আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
`সেতুবন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখবে রিহ্যাব ফেয়ার ২০১৭’

রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সদস্য এবং ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে আসন্ন রিহ্যাব ফেয়ার ২০১৭ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, রিহ্যাব ফেয়ার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মনের মতো ফ্ল্যাট বা প্লট খুঁজে নিতে ক্রেতাদের সাহায্য করবে। ফেয়ার উপলক্ষে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব এ তথ্য জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফেয়ারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন)। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (১ম) লিয়াকত আলী ভূইয়া, রিহ্যাবের পরিচালক ও ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. শাকিল কামাল চৌধুরী, পরিচালক কামাল মাহমুদ, পরিচালক মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক, ফেয়ার কমিটির সদস্য এস এম ইমদাদ হোসাইন, সদস্য মির্জা আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

রিহ্যাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘স্বপ্নীল আবাসন, সবুজ দেশ লাল সবুজের বাংলাদেশ’ এই স্লোগানে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) পাঁচ দিনব্যাপী ‘রিহ্যাব ফেয়ার ২০১৭’ শুরু হচ্ছে আগামী ২১ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার থেকে।  চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।  রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত এবার ফেয়ারে ২০৩টি স্টলে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি তাদের প্রকল্প প্রদর্শন করবে। রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেশ কিছু নির্মাণসামগ্রী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। ২১ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় বিআইসিসি’র হল অব ফেমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিহ্যাব ফেয়ারের উদ্ধোধন করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

লিখিত বক্তব্যে সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন) বলেন, আবাসন খাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘রিহ্যাব ফেয়ার ২০১৭’ এ আপনাদের সকলকে অগ্রীম আমন্ত্রণ। ক্রেতাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে রিহ্যাব ১৭ বছর ধরে আমরা সফল ভাবে রিহ্যাব ফেয়ারের আয়োজন করে আসছি। আমাদের আশা, বিগত আয়োজনের ধারাবাহিকতায় এবারও একটি সফল ফেয়ার আমরা উপহার দিতে পারব। আমাদের সদস্য এবং ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে এই ফেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রিহ্যাব ফেয়ার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মনের মত ফ্ল্যাট বা প্লট খুঁজে নিতে ক্রেতাদের সাহায্য করবে।

রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা কে সু-পরিকল্পিত নগরায়নে রূপান্তরের পাশাপাশি নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা আবাসন সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে রিহ্যাব। রিহ্যাব সদস্যদের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাংলাদেশে ঝুঁকিমুক্ত, পরিবেশ বান্ধব একটি পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে কাজ করছে রিহ্যাব সদস্যরা। শহরমূখী মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজন মেটাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রিহ্যাবের ১০৪২ টি সদস্য ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছে পরিকল্পিত নগর নির্মাণের জন্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শোষণমুক্ত অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রে প্রতিটি মানুষ সমানভাবে ভোগ করবে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো সব মৌলিক সুযোগ-সুবিধা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। যার ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে রুপান্তর হচ্ছে ফলে শ্রম নির্ভর অর্থনীতি এখন ধাবিত হচ্ছে মেধা নির্ভর অর্থনীতিতে। ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। উন্নত মানের নাগরিক সুবিধা রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু জেলা, উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জীবন যাত্রার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিটি নাগরিক যাতে ভাড়ার টাকায় অন্তত তাদের একটি ঠিকানা খুঁজে পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। সরকার এবং রিহ্যাব সদস্যদের নানামুখী কার্যক্রমে স্বল্প ও মধ্যবিত্তসহ সকলের জন্য একটি স্বপ্নীল আবাসের স্বপ্ন পূরণে আমরা সবসময়ই দৃঢ় প্রত্যয়ী।

সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন) বলেন, রিহ্যাব এর বিপুল কার্যক্রমে গত কয়েক দশক সহজে আবাসনের মালিকানা সৃষ্টি মানুষের মনে আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ ২৬৯ প্রকার লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আবাসন খাতের অবদান প্রায় ১৫%। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সাথে ৩৫ লক্ষ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের অন্নের যোগান দিয়েছে। আবাসন খাত নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সৃষ্টি করছে, যা প্রকারান্তরে দেশের উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে স্কাই লাইনের পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা আপনাদের (গণমাধ্যম) নিকট বলে আসছি, বিগত কয়েক বছর ধরে নীতিনির্ধারণী কিছু সমস্যার কারণে আবাসন খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও এই সংকটময় অবস্থা এখনও চলমান। কয়েকটি ব্যাংকে সুদের হার কমে আসার কারণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে হাউজিং লোন দিলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হাউজিং লোনের কোন ঘোষণা আসেনি। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এছাড়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং আবাসন খাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমরা ‘হাউজিং লোন’ নামে ২০ হাজার কোটি টাকার রিফিন্যান্সিং করার দাবি জানাই। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্য আবাসন খুব সহজেই সম্ভব যদি সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে এই তহবিল থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা যায়। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১৫% ভূমিকা রাখা আবাসন শিল্পে স্থবিরতার জন্য অত্যাধিক রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অন্যতম একটা প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে ১৪% এর উপরে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় রয়েছে। এটি কমিয়ে ৬-৭ শতাংশে নিয়ে আসলে এ খাতে কিছুটা গতিশীলতা ফিরবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আবাসন খাত এগিয়ে গেলে নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা “বাসস্থান”পূরণের পাশাপাশি শিল্প-কারখানা বিকশিত হবে ফলশ্রুতিতে সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।

রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভপতি বলেন, ২০০১ সাল থেকে ঢাকায় রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার শুরু হয়। এছাড়া, চট্টগ্রামে ১০ টি ফেয়ার সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে রিহ্যাব। রিহ্যাব ২০০৪ সাল থেকে বিদেশে হাউজিং ফেয়ার আয়োজন করছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১২ টি, যুক্তরাজ্যে, দুবাই, ইতালীর রোম, কানাডা এবং সিডনী এবং কাতারে ১টি করে “রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার” সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই সকল ফেয়ার আয়োজনের মাধ্যমে রিহ্যাব দেশে ও বিদেশে গৃহায়ন শিল্পের বাজার সৃষ্টি এবং তা প্রসারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে। অন্যদিকে প্রবাসী ক্রেতারা তাদের যেমন আবাসিক সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পেয়েছে, আবার এই ফেয়ারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি গৃহায়ন শিল্প এবং লিংকেজ শিল্প বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।

সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এসকে