আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
চলতি বছরেই শেষ হতে পারে পূর্বাচল সিটির কাজ

ক্রমে বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠা রাজধানীর পাশেই গড়ে উঠছে স্বপ্নের পূর্বাচল সিটি। সুপরিসর লেক, সবুজ বনায়ন, ইকোপার্কসহ আধুনিক শহরের সব সুযোগ-সুবিধাই থাকছে রাজউকের পরিকল্পিত এই শহরে। ছয় হাজারের বেশি একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের মধ্যে বিশ্বমানের এই শহরের কাজ শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

রাজউক চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান বলেন, পূর্বাচল হবে বিশ্বমানের স্বপ্নের শহর। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে বিশ্ব দেখবে এক নতুন ঢাকা। পূর্বাচল প্রকল্পে যারা বাড়ি করবেন, তাদের নকশার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে; দ্রুত সময়ে সব জায়গায় বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে। পানির ব্যবস্থা থাকলে মানুষ এখনই বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করতে পারতেন। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্পের রাস্তাঘাট ও লেক তৈরির কাজ এ বছরই সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি মানুষের বসবাসযোগ্য করে তুলব। নতুন এই শহর গড়ে উঠলে রাজধানীর ওপর চাপ কমবে। বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ পাবে নগরবাসী।

পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক বলেন, কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে নৌবাহিনী নিযুক্ত করা হয়েছে। এখন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

রাজউক সূত্র জানায়, রাজধানীতে মানুষের চাপ কমাতে পাশে আরেকটি নতুন শহর গড়ে তুলতে রাজউক ১৯৯৫ সালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পটি হাতে নেয়। ১৯৯৫ সালে প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। ব্যয় বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পের জন্য নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার ৬ হাজার ২২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণ মামলা ও নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের উন্নয়নকাজ শুরু করা হয় ২০০২ সালে। প্রকল্পটিতে বসবাসের জন্য ২৫ হাজার ৩৫০ জনের নামে আবাসিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন, তাদের প্লটগুলোয় ভবন নির্মাণে নকশার অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে রাজউক। যারা ভবন নির্মাণ করে বসবাস করবেন, তাদের জন্য সুবিধা প্রদানে হাসপাতাল, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, মসজিদ-মন্দির নির্মাণ করার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাচল প্রকল্পের বাসিন্দাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে ১৩টি হাসপাতালের জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পূর্বাচল নতুন এই শহর প্রকল্প এখন বাস্তবে রূপ দেওয়ার অপেক্ষায়।

রাজউক সূত্র জানায়, বালু ব্রিজের পর থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত ৬ হাজার ২২৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠছে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। ৪টি থানা এলাকার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশে পড়েছে ৪ হাজার ৫৭৭ একর ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের অংশে পড়েছে ১ হাজার ৫০০ একর জমি।

প্রকল্পে ২৫ হাজার ১৬টি আবাসিক প্লটের পাশাপাশি থাকছে শপিংমল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ-মাদ্রাসা, কমিউনিটি সেন্টার, হাসপাতাল ও স্টেডিয়াম। প্রকল্প এলাকায় ১২২ একর বনায়নের পাশাপাশি পুরো পূর্বাচল প্রকল্প ঘিরে থাকবে ৪৩ কিলোমিটার নয়ানাভিরাম লেক। এই লেকের মাঝখানে ১২ দশমিক ৬ একর জায়গাজুড়ে থাকবে দ্বীপের মতো ভাসমান ইকোপার্ক। লেকটির প্রশস্ত অংশ পড়েছে ১২ নম্বর এবং ১৭ নম্বর সেক্টরের মাঝখানে। এই লেকের মধ্যে আনন্দ বিনোদনের জন্য থাকবে ভাসমান রেস্তোরাঁ। ১২ নম্বর সেক্টর পুরোটাই হবে ইউনিভার্সিটি। এর সঙ্গেই থাকছে স্টেডিয়াম। ১৭ নম্বর সেক্টরটি ‘ভিআইপি সেক্টর’ হিসেবেই অনেকের কাছে পরিচিত। সাবেক ও বর্তমান বহু মন্ত্রী, এমপিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আবাসিক প্লট রয়েছে এখানে। এর চারপাশে রয়েছে সবুজ বনায়ন। প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে চলছে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। এ ছাড়া প্রকল্পের ৩৯ ভাগ জায়গাজুড়ে থাকবে আবাসিক প্লট, ২৬ ভাগ রাস্তা। প্লটের মালিকরা ইতোমধ্যে বসতি নির্মাণ শুরু করেছেন। শিগগিরই পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে রাজউক।

জানা গেছে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অবকাঠামো নির্মাণের একটি অংশের উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার পরই বদলাতে শুরু করেছে প্রকল্পের পরিস্থিতি। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে কাজ। ৬২টি ব্রিজের মধ্যে রূপগঞ্জ অংশের ৩৫টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও এগিয়ে চলছে।

রাজউক সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসনাত বলেন, পুরো দমে কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি খুবই দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।

রাজউকের উপসহকারী প্রকৌশলী খায়রুল আলম পারভেজ বলেন, ধাপে ধাপে কাজ চলছে। লেকের কাজ প্রায় শেষ। রাস্তা নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে।