আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
আশা জাগিয়ে আজ শেষ হচ্ছে রিহ্যাব ফেয়ার

ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ার শেষ হচ্ছে আজ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর)। ‌’স্বপ্নীল আবাসন, সবুজ দেশ লাল সবুজের বাংলাদেশ’ এই স্লোগানে গত ২১ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয় দেশের আবাসন শিল্প খাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘রিহ্যাব ফেয়ার-২০১৭। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা।

আবাসন মালিকদের শীর্ষ সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত মেলায় এ বছর ২০৫টি স্টল রয়েছে। এই ফেয়ারে ৩০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩ অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। আর কো-স্পন্সর হিসেবে আছে মোট ২৪টি প্রতিষ্ঠান। এবারও মেলায় দর্শনার্থীদের প্রবেশে সিঙ্গেল এবং মাল্টিপল এন্ট্রির জন্য দুই ধরনের টিকিট রয়েছে। সিঙ্গেল এন্ট্রি টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় পাঁচবার প্রবেশ করতে পারবেন। মিলন মেলায় এবার এন্ট্রি টিকিটের রাফ্রেল ড্র তে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ রয়েছে আকর্ষণীয় মূল্যবান পুরস্কার। এদিকে, আজ মেলা শেষ হলেও সমাপনী অনুষ্ঠান হবে আগামী ৪ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।

সংবাদ সম্মেলন, স্টল বরাদ্দের পর ২১ ডিসেম্বর বিআইসিসি’র হল অব ফেমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিহ্যাব ফেয়ারের উদ্ধোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আবাসন কোম্পানির সাথে আবাসন প্রত্যাশী লোকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করা হয়।

গত চারদিন শীতকালীন এই মেলায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখ পড়ার মতো। মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এবার খোলামেলা পরিবেশে দর্শক-ক্রেতারা বেশি করে যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পাচ্ছেন। ছোট-বড় সব ধরনের ডেভেলপারই ক্রেতাদের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছেন। তাঁরা আরও বলেন, দর্শনার্থীদের মধ্যে ঘুরতে আসা লোক নেই। সিংহভাগই ক্রেতা। ফলে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো এবার মেলায় অংশ নিয়ে খুশি। আবাসন খাতের দীর্ঘ দিনের মন্দাভাব কাটাতে এবছরের মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তাঁরা জানান।

রিহ্যাব ফেয়ার কমিটির থেকে জানা যায়, এবারের মেলায় দর্শকদের পক্ষ থেকে বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারো বিক্রিও ভালো। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এবার রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন হারে মূল্যছাড় দিয়েছে। মেলায় ক্রেতা-গ্রাহকদের ঋণসুবিধা দিতে গৃহায়ন খাতে ঋণ প্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক অংশ নেওয়ায় ক্রেতাদের জন্য বাড়তি সুবিধা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নিজেদের আবাসন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মেলায় অনেকে একা, স্বামী-স্ত্রী দু’জন অথবা কেউ সন্তানসহ এসেছেন। তবে অধিকাংশ দর্শকই দেখার উদ্দেশে এসেছেন মেলায়। কোথায় ফ্ল্যাট অথবা প্লট কিনবেন তা বাসায় গিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।

অনেক গ্রাহক কোম্পানির প্রকল্পগুলোর প্রসপেক্টাস নিয়ে গেছেন। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করবেন বলে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আশা করছে। এবার ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল ছোট আকারের ফ্ল্যাটের দিকে। নিম্ন বিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতার সংখ্যা বেশি ছিল।

মেলায় প্লট বুকিং দিতে আসা সরকারি চাকরিজীবী সবুর খান বলেন, মেলায় খুব সহজেই বিভিন্ন কোম্পানির লোকেশন ও কে কি ধরনের সুবিধা দিচ্ছে তা জানা যাচ্ছে। এখানে যাচাই করে পছন্দ মতো বুকিং দেয়া যাচ্ছে।

