আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
সুদমুক্ত ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা

দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সুদমুক্ত গৃহনির্মাণ ঋণ চালু করছে সরকার। এক্ষেত্রে প্রয়োজন ও আবেদন সাপেক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা সহজ শর্তে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহায়ন ঋণ পাবেন। দেশব্যাপী ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার বাসস্থান নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। এর বাইরেও যাতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা গৃহহীন না থাকে, সে লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সুদমুক্ত এই গৃহনির্মাণ ঋণ চালু করছে সরকার।

গৃহায়ন ঋণের বিষয়ে ইতিমধ্যে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ঋণ বিতরণ নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে সর্বোচ্চ ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা করে সুদমুক্ত গৃহায়ন ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিনাসুদে ঋণ দেওয়া ব্যাংকের জন্য বাস্তবসম্মত নয় বলে পরামর্শ আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সুদের ভর্তুকি দেবে সরকার।

তবে পরে জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের প্রস্তাব অনুসারে এই অংক বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করার বিষয়টি চূড়ান্ত হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সুদমুক্ত এ ঋণ ১৫ বছরে ১৮০ কিস্তিতে পরিশোধের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। এখন শুধু বাকি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ঋণ বিতরণের অর্থ ছাড় এবং চূড়ান্ত অনুমোদন ও ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু করা।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি এবার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহায়ন কার্যক্রম হাতে নেয় সরকার। সুদমুক্ত এই বিশেষ ঋণ চালুর জন্য এ খাতে ১৫ হাজার ৩ কোটি টাকা ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় ঋণ বিতরণ শেষে নির্দিষ্ট সময় পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী থেকে মাসিক ভিত্তিতে ঋণের টাকা কেটে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মো. নাসের ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে লেখা চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় বিনাসুদে গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা প্রবর্তনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে তারা আমাদের স্বাধীন দেশ ও একটি লাল-সবুজ পতাকা উপহার দিয়েছেন। দেশে বর্তমানে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২০৭ জন ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা আছেন। এছাড়া ভাতাপ্রাপ্ত ৭ হাজার ৮৩৮ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ৪১ নারী মুক্তিযোদ্ধা আছেন। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা করে বিনাসুদে গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৫ হাজার ৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে’।

বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে বলা হয়, সরকার বাজেট থেকেও এ পরিমাণ অর্থের সংস্থান করতে পারে। সেক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ করে, সেসব ব্যাংক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দেওয়া যেতে পারে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, কৃষি উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ করছে। এসব ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দিলে তা আদায়ও সহজ হবে। সম্মানীর অর্থ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করতে পারবেন। কোনো মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে তার উত্তরাধিকারীরা ঋণ পরিশোধ করবেন।

এ প্রক্রিয়ায় ১০ বছর মেয়াদে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৃতীয় বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা ঋণের মূল টাকা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করবেন।

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। এ সংক্রান্ত কমিটি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। সরকার চাইছে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকেই প্রকল্পটি চালু করতে। তাই মুক্তিযুদ্ধবিষযক মন্ত্রণালয়কে মুক্তিযোদ্ধাদের হালনাগাদ তালিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে বেশি সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ঋণের অংক ও পরিশোধের সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব বিবেচনা নেওয়ায় চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনাসুদে ঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের কর্মকৌশল কী হবে, এতে সম্ভাব্য আর্থিক সংশ্লেষণের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত ও মতামত সংবলিত বিস্তারিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত করেছে। এতে দুটি বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম প্রস্তাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনাসুদে আনুমানিক ১৫ হাজার ৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকার বাজেট থেকে বরাদ্দ দেবে। বিকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থ সংস্থান করবে।

উভয় প্রস্তাবে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ঋণের মেয়াদ হবে ১০ বছর। ঋণগ্রহীতা মুক্তিযোদ্ধাকে ১২০টি কিস্তিতে ঋণের মূল টাকা পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে আসল টাকা পরিশোধে মাসিক কিস্তির পরিমাণ হবে ৬ হাজার ৭৯২ টাকা। এ ঋণের জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। ঋণগ্রহীতার পক্ষে যাবতীয় সুদ সরকার দেবে। তবে ঋণের পরিমাণ ও মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।

সরকার বর্তমানে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দিয়ে থাকে। তাই বর্ধিত এ ঋণ সুবিধা এসব ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক এ সংক্রান্ত এক সভায় বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সুদমুক্ত ঋণ দিতে যে ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে, সেটা সরকারের বাজেট থেকে সংস্থান করা দুঃসাধ্য হবে। তবে সরকারকে একবারই এ অর্থ দিতে হবে না। তাই ঋণ বিতরণের সম্ভাব্য আবেদনের সংখ্যার ভিত্তিতে এর পরিমাণ নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে সোনালী ব্যাংকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২ লাখ টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা করে গৃহনির্মাণ ঋণের সুবিধা চালু রয়েছে। ব্যাংকের তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আর্থিক সামর্থ্য প্রয়োজন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৬৪ জেলায় সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার ২০৭ জন। এর বাইরে ভাতাপ্রাপ্ত ৭ হাজার ৮৩৮ যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ৪১ নারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬ মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেককে পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হলে ১৫ হাজার ৩ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্কলনে বলা হয়েছে। তবে ১০ লাখ করে ঋণ দিতে গেলে এই অংক আরো বাড়বে।

সম্পাদনা: জেডএইচ/এসএম/আরবি