কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়। কোন ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। উক্ত হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে মালিকের নাম, কোন্ মৌজা, মৌজার নম্বর (জে এল নম্বর), জরিপের দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমান, জমির শ্রেণি, একাধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত হিস্যা ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।
দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জরিপের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বলে দুই জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তরাধিকার কিংবা দলিলের মাধ্যমে জমি হস্তান্তরের ফলে ভূমি মালিকানার পরিবর্তন বা খতিয়ান হালনাগাদ করার জন্য রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারায় কালেক্টরকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১ঌঌ০ এর ২০ অনুচ্ছেদ বলে কালেক্টরের এ ক্ষমতা মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রয়োগ করে থাকেন যা পূর্বে উপজেলা রাজস্ব অফিসার বা সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) পালন করতেন। সুতরাং অন্তবর্তীকালীন রেকর্ড পরিবর্তন, সংশোধন ও হালকরণের প্রক্রিয়াকে নামজারি (mutation) বা জমাখারিজ নামে আখ্যায়িত করা হয়।
নামজারির সময়
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী মহানগরে ৬০ কর্মদিবসে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া প্রবাসীদের জন্য মহানগরের ক্ষেত্রে ১২ কর্মদিবস এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৯ কর্মদিবসে নামজারি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
নামজারীর আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১। ২০ (বিশ) টাকার কোর্টফি সহ মূল আবেদন ফরম।
২। আবেদনকারীর ১ (এক) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য ছবি প্রযোজ্য)।
৩। খতিয়ানের ফটোকপি/সার্টিফাইড কপি।
৪। ধার্যকৃত বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ (দাখিলা)।
৫। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে বায়া/পিট দলিলের সার্টিফাইড/ফটোকপি।
৬। উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত মূল উত্তরাধিকার সনদ।
৭। আদালতের রায়ের ডিক্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে উক্ত রায়ের সার্টিফাইড/ফটোকপি। আপীল হয়ে থাকলে তার তথ্য বা ডিক্রির সার্টিফাইড কপি বা ফটোকপি।
৮। আবেদনকারীর পরিচয়পত্রের সত্যায়িত অনুলিপি ( জাতীয় পরিচয়পত্র / ভোটার আইডি / জন্ম নিবন্ধন সনদ/ পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স/ অন্যান্য)
নামজারী করার ধাপ সমুহ
১। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর সংশ্লিষ্ট জমির রেকর্ড/পর্চা ও মালিকানা অর্জনের বিবরণ সম্বলিত আবেদন দাখিল।
২। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক সরেজমিন তদন্তের জন্য আবেদনটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ।
৩। ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃক প্রস্তাব/প্রতিবেদন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে প্রেরণ।
৪। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে শুনানীর জন্য নোটিশ প্রদান।
৫। নোটিশ প্রাপ্তির পর যাবতীয় মূল কাগজপত্রের প্রমানাদিসহ আবেদনকারীর শুনানীতে অংশগ্রহন, সার্ভেয়ার/কানুনগো এর মতামত গ্রহণ এবং অতঃপর আদেশ প্রদান।
নামজারীর প্রয়োজনীয় ফি
আবেদনের সাথে কোর্ট ফি-২০(বিশ) টাকা, নোটিশ জারী ফি- ৫০(পঞ্চাশ) টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি- ১০০০(এক হাজার) টাকা এবং প্রতি কপি নামজারি খতিয়ান সরবরাহ বাবদ- ১০০(একশত) টাকা। (বিঃদ্রঃ আবেদন পত্রের কোর্ট ফি ছাড়া বাকিগুলো ডিসিআর এর মাধ্যমে আদায় করা হবে।)
কোথায় করা হয় নামজারি
প্রত্যেক উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারির জন্য আবেদন করতে হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারি সহকারী পদের একজন দায়িত্বে থাকেন। নাজির পদের একজন নামজারির জন্য ফি জমা নেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাগণ (তহশিলদারেরা) নামজারির তদন্তের দায়িত্বে থাকেন। অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তহশিলদারের অফিসে নামজারি আবেদন করে থাকেন। এটা ঠিক নয়।
নামজারির ধরণ
১। হস্তান্তর দলিল (এল.টি নোটিশ) মূলে নামজারি
২। সার্টিফিকেট মূলে নামজারি
৩। অধিগ্রহণের মোকদ্দমার ভিত্তিতে নামজারি
৪। আদালতের ডিক্রি মূলে নামজারি
৫। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারি
৬। আবেদনের ভিত্তিতে নামজারি
কখন এবং কেন নামজারি করতে হয়
১। মূল ভূমি মালিকের মৃত্যুতে উত্তরাধিকারগণের নামে খতিয়ান সৃষ্টির জন্য।
২। রেজিষ্ট্রি দলিলমূলে জমি হস্তান্তরের কারণে ক্রেতা বা গ্রহিতার নামে খতিয়ান সৃষ্টির জন্য।
৩। ভূমি উন্নয়ন করের বকেয়া বাবদ নিলাম খরিদার জন্য।
৪। স্বত্ব মামলার রায়/ডিক্রির কারণে।
৫। জমি অধিগ্রহণের কারণে।
৬। খাস খতিয়ানভূক্ত করণের ফলে।
৭। সরকার কর্তৃক ক্রয়কৃত বা অন্য কোন খাস জমি বন্দোবস্তের কারণে।
৮। পরিত্যাক্ত বা নদী সিকস্তির কারণে ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফের কারণে।
৯। নদী পয়স্তিজনিত কারনে রেকর্ড সংশোধনের জন্য।
নামজারি এত জরুরি কেন?
