আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
ঋণ তহবিল গঠন ও রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানোর দাবী রিহ্যাবের

দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং আবাসন খাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বেশ কয়েকটি দাবী উত্থাপন করেছেন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম ক্লাবের ব্যাংকুইট হলে আসন্ন রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার ২০১৮ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, কয়েকটি ব্যাংকে সুদের হার কমে আসার কারণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে হাউজিং লোন দিলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হাউজিং লোনের কোন ঘোষণা আসেনি। আমরা চাই, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এছাড়া, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং আবাসন খাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমরা ‘হাউজিং লোন’ নামে ২০ হাজার কোটি টাকার রিফিন্যান্সিং করার দাবি জানাই।

তাঁরা আরও বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্য আবাসন খুব সহজেই সম্ভব যদি সরকারের পক্ষ থেকে ৫% সুদে এই তহবিল থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা যায়। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১৫% ভূমিকা রাখা আবাসন শিল্পে স্থবিরতার জন্য অত্যাধিক রেজিস্ট্রেশন ব্যয় অন্যতম একটা প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে ১৬% এর উপরে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় রয়েছে। এটি কমিয়ে ৬-৭ শতাংশে নিয়ে আসলে এ খাতে গতিশীলতা ফিরবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রিহ্যাব দৃঢ় প্রত্যয়ী। তবে এই খাতের সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারী সহযোগীতা না পেলে আমাদের উদ্যোগগুলো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আপনারা, সাংবাদিকরা সবসময় সমাজের তথ্য প্রবাহের সেতু হিসেবে কাজ করেন। আমরা আশা রাখি, আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতের সমস্যা সমাধানে আপনাদের সহযোগীতা সবসময় পাব।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকার পরে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হচ্ছে চট্টগ্রাম। বন্দরনগরী হওয়ায় চট্টগ্রাম হচ্ছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। শহরমূখী মানুষেরা জীবন ও জীবিকার প্রয়োজন মেটাতে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দিনে দিনে আরো ব্যস্ত হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম। শুধু বাণিজ্যিক রাজধানীই নয়, প্রকৃতির অবাধ লীলাভূমি চট্টগ্রামে পর্যটকদের আনাগোনাও বাড়ছে দিনকে দিন। চট্টগ্রামবাসীর আবাসনের পাশাপাশি চট্টগ্রামে আসা পর্যটকদের আবাসন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে রিহ্যাব।

চট্টগ্রাম এলাকার আবাসন ব্যবসায়ীদের সর্বপরি চট্টগ্রাম অঞ্চলের আবাসন খাতকে পরিপূর্ণরূপে সহায়তা দিতে ২০০৬ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম রিহ্যাব রিজিওনাল অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামবাসীর জন্য নান্দনিক ও পরিকল্পিত নগরায়ন রূপান্তরের পাশাপাশি নিরাপদ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকারে বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। উন্নত মানের নাগরিক সুবিধা রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু জেলা, উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জীবন যাত্রার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। প্রকৃতি কন্যা চট্টগ্রামকে সবুজ নিরাপদ পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সবসময়ই দৃঢ় প্রত্যয়ী।

রিহ্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, আপনার জানেন, মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে আবাসন। আর এই আবাসনের চাহিদা পূরণ করার নৈতিক দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সীমিত সম্পদের এই দেশে সরকারের একার পক্ষে এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় বেসরকারী উদ্যোক্তাগণ মানুষের আবাসন সমস্যা সমাধানে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে দেশের আবাসন সমস্যা সমাধানে সরকারের “উন্নয়ন সহযোগী” হিসেবে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর ১০৫১ টি সদস্য ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

রিহ্যাব এর বিপুল কার্যক্রমে গত কয়েক দশকে সহজে আবাসনের মালিকানা সৃষ্টি মানুষের মনে আত্মনির্ভরতা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ ২৬৯ প্রকার লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫%। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সাথে ৩৫ লক্ষ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের অন্নের যোগান দিয়েছে। আবাসন খাত নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সৃষ্টি করছে, যা প্রকারান্তরে দেশের উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে স্কাই লাইনের পরিবর্তন হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আপনাদের অবহিত করা যাচ্ছে যে, রিহ্যাব আগামী ৮ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে চট্টগ্রামের পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ-তে রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার-২০১৮ এর আয়োজন করেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত চার দিনব্যাপী ফেয়ার উদ্ধোধন করবেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব আবদুচ ছালাম। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের সুযোগ পাবেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। আগত দর্শকদের জন্য লটারির মাধ্যমে প্রতিদিন থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী, রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির কো-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক, কো-চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার মো: দিদারুল হক চৌধুরী ও চট্টগ্রাম রিজিয়নের প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কনভেনর আবদুল গফ্ফার মিয়াজী।

সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এমএন