাঠানো হয়। এরপরই শুরু হয় মামলা। ফলে দেড় বছরেও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরার আবাসিক শ্রেণিতে নির্মিত স্থাপনা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বেশি।
তদারকির অভাবে উদ্যোগ পুরোপুরি বিফলে গেছে তা মানতে রাজি নন রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান। তিনি বলেন, উচ্ছেদ করতে গেলেই তাঁরা মামলা করে। মামলা করলে তখনই কিছু করার থাকে না, এটা ঠিক। তবে আমরাও বসে থাকব না। আমরা তা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছি। উচ্ছেদ করার পর তারা যদি আবার নতুন স্থাপনা দাঁড় করায়, আমরা সেটা আবার ভেঙে দেব।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম বলেন, কোরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব, লেক শোর সার্ভিসেস লিমিটেড, কোরিয়া বাংলাদেশ লিমিটেড এবং অল কমিউনিটি ক্লাব—এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা হাইকোর্টে মামলা করে। আর বেলজিত নামে একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
গণপূর্ত ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, অনেক ক্ষেত্রে আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। রাজউকের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন। কিন্তু তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শপিং কমপ্লেক্স ইত্যাদি গড়ে ওঠায় শহরজুড়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সম্পাদনা: এমএন/আরএ/এসকে