১। শুধুমাত্র কোন দলিলের মাধ্যমে অর্জিত মালিকানার ভিত্তিতে অথবা ওয়ারিশ হিসেবে পিতা-মাতার জমিতে দখলসূত্রে থাকলেই সরকারি রেকর্ডে উক্ত ভূমিতে তাঁর মালিকানা নিশ্চিত হয় না। কোন ভূমিতে বৈধ ওয়ারিশ বা ক্রয়সূত্রে মালিক হবার পর পূর্বের মালিকের নাম হতে নাম কেটে বর্তমান মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তাহলেই তার মালিকানা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত হয়। আর এটিই হল নামজারি পদ্ধতি।
২। আপনি যদি ওয়ারিশ হিসাবে বা ক্রয়সূত্রে কোন জমির মালিক হন কিন্তু নামজারি না করান, তবে আপনার অজান্তে কোনভাবে এক/একাধিক দলিল সম্পাদন করে কোন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আপনার আগে নামজারি করে ফেলতে পারে। তাতে আপনি পরবর্তীতে নামজারি করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়বেন। বাস্তবক্ষেত্রে জটিলতা আরো বাড়তে দেখা গেছে যখন উক্ত স্বার্থানেষী ব্যক্তি অপর এক বা একাধিক ব্যক্তির নিকট ঐ জমি ইতোমধ্যে বিক্রয় করে ফেলেছে। এসব ক্ষেত্রে নানারকম মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন যাবৎ অর্থ, সময় ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
৩। সাধারণভাবে আমরা অনেকেই মনেকরি দলিল সম্পাদন হলেই কাজ শেষ। নামজারির দরকার কী? এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে শুধুমাত্র মালিকানা হস্তান্তর হয়, সরকারের খাতায় মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।
৪। রেজিস্ট্রেশন দপ্তরটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি অফিস। সকল প্রকার দলিল সম্পাদন, রেজিস্ট্রিকরণ উক্ত দপ্তরের কাজ। দলিল রেজিস্ট্রিকরণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যিনি বিক্রেতা তিনি আদৌ উক্ত জমির মালিক হিসাবে সরকারের রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত আছেন কী না তার কোন রেকর্ড জেলা রেজিস্টার বা সাব-রেজিস্টারের দপ্তরে নেই। ফলে ভুলবশত: একই জমির এক বা একাধিক দলিলের মাধ্যমে বিক্রয়ের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে ভূমি অফিসগুলি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন যার কাছে সরকারের কাছে রেকর্ডভুক্ত মালিকদের নাম, পূর্ববর্তী নামজারিকৃত মালিকদের নাম, নথিসহ বিস্তর তথ্য থাকে। ফলে একবার নামজারি করাতে সক্ষম হলে একই জমির একাধিকবার বিক্রয় হলেও মূল মালিকের আর ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানী হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
৫। নামজারি আবেদনের মাধ্যমে আবেদনকারি যে স্বত্বলিপি অর্জন করেন, যাকে প্রচলিত ভাষায় আমরা ‘খতিয়ান’ বলে থাকি, এর মাধ্যমে তার উক্ত জমিতে মালিকানা স্বত্ব প্রমাণে নিশ্চয়তা লাভ করেন যা অন্য কোন দালিলিক মাধ্যমে লাভ করেন না।
৬। নামজারি করা না থাকলে শুধু একাধিক বিক্রয়ের আশঙ্কাই বিদ্যামান থাকেনা, পরবর্তীতে আপনার অর্জিত সম্পত্তিতে দখলে থাকলেও পরবর্তীতে আপনার অবর্তমানে আপনার উত্তরাধিকারগণ উক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা থাকে।
৭। যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ঋণ নিতে গেলে জমি বন্ধকের ক্ষেত্রে খতিয়ান ছাড়া আবেদন গ্রহণ করা হয় না।
৮। ওয়ারিশনমূলে প্রাপ্ত জমির মালিকরা যদি নামজারি না করান তাহলে তাদের মধ্যে বিশেষত: নারী অংশীদারগণ এবং ভবিষ্যতে তাদের ওয়ারিশগণদের মধ্যে মারাত্নক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ওয়ারিশগণ সমঝোতার মাধ্যমে প্রথমেই নামজারি সম্পন্ন করে রাখলে পরবর্তীতে অনেক জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হয়।
সমবায় বা হাউজিং কোম্পানীর নামজারি
