আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত ৯২% সরকারি চাকুরীজীবী

রাজধানী ঢাকায় সরকারি নতুন নতুন লোকবলের আগমন হলেও সে তুলনায় তাদের আবাসন সুবিধা নেই। বর্তমানে এক লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি কর্মরত আছেন। কিন্তু তাদের মাত্র আট শতাংশ আবাসন সুবিধা পান। এসব কারণে তাদের অনেক নিম্নমানের বেসরকারি বাসভবনে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এর প্রভাবে তাদের কর্মদক্ষতায় বিরুপ প্রভাব ফেলছে। সরকারি চাকুরেদের এই আবাসন সংকট নিরসনে তিনটি পৃথক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাজধানীর আজিমপুর, মতিঝিল ও জিগাতলায় এক হাজার ৯৬০টি বিভিন্ন আকৃতির ফ্ল্যাট তৈরি করবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ফ্ল্যাটগুলো তৈরিতে ব্যয় হবে এক হাজার ৫৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

গত ২৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজিমপুরে সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়), মতিঝিল সরকারি কলোনিতে (হাসপাতাল জোন স্টোর কম্পাউন্ড) বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং জিগাতলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তর) জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, আজিমপুরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে আজিমপুর সরকারি কলোনিতে অতিরিক্ত খালি জায়গায় ১৭টি ভবন তৈরি করা হবে। মতিঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর আওতায় ৩৮০টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। আর জিগাতলায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ২৮৮টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে।

সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মহানগরীতে পদায়িত এক লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ আবাসন সুবিধা ভোগ করছেন। বাকিদের অনেক সময়ই বেসরকারিভাবে ভাড়া বাসায় নিন্মমানের জীবনযাপন করতে হয়, যা তাদের কর্মক্ষমতায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিষয়টি অনুধাবন করে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবাসন সুবিধা বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে নিদের্শনা দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবাসন পরিদপ্তর ২০১৭ সালের মধ্যে ১৬ হাজার ৯৬৮টি এবং ২০১৯ সালের মধ্যে ১৮ হাজার ২৭৬টি ফ্ল্যাট করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য পূরণ করা গেলে আবাসন সুবিধা বর্তমানের ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশে পৌঁছবে।

আজিমপুরে বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়): প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে আজিমপুর সরকারি কলোনিতে অতিরিক্ত খালি জায়গায় ১৭টি ভবন তৈরি করা হবে। এগুলোয় ফ্ল্যাটের সংখ্যা হবে এক হাজার ২৯২টি। প্রকল্পের আওতায় ৯টি ২০তলা ভবনে এক হাজার বর্গফুটের ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ভবনে ৭৬টি করে ফ্ল্যাট থাকবে। এছাড়া, আটটি ২০ তলা ভবনে ৮০০ বর্গফুটের ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যা হবে ৬০৮টি। সেই সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্যান্য কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করা হবে।

মতিঝিল সরকারি কলোনিতে বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ : এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর আওতায় ৩৮০টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। মতিঝিল সরকারি কলোনিতে পুরনো ভবন ভেঙে নতুন করে নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের আওতায় দুইটি ২০ তলা ভবনে ১ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, ৩টি ২০ তলা ভবনে ৮০০ বর্গফুটের ২২৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, ২ লাখ গ্যালন ক্ষমতার ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরি, ৫০০ কেভিএ সাবস্টেশন ৩ সেট, ৬০০-৬৩০ কেভিএ সাবস্টেশন ২ সেট, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগারসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

জিগাতলায় (গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তর) আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ : এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২৮৮টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। প্রকল্পের আওতায় একটি ১৩ তলা ভবনে দেড় হাজার বর্গফুটের ৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, তিনটি ১৩ তলা ভবনে এক হাজার ২৫০ বর্গফুটের ১৪৪টি ফ্ল্যাট তৈরি, দুইটি ১৩ তলা ভবনে এক হাজার বর্গফুটের ৯৬টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। এছাড়া, ৫ হাজার বর্গফুটের একটি ৬ তলা কমিউনিটি ভবন, এক লাখ ৪০ হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতার ভূগর্ভস্থ জলাধার, সাতটি সাবস্টেশন, ফুটপাত ও অভ্যন্তরীণ রাস্তাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।