আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
সিমেন্টের ইতিহাস ও প্রথম সিমেন্ট কারখানা

ইটের পর ইট গেঁথে সুউচ্চ অট্টালিকা তৈরির যে গল্প, তার পেছনে সিমেন্টের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। একবিংশ শতাব্দীতে এসে সিমেন্টের সাহায্যে ভবন নির্মাণ কৌশলের বিকল্প থাকলেও এখনো সেসব তেমন পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। যে কারণে এই সিমেন্টই ধরে রেখেছে সবচেয়ে বেশি মানুষের আস্থা।
ইতিহাসঃ
সিমেন্টের ব্যবহার প্রথম কারা শুরু করেছিল জানা যায়নি। তবে খ্রীষ্টের জন্মেরও তিন হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার ভবন নির্মাণে সিমেন্ট বা এই ধরনের কিছু বস্তু ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। সেই সময়ে চুনের সঙ্গে ছাই বা ঝামা পাথর মিশানো হতো, যেটা জমাট বাঁধতে সাহায্য করত। তবে এই প্রক্রিয়ার আবিষ্কারক তারা ছিল না। মেসোপটেমিয়ার মানুষ এগুলো ব্যবহার করত। পরবর্তীতে রোমান স্থপতিরা এর মাধ্যমে বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করেছিল।
মধ্যযুগে এসে কিছু কিছু খাল, বন্দর আর দূর্গ নির্মাণে সিমেন্ট ব্যবহারের নমুনা পাওয়া যায়। ১৮ শতকে এসে অবশ্য তা অনেক বেশি আধুনিক রূপ লাভ করে। এই সময় পানি-নিরোধক সিমেন্টও আবিষ্কৃত হয়। আধুনিক সিমেন্টের আবির্ভাব ঘটে মূলত ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের সময়কাল থেকে।
একটা সময় পর্যন্ত ভবন নির্মাণে পাথরের ব্যবহার ছিল। কিন্তু মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবনের চাহিদাও বাড়তে থাকে। তাই বাড়তি পাথরের যোগান দেয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। যে কারণে বাড়ে ইট আর সিমেন্টের ব্যবহার। উনিশ শতকের সেই সময়টাতে হাইড্রোলিক সিমেন্টের আবির্ভাব ঘটে, যেটা বেশ অল্প সময়ের মধ্যেই জমাট বাঁধে। কিন্তু এ ধরনের সিমেন্টে কাজ করতেও বেশকিছু সমস্যা দেখা দেয়।
জন স্মেটন যখন ইংলিশ চ্যানেলে তৃতীয় এডিস্টন বাতিঘর (১৭৫৫-৯) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তখন প্রচলিত সিমেন্টে সেই কাজ স¤পন্ন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তার দরকার ছিল এমন ধরনের সিমেন্ট যেটা দিয়ে প্রবল জোয়ারের সময়ও কাজ করা যাবে এবং যেটা জমাট বাঁধতে অন্তত ১২ ঘণ্টা সময় নেবে। তাই স্মেটন বাজারে প্রচলিত সব ধরনের হাইড্রোলিক সিমেন্ট নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। নিজের চাহিদা তিনি পূরণ করেছিলেন কাদা ও আর চুনাপাথরের সংমিশ্রণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ১৮১৭ সালে লুই ভ্যাকেটও এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ভিন্নধর্মী সিমেন্ট তৈরি করেছিলেন। জেমস ফ্রস্ট নামক এক ব্যক্তিও প্রায় ভ্যাকেটের মতো একই ধরনের সিমেন্ট তৈরি করেন। তিনি সেটার নাম দেন ‘ব্রিটিশ সিমেন্ট’। ১৮২২ সালে পেটেন্টও সেরে ফেলেন। জোসেফ অ্যাসপোডিনও বিশেষ ধরনের সিমেন্ট তৈরি করেছিলেন, যেটার রঙ ছিল ইংল্যান্ডের পোর্টল্যান্ড উপকূলের এক ধরনের দামি পাথরের মতো। এই পাথর পোর্টল্যান্ড নামেই পরিচিত। এর নাম অনুসারে অ্যাসপোডিনও তার সিমেন্টের নাম রাখেন ‘পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট’।

বাংলাদেশের প্রথম সিমেন্ট কারখানাঃ
বাংলাদেশের অর্থনীতি বরাবরই কৃষিভিত্তিক হওয়ায় সিমেন্ট-শিল্পের বিকাশ হয়েছে অনেক পরে। তাছাড়া সিমেন্ট তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক স¤পদেরও বেশ অভাব এখানে। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে নগরের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। অর্থনীতির প্রধান অংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল থাকলেও তাতে শিল্পের প্রভাব বাড়তে শুরু করে। বাড়তে শুরু করে সিমেন্টের চাহিদাও। ২০১০ সালে হওয়া এক সমীক্ষা বলছে, পুরো বাংলাদেশে এক বছরে সিমেন্টের মোট চাহিদা ১৫ লাখ টন।
দেশের শিল্প কারখানার ইতিহাসে ছাতক সবচেয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। দেশের প্রথম সিমেন্ট কারখানাও এটি। ১৯৪১ সালে সিলেটের ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর পাড়ে যাত্রা শুরু করে আসামবেঙ্গল সিমেন্ট কো¤পানি। পরবর্তীতে এটি ‘ছাতক সিমেন্ট কারখানা’ নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এটি পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের অধীনে।
ছাতকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় চুনাপাথর। মূল যোগান আসে ভারতের আসাম থেকে। তবে ছাতক সিমেন্ট কারখানার টেকেরঘাটে নিজস্ব পাথর উত্তোলনকেন্দ্র রয়েছে। বর্তমানে এই কারখানা থেকে বছরে ২ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয়। এখানকার সিমেন্ট আসামে রফতানি হয়।