১৯৯০ সালের ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল এর ৩২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সমবায় বা হাউজিং কোম্পানী জমি কিনলে তা প্রথমে সমিতি বা কোম্পানীর নামে নামজারি করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কালেক্টরের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। উক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েলের ৩২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যেক্ষেত্রে সমবায় সমিতি বা কোম্পানীর নামে নামজারি হবে, কেবলমাত্র সেক্ষেত্রে সমিতি বা কেম্পানীর নামে নামজারি হওয়ার পর বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যক্তির নামজারির আবেদনের প্রেক্ষিতে নামজারির আবেদন গ্রহণ ও কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হলে বা আদেশে কোন ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হলে তার প্রতিকার
অনেক কারণেই নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হতে পারে। কোনো দলিল-দস্তাবেজে ত্রুটির কারণে হতে পারে, আবার অন্য কোনো যুক্তসংগত কারণেও নামঞ্জুর হতে পারে। কিন্তু আবেদন নামঞ্জুর হলে প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। আদেশ/রায়ে কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হলে তিনি প্রতিকারের জন্য উক্ত আদেশ/রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইনের ৫ম অংশের ১৪৭ ধারায় রাজস্ব অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিটি আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তিকে আপিল করার অধিকার প্রদান করা হয়েছে ৷
আপীলের সময় সীমা
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইন এর ১৪৮ ধারায় বলা আছে-নামজারি মোকদ্দমার কোন আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক (কালেক্টর) এর বরাবরে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আপিল দায়ের করতে পারবে ৷
যদি কোন ব্যক্তি, কালেক্টর বা জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি রায়ের দিন হতে ৬০দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার এর নিকট আপিল দায়ের করতে পারবেন ৷যদি কোন ব্যক্তি বিভাগীয় কমিশনারের রায়েও সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের তারিখ হতে ৯০দিনের মধ্যে ভূমিআপিল বোর্ডে পুনরায়, আপিল করতে পারবেন ৷ তবে ভূমি আপিল বোর্ডের রায়ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে ৷
রিভিশনের সময় সীমা
যদি নামজারি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো রাজস্ব কর্মকর্তার রায়ের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর এর বরাবরে কোনো আপিল করা না হয় কেবলমাত্র সেক্ষেত্রেই জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর স্ব-উদ্যোগে কিংবা কোনো সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে উক্ত প্রদত্ত রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ১ মাসের মধ্যে ঐ আদেশটি পুনঃনিরীক্ষন বা পরিমার্জন বা সংশোধন করতে পারেন ৷ জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩ মাসের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার তার নিজ উদ্যোগে বা কোন আবেদনের ভিত্তিতে কালেক্টরের আদেশ পরিমার্জন বা সংশোধন করতে পারবেন এমনকি ভূমি আপিল বোর্ড তার নিজ উদ্যোগে বা কোন আবেদনের ভিত্তিতে বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারবেন ৷ (১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইন এর ১৪৯ ধারা)
রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনা
