
আন্তর্জাতিকভাবে দৃশ্যমান করতে এবারের বাণিজ্য মেলার প্রবেশদ্বার সাজানো হচ্ছে পদ্মা সেতুর আদলে। এর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে নিজ দেশের অর্জন আর উন্নয়নের গতি। বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় ৬৫ জন শ্রমিক দিন-রাত পরিশ্রম করছেন মেলার এই প্রবেশদ্বার নির্মাণে। এদের মধ্যে পাঁচজন শুধু গেট নির্মাণের জন্যই এখানে এসেছেন সুদূর পঞ্চগড় থেকে। রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি (সোমবার) থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বর্ণাঢ্য এই প্রবেশদ্বারটি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে ঢোলক কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
ঢোলক-এর কর্ণধার দেবশীষ ঘোষ বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর থেকে এই প্রবেশদ্বার নির্মাণের কাজ শুরু করে ঢোলক। মূল কাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এ মাসের মধ্যেই শেষ করা হবে দুই পাশের কাঠামো নির্মাণসহ ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজ। এই প্রবেশদ্বারের কাজ সম্পন্ন করতে ৪০-৫০ লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।
১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শুভ উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। দেশের বাণিজ্য প্রসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ আয়োজনে মাসব্যাপী এ মেলায় প্রতিবছরই সমাগম ঘটে দেশি-বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের। মেলা প্রাঙ্গণের ৩১ দশমিক ৫৩ একর জমিতে ২৩তম এই মিলনমেলা সফলভাব সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, বিদেশি দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্যও থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়ন মিলিয়ে এবারের বাণিজ্য মেলায় মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। বাংলাদেশ ছাড়াও ১৭টি দেশ অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইপিবি।
মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, প্রাঙ্গণজুড়ে দ্রুতগতিতে চলছে বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণের কাজ। সঙ্গে সুন্দরবন ইকো পার্কসহ নানা আয়োজন। বিশেষ করে প্রবেশদ্বারের কাজ সম্পন্ন করতে হবে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতের আগেই। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ। বাকি রয়েছে ডিজাইন আর ডেভেলপমেন্ট। কারণ, ১ জানুয়ারি প্রবেশদ্বারের ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মেলা সচিবালয়ের সচিব এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর উপ-পরিচালক (ফাইন্যান্স) মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের নিজেদের অর্জনই শুধু নয়, দেশের উন্নয়নে জ্বলন্ত প্রতীক। এটি দেশে দৃশ্যমান। এখন আন্তর্জাতিক মহলে দৃশ্যমান করতেই আমাদের এই প্রয়াস।
ঢোলক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ ঘোষ বলেন, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর উন্নয়নের আধুনিক গতিধারাকে প্রাধান্য দিয়ে গেটের তিনটি ডিজাইন জমা দিয়েছিলাম মেলা সচিবালয়ে। তারা পদ্মা সেতুর ডিজাইনটিকেই অনুমোদন দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ঐতিহ্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে ঢাকা গেট এবং এ বছর আন্তর্জাতিকভাবে প্রাপ্ত দুটি অর্জন। অর্থাৎ প্রবেশদ্বারের দুই পাশে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হবে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে মাদার অব হিউম্যানিটি খেতাবপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি।
মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে : মেলায় থাকছে মা ও শিশু কেন্দ্র, শিশুপার্ক, ই-পার্ক, এটিএম বুথ, রেডিমেট গার্মেন্টস, হোমটেক্স, ফেব্রিক্স পণ্য, হস্তশিল্পজাত, পাট ও পাটজাত, গৃহস্থালী ও উপহার সামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ক্রোকারেজ, তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক, পলিমার পণ্য, কসমেটিকস হার্বাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি, নির্মাণ সামগ্রী ও ফার্নিচারের স্টল।
আয়োজকরা জানান, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে দৃষ্টিনন্দন ১৪টি বাগান, তিনটি রেস্তোরাঁ, ইকোপার্ক, শিশুপার্ক, পর্যাপ্ত টয়লেট, এটিএম বুথ, মসজিদ, প্রতিবন্ধীদের জন্য অটিজম সেন্টার, মাদার কেয়ার সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র ইত্যাদি।
মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানান, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। বিদেশি দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্যও থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এবারের বাণিজ্য মেলায়।
সম্পাদনা: আরএ/আরবি/জেডএইচ