
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান ও শ্রীনগর উপজেলায় শতাধিক আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। সংশ্নিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ৯৫ ভাগ আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। আর এসব অবৈধ আবাসন প্রকল্প কৃষিজমি ভরাট করে বিলবোর্ড টানিয়ে রেখেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে বলে জানান কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু।
দীপু আরও বলেন, গজারিয়া উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু থেকে মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা পর্যন্ত মহাসড়ক ঘেঁষা বেশিরভাগ কৃষিজমি এখন ভরাট হয়ে গেছে। বাউশিয়ায় কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে ওষুধ নির্মাণ প্রকল্পসহ নানা শিল্প-কারখানা এবং বালুয়াকান্দি, ভবেরচর, ভাটেরচর এলাকায়ও গড়ে উঠতে শুরু করেছে আবাসন প্রকল্পসহ নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি অনুমতি ছাড়াই ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ঘেঁষে কৃষিজমি ভরাট করে চলছে হাউজিং ব্যবসা। এ বিষয়ে গত জুলাই মাসে জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। এরপর প্রশাসন পদক্ষেপ নিলেও তা ধীরগতিতে চলছে।
তবে প্রশাসনের অপর একটি সূত্র জানায়, কৃষিজমির মালিকরা বেশি মূল্য পেয়ে আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এছাড়া, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বসতবাড়ি নির্মাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর ফলে মুন্সীগঞ্জে কৃষিজমির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। গত ৩০ বছরে এখানকার প্রায় ৭০ হাজার একর কৃষিজমি কমে গেছে বলে জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে। নদীভাঙন, আবাসন প্রকল্প, শিল্প-কলকারখানা ও বাড়িঘর নির্মাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিজমি কমেছে। জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে লৌহজং, শ্রীনগর, সিরাজদীখান ও গজারিয়া- এ চারটি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কৃষিজমি কমেছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এ কারণে জেলায় আলু, ধানসহ বিভিন্ন সবজির উৎপাদনও কমে গেছে। কৃষিজমি কমতে থাকায় জেলা প্রশাসনসহ সরকারও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কেননা, যেভাবে কৃষিজমি কমতে শুরু করেছে, তাতে দেশে এক সময় খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৯১ একর। দুই যুগ পর ২০০৮ সালের পরিসংখ্যানে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৭ একরে। আর ২০১১-১২ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে ১৫ হাজার ৬৯৯ একর কমে কৃষিজমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৮ একরে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদী বিধৌত জেলা মুন্সীগঞ্জে প্রতি বছরই নদী ভাঙনে বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ বছর নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় কৃষিজমি কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক সংলগ্ন কুচিয়ামোড়া এলাকার বাসিন্দা ইমতিয়াজ উদ্দিন বাবুল জানান, কেরানীগঞ্জে নির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে সিরাজদীখানের বালুরচর, মহাসড়ক ঘেঁষা কৃষিজমিগুলো আর কৃষকের নিয়ন্ত্রণে নেই। আবাসন প্রকল্পের মালিকপক্ষ এসব কৃষিজমি ক্রয় করে কয়েক বছর ধরে বালু দিয়ে ভরাট করেছে। সিরাজদীখান ও শ্রীনগর- এই দুটি উপজেলার মহাসড়ক ঘেঁষে শতাধিক আবাসন প্রকল্প কৃষিজমি ভরাট কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা চলছে লৌহজং উপজেলায়ও। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সিরাজদীখান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা পেয়ে কৃষিজমি ভরাটের সঙ্গে জড়িত হাউজিং কোম্পানি নামের তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। তালিকা হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ ফয়জুল রহমানও নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ চলছে।
সম্পাদনা: এফএইচ/আরএ/আরবি