
রাজধানীর বাড়িওয়ালাদের হোল্ডিং ট্যাক্সে ১২ শতাংশ হার ঠিক রেখে সমতা-সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এ লক্ষ্যে বাড়ির মালিকদেরও চিঠি দিয়েছিল এ দুই সংস্থা। কিন্তু শুরু থেকেই এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছিল বাড়িওয়ালারা। তাদের বলছিলেন, হোল্ডিং ট্যাক্সের সমতা-সমন্বয়ের নামে তাদের কাছে এলাকা ভেদে আগের পরিমাণের চেয়ে দুই-তিনগুণ বেশি ট্যাক্স বাড়িয়ে সিটি কর্পোরেশন তাদের চিঠি দিয়েছে।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশনের উত্তর ছিল, ১৯৯০ সালের পর গত ২৭ বছরে অনেকের হোল্ডিং ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) করা হয়নি। এবার সেগুলো বর্তমান ভাড়া অনুযায়ী সমতা আনা হয়েছে।
কিন্তু হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি বা ‘সমতা-সমন্বয়’এ উদ্যোগ থেকে দুই সিটি কর্পোরেশন (উত্তর-দক্ষিণ) সরে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব সিটি কর্পোরেশনের গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সব সিটি কর্পোরেশনে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ এ কার্যক্রম চালু করতে পারবে না। ভবিষ্যতে অনলাইনভিত্তিক অটোমেশন পদ্ধতিতে কর আদায় করা হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গৃহকর নির্ধারণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় সরকার এ কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
এই চিঠি হাতে পাওয়ার পর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো বা সমতা আনার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছে। ফলে বর্তমানে রাজধানীর বাড়ি মালিকদের আর হোল্ডিংট্যাক্স বাড়ছে না। এখন বাড়ির মালিকরা আগের মতই হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা খান মোহাম্মাদ বিলাল জাগো নিউজকে বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর বিষয়ে আমরা একটা চিঠি পেয়েছি। হোল্ডিং ট্যাক্সে সমতা আনার প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছি। ফলে বাসা মালিকরা আগের নিয়ম অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারবেন। আগামীতে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হবে। ভবিষ্যতে অনলাইনভিত্তিক অটোমেশন পদ্ধতিতে ট্যাক্স আদায়বিষয়ক সফটওয়্যারের কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্র শ্রী জাগো নিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি আসার প্রেক্ষিতে আপাতত হোল্ডিং ট্যাক্সে সমন্বয় করা হচ্ছে না। চিঠিতে উল্লেখ আছে, অটোমেশন পদ্ধতি চালু না হওয়া পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা যাবে না। আসলে অনলাইনে বা অটোমেশন পদ্ধতিতে ট্যাক্স আদায় করলে ব্যাপক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। তাই নির্দেশনা অনুযায়ী আপাতত হোল্ডিং ট্যাক্সে সমতা আনছি না।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৫০০ এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৪৮০ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। বর্তমান বাসা ভাড়া বিবেচনায় নিয়ে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছানো সম্ভব হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার বাসা মালিক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, আগে বাড়ির বার্ষিক ট্যাক্স দিতাম ১৮ হাজার টাকা কিন্তু এক দফায় তা বাড়িয়ে এবার সাড়ে ৪২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সে প্রেক্ষিতে আমিও ভাড়াটিয়াদের কাছে ভাড়ার পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়ার চিন্তা করেছিলাম। এখন শুনছি হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়বে না, সেক্ষেত্রে আমিও বাসা ভাড়া আর বাড়াব না। সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স একবারে এত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসলেই ভুল ছিল। ফলে আমাদের মতো বাড়িওয়ালারা সত্যিই সিটি কর্পোরেশনের ওপর খুবই ক্ষিপ্ত ছিলাম।
দুই সিটি কর্পোরেশন থেকে জানা গেছে, গত ২৭ বছর ধরে রাজধানীর বাড়ির মালিকরা কেউ কম-কেউ বেশি বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করত। মূলত অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ১৯৮৯-৯০ সালে সাধারণ কর হার নির্ধারণ করে। এরপর ২০০৩ এবং ২০০৮ সালের পর নিবন্ধিত নতুন বাড়ির মালিকদের সেই সময়ের ভাড়ার মূল্য অনুযায়ী বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হত। কিন্তু ২০০৩ সালের পূর্বে নিবন্ধন পাওয়া বাড়ির মালিকরা ১৯৮৯ সালের বাড়ি ভাড়ার মূল্য অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করত। জাগোনিউজ