এদিকে, মেলায় অংশগ্রহণকারীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা মনে করছেন, গত কয়েকদিনে দর্শনার্থীরা মেলা থেকে তারা ফ্ল্যাট অথবা প্লটের খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। এই ক’দিন যাচাই বাছাই করে মেলার শেষ দিন তারা পছন্দের ফ্ল্যাট বুকিং দিবেন। বিকালের দিকে মেলায় আবারো উপচেপড়া ভিড় হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। প্রতিবছর মেলার শেষদিকটায় এমন ঘটে থাকে বলেও জানা যায়।

কোস্পন্সর প্রতিষ্ঠান সমূহ নিম্নরূপ: আকাশ ডেভেলপমেন্ট লিঃ, আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ডস, ডেভেলপমেন্ট লিঃ, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন লিঃ, এ্যাশিউর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড ডিজাইন লিঃ,এ্যাসুরেন্স ডেভেলপমেন্ট লিঃ, আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক লিঃ, বিল্ডিং টেকনোলজি এ্যান্ড আইডিয়াস লিঃ,কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংস লিঃ, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট লিঃ, ডোম-ইনো বিল্ডার্স লিঃ, ইস্টার্ণ হাউজিং লিমিটেড, ইষ্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাঃ) লিঃ, হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লিঃ, জেমস ডেভেলপমেন্ট লিঃ, জাপান তাগুচি কনস্ট্রাকশন লিঃ, নাভানা রিয়েল এস্টেট লিঃ, প্রতীক ডেভেলপার্স লিঃ, পূর্বাচল প্রবাসী পল্লী লিঃ, রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী (বিডি) লিঃ, শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট লিঃ, সুবর্ণ ভূমি হাউজিং লিঃ, ইউ-এস বাংলা এ্যাসেট লিঃ। আর বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও অর্থলগ্নীকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কো-স্পন্সর হয়েছে-বাংলাদেশ বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ও বি প্রপার্টি ডট কম।

রাফ্রেল ড্র তে থাকছে প্রাইভেট কারসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার

শীতকালীন এই মিলনমেলায় এন্ট্রি টিকিটের রাফ্রেল ড্র তে রয়েছে আকর্ষণীয় মূল্যবান পুরস্কার। এ বছর রাফেল ড্র এর ১ম পুরস্কার- ১টি প্রাইভেট কার, ২য় পুরস্কার একটি মোটরসাইকেল, ৩য় পুরস্কার ১টি ফ্রিজ, ৪র্থ পুরস্কার-১টি ৪৩ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন, ৫ম পুরস্কার-১টি ওয়াশিং মেশিন এবং ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম পর্যন্ত মোবাইল ফোন। মেলার শেষ দিন ২৫ ডিসেম্বর রাত ৯টায় রাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়ীদের নাম ও টিকিট নং রিহ্যাব ওয়েব সাইটয়ে প্রচার করা হবে। বি:দ্র: পুরস্কার গ্রহণের সময় বিজয়ীকে টিকিটের সংরক্ষিত অংশটি প্রদর্ন করতে হবে।

২১ ডিসেম্বর রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এছাড়াও ছিলেন রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (১ম) লিয়াকত আলী ভূইয়া, রিহ্যাবের পরিচালক ও ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. শাকিল কামাল চৌধুরী, পরিচালক কামাল মাহমুদসহ রিহ্যাবের বর্মান ও সাবেক নেতৃকৃন্দ।

উল্লেখ্য, ২০০১ সাল থেকে ঢাকায় রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার শুরু হয়। এছাড়া, চট্টগ্রামে ১০টি ফেয়ার সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে রিহ্যাব। রিহ্যাব ২০০৪ সাল থেকে বিদেশে হাউজিং ফেয়ার আয়োজন করছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি, যুক্তরাজ্যে, দুবাই, ইতালীর রোম, কানাডা এবং সিডনী এবং কাতারে ১টি করে “রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার” সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই সকল ফেয়ার আয়োজনের মাধ্যমে রিহ্যাব দেশে ও বিদেশে গৃহায়ন শিল্পের বাজার সৃষ্টি এবং তা প্রসারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে। অন্যদিকে, প্রবাসী ক্রেতারা তাদের যেমন আবাসিক সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পেয়েছে, আবার এই ফেয়ারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি গৃহায়ন শিল্প এবং লিংকেজ শিল্প বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।

সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এসকে