
প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুরু হচ্ছে চার দিনব্যাপী রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার ২০১৮। ‘স্বপ্নীল আবাসন, সবুজ দেশ লাল সবুজের বাংলাদেশ’ এই স্লোগানে চট্টগ্রামের সবচেয়ে অভিজাত পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ-তে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মিলনমেলা শুরু হবে। চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত এবার ফেয়ারে ৮৩টি স্টলে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি তাদের প্রকল্প প্রদর্শন করবে। রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেশ কিছু নির্মাণসামগ্রী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় এই ফেয়ার উদ্ধোধন করবেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব আবদুচ ছালাম। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের সুযোগ পাবেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। আগত দর্শকদের জন্য লটারির মাধ্যমে প্রতিদিন থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।
ফেয়ার উপলক্ষে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম ক্লাবের ব্যাংকুইট হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের আশা, বিগত আয়োজনের ধারাবাহিকতায় এবারও একটি সফল ফেয়ার আমরা উপহার দিতে পারবো। আমাদের সদস্য এবং ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে এই ফেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রিহ্যাব ফেয়ার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মনের মত ফ্ল্যাট বা প্লট খুঁজে নিতে ক্রেতাদের সাহায্য করবে। রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার-২০১৮’ এ আপনাদের সকলকে অগ্রীম আমন্ত্রণ।
ফেয়ারের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার-২০১৮ তে ৮৩টি স্টল থাকছে। এই ফেয়ারে আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস সহ কয়েক লিংকেজ প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিতে পেরেছি। এই ফেয়ারে কো-স্পন্সর হিসাবে অংশগ্রহণ করছে ২১টি প্রতিষ্ঠান, সাধারণ স্টল ২১ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ১০টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭টি। সব মিলিয়ে অংশ নিচ্ছে ৫৯টি প্রতিষ্ঠান।
এবার ফেয়ারে দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল অপরটি মাল্টিপল। সিঙ্গেল প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল টিকিট দিয়ে মেলার সময় দর্শনার্থীরা চারবার প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউ এ শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার জনাব মোঃ আব্দুল মান্নান। ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় মেলার সমাপনী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান এর আয়োজন করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণে রয়েছেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আঁখি আলমগীর।
কো-স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সমূহ নিম্নরূপঃ
১. এয়ারবেল ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস লিমিটেড
২. আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন লিমিটেড
৩. এএনজেড প্রপার্টিজ লিঃ
৪. বার্জার পেইন্টস লিমিটেড
৫. বিক্রয়.কম
৬. বিল্ডিং টেকনোলজি এ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেড।
৭. কনকর্ড রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড
৮. সিএ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (সিপিডিএল)
৯. এলিট পেইন্ট
১০. এপিক প্রপার্টিজ লিমিটেড
১১. ইক্যুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট প্রাঃ লিমিটেড
১২. ফিনলে প্রপার্টিজ লিমিটেড
১৩. হাতিল কমপ্লেক্স লিঃ
১৪. জুমাইরা হোল্ডিংস লিমিটেড
১৫. মাওলানা ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড
১৬. নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড
১৭. র্যাংকস এফসি প্রপার্টিজ লিমিটেড
১৮. সানমার প্রপার্টিজ লিমিটেড
১৯. আবুল খায়ের সিরামিক ইন্ডাজট্রিজ লিঃ
২০. ইউনিক এসেট্স লিমিটেড
২১. ইউএস বাংলা এসেটস লিঃ
এছাড়া, এন্ট্রি টিকিট ও টিকিট কাউন্টারের স্পন্সর হয়েছে জিপিএইচ ইসপাত লিঃ, গেট ও ইনফরমেশন বুথ এর স্পন্সর হয়েছে আরামিট গ্রুপ, শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগীতার স্পন্সর হয়েছে কেএসআরএম মেলার উদ্বোধনী অধিবেশনের স্পন্সর হয়েছে রয়েল সিমেন্ট লিঃ এবং ফেয়ারের চার দিনের র্যাফেল ড্র এর স্পন্সর হয়েছে হোটেল দি কক্স টুডে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী, রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির কো-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক, কো-চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার মো: দিদারুল হক চৌধুরী ও চট্টগ্রাম রিজিয়নের প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কনভেনর আবদুল গফ্ফার মিয়াজী।
রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত সময়ে চট্টগ্রামে ১০টি ফেয়ার সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে রিহ্যাব। ২০০১ সাল থেকে ঢাকায় রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার শুরু হয়। সেখানেও ১৭টি হাউজিং ফেয়ার সফলভাবে সম্পন্ন করেছে রিহ্যাব। এছাড়া, রিহ্যাব ২০০৪ সাল থেকে বিদেশে হাউজিং ফেয়ার আয়োজন করে আসছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি, যুক্তরাজ্যে, দুবাই, ইতালীর রোম, কানাডা, সিডনী এবং কাতারে ১টি করে “রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার” সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের আশা, বিগত আয়োজনের ধারাবাহিকতায় এবারও একটি সফল ফেয়ার আমরা উপহার দিতে পারব। আমাদের সদস্য এবং ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে এই ফেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রিহ্যাব ফেয়ার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মনের মত ফ্ল্যাট বা প্লট খুঁজে নিতে ক্রেতাদের সাহায্য করবে। রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার-২০১৮’ এ আপনাদের সকলকে অগ্রীম আমন্ত্রণ।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, কয়েকটি ব্যাংকে সুদের হার কমে আসার কারণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে হাউজিং লোন দিলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হাউজিং লোনের কোন ঘোষণা আসেনি। আমরা চাই, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এছাড়া, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং আবাসন খাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমরা ‘হাউজিং লোন’ নামে ২০ হাজার কোটি টাকার রিফিন্যান্সিং করার দাবি জানাই। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্য আবাসন খুব সহজেই সম্ভব যদি সরকারের পক্ষ থেকে ৫% সুদে এই তহবিল থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা যায়। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১৫% ভূমিকা রাখা আবাসন শিল্পে স্থবিরতার জন্য অত্যাধিক রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অন্যতম একটা প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে ১৬% এর উপরে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় রয়েছে। এটি কমিয়ে ৬-৭ শতাংশে নিয়ে আসলে এ খাতে গতিশীলতা ফিরবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রিহ্যাব দৃঢ় প্রত্যয়ী। তবে এই খাতের সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারী সহযোগীতা না পেলে আমাদের উদ্যোগগুলো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আপনারা, সাংবাদিকরা সবসময় সমাজের তথ্য প্রবাহের সেতু হিসেবে কাজ করেন। আমরা আশা রাখি আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতের সমস্যা সমাধানে আপনাদের সহযোগীতা সবসময় পাব।
সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এমএন