
দেশের আবাসন খাতে সংকটময় অবস্থা ও গতিশীলতা ফেরাতে কয়েকটি দাবী উপস্থাপনা করেছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। এর মধ্যে সরকারের কাছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে ২০ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল চেয়েছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে সিঙ্গেল ডিজিট ঋণের নির্দেশনা ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ কমানোর দাবি করেছেন আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব নেতারা। তাঁদের বিশ্বাস, নিবন্ধন ব্যয় ১৪ শতাংশ থেকে ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনলে আবাসন খাতের গতিশীলতা ফিরে আসবে। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবী জানানো হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাবের শীতকালীন আবাসন মেলা। এই মেলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রিহ্যাব।
এতে লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন) বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে নীতিনির্ধারণী কিছু সমস্যার কারণে আবাসন খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও এই সংকটময় অবস্থা এখনও চলমান। কয়েকটি ব্যাংকে সুদের হার কমে আসার কারণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে হাউজিং লোন দিলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হাউজিং লোনের কোন ঘোষণা আসেনি। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট নির্দেশনা।
রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, এছাড়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং আবাসন খাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমরা ‘হাউজিং লোন’ নামে ২০ হাজার কোটি টাকার রিফিন্যান্সিং করার দাবি জানাই। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্য আবাসন খুব সহজেই সম্ভব যদি সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে এই তহবিল থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা যায়।
নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন) বলেন, সংসদ সদস্য জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১৫% ভূমিকা রাখা আবাসন শিল্পে স্থবিরতার জন্য অত্যাধিক রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অন্যতম একটা প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে ১৪% এর উপরে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় রয়েছে। এটি কমিয়ে ৬-৭ শতাংশে নিয়ে আসলে এ খাতে কিছুটা গতিশীলতা ফিরবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আবাসন খাত এগিয়ে গেলে নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা “বাসস্থান”পূরণের পাশাপাশি শিল্প-কারখানা বিকশিত হবে ফলশ্রুতিতে সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।
বার বার উপস্থাপন করা হলেও রিহ্যাবের দাবি কেন পূরণ হচ্ছে না, সমস্যা কোথায়? এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, আবাসন খাতকে চাঙা করতে কয়েক বছর ধরেই কিছু দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছে রিহ্যাব। তবে দাবি একেবারেই পূরণ হয়নি তা বলা যাবে না। সরকার থেকে ঘোষণা না এলেও হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন সাড়ে আট শ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। তারা এক অঙ্কের সুদে আবাসন ঋণ দিচ্ছে। এছাড়া, নিবন্ধন ফি কমানোর আশ্বাস মিলেছে। আশা করছি, আসছে বছর ঘোষণা আসবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রিহ্যাব এর বিপুল কার্যক্রমে গত কয়েক দশক সহজে আবাসনের মালিকানা সৃষ্টি মানুষের মনে আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ ২৬৯ প্রকার লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আবাসন খাতের অবদান প্রায় ১৫%। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সাথে ৩৫ লক্ষ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের অন্নের যোগান দিয়েছে। আবাসন খাত নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সৃষ্টি করছে, যা প্রকারান্তরে দেশের উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে স্কাই লাইনের পরিবর্তন হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এতে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (১ম) লিয়াকত আলী ভূইয়া, রিহ্যাবের পরিচালক ও ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. শাকিল কামাল চৌধুরী, পরিচালক কামাল মাহমুদ, পরিচালক মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক, ফেয়ার কমিটির সদস্য এস এম ইমদাদ হোসাইন, সদস্য মির্জা আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন
সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এসকে