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্র্জাস্বত্ব আইন ১৫০ ধারায় রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনা বিষয়ে বলা হয়েছে ৷ উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো রাজস্ব অফিসার কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দরখাস্তকারীর দরখাস্তের ভিত্তিতে অথবা নিজ উদ্যোগে তার ও তাঁর পূর্ববর্তী রাজস্ব অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো আদেশ রিভিউ বা পুনঃবিবেচনা করতে পারবেন এবং উক্ত আদেশটিকে সংশোধন বা পরিবর্তন বা বহাল রাখতে পারবেন ৷ তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সময়ের সীমাবদ্ধতাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হলো পূর্ববর্তী আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যেই রিভিউ পিটিশনের জন্য আবেদন পেশ করতে হবে৷ তবে উল্লেখ্য যে, কোন আদেশের বিরুদ্ধে যদি পূর্বে আপিল বা রিভিশন করা হয়ে থাকে তাহলে রিভিউ বা পুনঃ বিবেচনার জন্য আবেদন করা যাবে না ৷
জমি কেনার সময় যে যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে
১. জরিপের মাধ্যমে প্রণীত খতিয়ান ও নক্সা যাচাই করতে হবে।
২. জমির তফসিল অর্থাৎ মৌজা, খতিয়ান ও দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমাণ প্রভৃতি সঠিকভাবে জানতে হবে।
৩. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সি.এস, এস,এ ও আর.এসসহ সর্বশেষ জরিপের পর্চা দেখতে হবে।
৪. বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে মালিক হলে তার মালিকানার যোগসূত্র নিশ্চিত হতে হবে। অথাৎ ভায়া দলিল দেখতে হবে এবং বিক্রেতার নামে নামজারী আছে কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।
৫. বিক্রেতা উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হলে পূর্ব মালিকানা ক্রমানুসারে মিলাতে হবে।
৬. উত্তরাধিকারসূত্রে জমির ক্ষেত্রে বন্টননামা (ফারায়েজ ) দেখে নেয়া যেতে পারে।
৭. জরিপ চলমান এলাকায় বিক্রেতার মাঠপর্চা যাচাই করে দেখতে হবে।
৮. বিক্রেতার দেয়া দলিল, বায়া দলিল, খতিয়ান/পর্চা ইত্যাদি কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে জমাবন্দি (২ নং রেজিস্টার) রেজিস্টারের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে।
৯. নামজারী পর্চা, ডি.সি.আর, খাজনার দাখিলা (রশিদ) যাচাই করে দেখতে হবে। বকেয়া খাজনাসহ জমি ক্রয় করলে বকেয়া খাজনা পরিশোধের দায় ক্রেতার।
১০. জমিটি সার্টিফিকেট মামলাভূক্ত কিনা তা ভূমি অফিস হতে জানা যায়, সার্টিফিকেট মামলাভূক্ত সম্পত্তি বিক্রয়যোগ্য নয় (পি.ডি.আর এ্যাক্ট এর ৭ ধারা)।
১১. জমিটি খাস, পরিত্যক্ত বা অর্পিত (ভি.পি) কিনা, অধিগ্রহণকৃত বা অধিগ্রহণের জন্য নোটিশকৃত কিনা, তা ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল,এ শাখা থেকে জেনে নিতে হবে।
১২. বিবেচ্য জমি কোন আদালতে মামলাভূক্ত কিনা জেনে নিতে হবে।
১৩. জমি সরেজমিনে দেখে এর অবস্থান নক্সার সাথে মিলিয়ে বিক্রেতার দখল নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
১৪. সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রার এবং জেলা রেজিস্ট্রারের অফিসে তল্লাশি দিয়ে বিবেচ্য জমির হেবা, এওয়াজ ও ক্রয়-বিক্রয়ের সর্বশেষ তথ্য জেনে নেয়া প্রয়োজন।
১৫. প্রস্তাবিত জমিটি ঋণের দায়ে কোন ব্যাংক বা সংস্থার নিকট দায়বদ্ধ কিনা তা দেখা প্রয়োজন।
১৬. প্রস্তাবিত জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কিনা তাও দেখা প্রয়োজন।
১৭. প্রস্তাবিত জমিতে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারী কোন বিধি-নিষেধ আছে কিনা তা দেখা প্রয়োজন।
১৮. মালিক কাউকে আমমোক্তার বা অ্যাটর্নি নিয়োগ করেছেন কিনা তা দেখা প্রয়োজন।
১৯. জমির কাগজপত্র শুদ্ধতা যাচাইয়ের দায়িত্ব টাকার বিনিময়ে কাউকে দিয়ে করালে তার নিকট থেকে নিজে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, নামজারি কোন জটিল প্রক্রিয়া নয়, আপনি যদি এখানে উদ্ধৃত নিয়মগুলি পড়ে নেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে খুব সহজেই আপনি আপনার-জমির নামজারির খতিয়ান পেয়ে যাবেন। আর নামজারি নিয়ে একটু সচেতন হলেই জমি নিয়ে ঝামেলা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব এবং এতেই সুরক্ষা পাবে আপনার ভূমি।
লেখক : সহকারী কমিশনার (ভূমি), গোয়াইনঘাট, সিলেট।