
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নকসাবিহীন ভবন নির্মাণে হিড়িক পড়েছে। জেলার পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের পাইকপাড়ার পাটগুদাম রোড, ননীসাহার বাড়ি রোড, গগণসাহা রোড, কালাইশ্রীপাড়া, মহাদেবপট্টি, জগত বাজারে অনুমোদনবিহীন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজসে অনিয়ম হচ্ছে বলে পৌরসভা সূত্রে জানা যায়। এলাকাবাসীরা সাংবাদিকদের জানায়, প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারছেন না। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করছেন তাঁরা।
অভিযোগ রয়েছে, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজান আনসারী ও সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্ত পৌরসভা নিয়ম অমান্য করে অন্তত ৫০টি বাড়ির নকশা বিশেষ কায়দায় অনুমোদন করিয়েছেন। এসব নকশা পৌরসভার অনুমোদনের জন্য ভবন মালিকের সাথে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পাশ করান। একের পর এক এসব ঘটনায় পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কাউন্সিলর ও সহকারী প্রকৌশলীকে পাশ কাটিয়ে কেউ পৌরসভা থেকে ভবনের নকশা পাশ করালে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়। নির্মাণসামগ্রী, রড, মালামাল পরিবহন কাজে ব্যবহৃত গাড়ি এলাকায় প্রবেশ করলে তারা বাধা প্রদান করেন। ভবন নির্মাণের সময় বিভিন্ন ত্রুটি অভিযোগ এনে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলেন। বাধ্য হয়ে ভবন মালিক তাদের সাথে রফাদফা করে।
গগণ সাহার রোডের মাতৃ ভবনের মালিক আশিষ রায় পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই রাস্তার পাড় ঘেষে বহুতল ভবন নিমাণ কাজ চালাচ্ছেন। এছাড়া, বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রধান পরিবেশক সুব্রত সাহা দু’তলা ভবনের অনুমোদন থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বহুতল ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছেন।
প্রতিবেশিরা অভিযোগ করেন, দু’তলা ভবনের উপর এখন ৫তলা ভবন নির্মাণকাজ শেষ করেছে। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করছি। ইতিমধ্যে ননীসাহার বাড়ির রোডে গৌর সাহা পৌরসভার নিয়ম তোয়াক্কা না করেই বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। এসব ঘটনায় পৌর কর্তৃপক্ষ গৌর চন্দ্র সাহাকে কয়েক দফা নোটিশ প্রদান করলে ভুতুরে কারণে তিনি চিঠির জবান দেননি বলে জানা গেছে। এসব ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় নোটিশ করলেও কেউ অজ্ঞাত কারনে কোন নোটিশের জবাব প্রদানে করেনি।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজান আনসারী ও পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্তের যোগসাজসেই এসব কাজ চলছে। এ ওয়ার্ডে যত ভবন নির্মাণকরা হচ্ছে তার নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে অফিস ম্যানেজের দায়িত্ব এরা নিয়ে মালিকদের সাথে রফাদফা করেন। উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্ত এসব কাজ দেখাশুনা করার জন্য ওই এলাকায় একটি অফিস নিয়েছেন। সেখানে বসে তিনি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাতৃ ভবনের মালিক আশিষ রায় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়মনীতি মেনেই কাজ করছি।
বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের পরিবেশক সুব্রত সাহা জানান, আমার ৫তলা ভবনের অনুমোদন রয়েছে। কাজ বন্ধ করার কোন নোটিশ পাননি বলে জানান।
কাউন্সিলর মিজান আনসারী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনুমোদনহীন কেউ ভবন করে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুমতিবিহীন বহুতল ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পৌরসভা থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্ত জানান, প্ল্যান অনুমোদনের জন্য পৌরসভার আলাদা শাখা রয়েছে। এরা অনুমোদন দেয়। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সত্য নয়।
পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির জানান, যারা এসব কাজে জড়িত। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদনা: জেডএইজ/আরবি/আরএ/