
সাত ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কছির মিয়ার ৯ সদস্যের পরিবার। ৭৬ বছর বয়েসী কছির মিয়া নিজে রাতপ্রহরীর চাকরি করতেন। ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাঙ্গা চালের নিচে ছিল বসবাস। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেলেন একটি পাকা ঘর। বাংলাদেশ সরকারের ‘বীর নিবাস’ নাম দেয়া এই পাকা ঘর কছির মিয়ার কাছে একটি ‘শান্তির নীড়’। কছির মিয়া জানান, তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। আগে ভাঙ্গা বাড়িতে পালা করে ঘুমাতেন। তাই রাতপ্রহরীর চাকরি করতেন। এখন শান্তিতে ঘুমানোর একটা সুযোগ হলো।
সিলেট সদর উপজেলার কালারুকা গ্রামে ১০ শতক জমির ওপর কছির মিয়ার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর। এভাবে সিলেট জেলার ৬৫ জন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন আরো দু‘টিসহ জেলার ৬৭ মুক্তিযোদ্ধার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার লাল-সবুজের ‘বীর নিবাস’।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী সরকার মো. সাজ্জাদ কবির জানান, সিলেটের ১২ উপজেলায় ৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে ইতিমধ্যে বাড়ি নির্মাণ করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আরো দু‘টি বাড়ি নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। ৬৭ বাড়ি নির্মাণে চুক্তিমূল্য ৫ কোটি ৭৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫৮২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় ১১জন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। একই সংখ্যক বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য। তবে একটি বাড়ি নির্মাণের প্রক্রিয়া এখনও চলছে। ভারতের মেঘালয় লাঘোয়া সীমান্তবর্তী এই দুই উপজেলায় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এছাড়া, বিয়ানীবাজারে ৯টি, জৈন্তাপুরে ৮টি, জকিগঞ্জে ৫টি, গোলাপগঞ্জে ৫টি, সদরে ৪টি, কানাইঘাটে ৪টি, দক্ষিণ সুরমায় ৩টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩টি, বালাগঞ্জে ২টি ও বিশ্বনাথে ২টি করে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সদরে একটি বাড়ি এখনও নির্মাণ হয়নি। এটির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড নাজমুল হক জানান, প্রত্যেক উপজেলায় ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা অনুপাতে একটি করে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। আমার উপজেলায় ২৭০ মুক্তিযোদ্ধা আছেন, এর মধ্যে ৪জন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পেয়েছেন পাকা ঘর। অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার এটি।
নাজমুল হক বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা অস্বচ্ছল পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেয়ার পাশাপাশি সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দিচ্ছেন। বছরে দু’বার উৎসব ভাতা দেয়া হচ্ছে। দেশ স্বাধীন করেছিলাম বলে স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকার এতো কিছু করছে। এর চেয়ে পাওয়ার বিষয় আর কী হতে পারে।
এলজিইডি সিলেট জানায়, প্রতিটি বাসস্থানে রয়েছে ২টি শয়ন কক্ষ, ১টি বসার কক্ষ, ১টি রান্না ঘর এবং ১টি বারান্দা। সব মিলিয়ে ফ্লোর এরিয়ার আয়তন ৫০০ বর্গফুট। এছাড়া বাসস্থানের বাইরের দিকে রান্নাঘর সংলগ্ন ১টি পাকা উঠান, টিউবওয়েল, টয়লেট, লাইভস্টক-শেড এবং পোল্ট্রি শেড রয়েছে।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার আসামপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান এখন ‘বীর নিবাস’-এ পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। সহায় সম্বলহীন হাবিবুর রহমান পাকা ঘরে এখন বেশ আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, দেশ আজ আমাদের কিছু দিচ্ছে। যদিও দেশ স্বাধীনের পর অনেক কষ্টে ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি, আজ তারই মেয়ে শেখ হাসিনার এই উপহার পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এতোদিনের সব কষ্ট ভুলে গেছি।
কানাইঘাট উপজেলার বড়চতুল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা জমির আলীর জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি বীর নিবাস। শেখ হাসিনার উপহার তাঁর জন্য অনেক বড় উপায় অবলম্বন মনে করছেন। জমির আলী বলেন, এখন আমার কারো ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যে বাড়ি দিয়েছেন আর মাসে মাসে ১০ হাজার টাকা ভাতা দিচ্ছেন, এতেই আমার জীবন অনেক ভাল চলছে। বঙ্গবন্ধু আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধের আর কোন ভাষা নেই।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সিলেট জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মো. আকরম আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রশংসনীয় উদ্যোগে কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। যেহেতু, বীর নিবাস নির্মাণের শর্ত হচ্ছে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার কমপক্ষে ১০ শতক নিজস্ব জমি থাকতে হবে। তাই যেসব মুক্তিযোদ্ধার ভিটেমাটি নেই তাদের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়ে অথবা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হোক। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কিছুটা হলেও আমরা শোধ করতে পারবো।
সম্পাদনা: আরএ/জেডএইচ/এমএন