
জমে উঠেছে রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার ২০১৮। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ মেলা। মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে হাঁটতে থাকা আবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা এবারের মেলা নিয়ে বেশ আশাবাদী। নাম রেজিস্ট্রেশন, প্লট বা ফ্ল্যাট বুকিং ভালো হচ্ছে। গতকাল শুক্রবারের মতো আজ শনিবার ছুটির দিনেও দুপুরের পর থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়তে থাকে মেলায়। পছন্দের ফ্ল্যাটের খোঁজ জানতে অনেকে এসেছেন সপরিবারে। বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জানান, ছোট বা মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের দিকে ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি। একটি স্টলের সামনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেরেএক কর্মকর্তা জানান, ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকার ফ্ল্যাট খুঁজছেন, কিন্তু তাঁর পছন্দের জায়গায় পাচ্ছেন না।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের র্যাডিসন ব্লু হোটেলের মেজবান হলে শুরু হয়েছে চার দিনের আবাসন মেলা ‘রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার ২০১৮ ’। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত মেলার আজ তৃতীয় দিন। মেলা চলবে আগামীকাল রোববার পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। এবার মেলায় ৪২টি আবাসন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ১০টি নির্মাণ উপকরণ প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। সব মিলিয়ে মেলায় স্টল ৫৯ টি। বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠান ২০০ প্রকল্প নিয়ে এসেছে মেলায়।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের মতো আজ শনিবার সকাল থেকেই মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয় বিকেল গড়াতে তা আরও বাড়ে। মেলার তৃতীয় দিন বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে, সব স্টলেই মানুষের ভিড়। সবাই প্লট ও ফ্ল্যাটের খোঁজ নিচ্ছেন। ক্রেতাদের অনেকে তথ্য নিয়ে পরে যোগাযোগ করবেন—এমন কথা বলে চলে যাচ্ছেন। আর কেউ কেউ বুকিংও দিচ্ছেন। স্টলের পক্ষ থেকে রেজিস্টার খাতায় ঠিকানা ও যোগাযোগের নম্বরও রেখে দেওয়া হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, একটি বাড়ি করার স্বপ্ন কার-ই না থাকে। তাই সাধ আর সাধ্যমত পছন্দের আবাস খুঁজে পেতে বাড়ি, প্লট বা জমির খোঁজে অনেকেই ভিড় করেছেন আবাসন মেলায়। এখানে এক সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান থাকায় যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
আয়োজকরা জানান, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের আয়ের সাধ-সাধ্যের সমন্বয় করতে এই মেলার আয়োজন। মেলা আয়োজনের মাধ্যমে এক ছাতার নিচেই আবাসনের সব সেবা দেওয়া হচ্ছে। নগরীর ব্যস্ততম মানুষ একনজর এসে সব কিছুই জানতে পারছে।
ছোট ও কম দামের ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া যায় স্যানমার প্রপার্টিজের স্টলে। ভাটিয়ারী বিএমএ গেটের পাশে ‘স্যানমার দামিনি’ নামে প্রতিষ্ঠানটির একটি আবাসন প্রকল্পে সর্বনিম্ন ৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। এই ফ্ল্যাটের দাম ২১ লাখ ২১ হাজার ১১১ টাকা। একই প্রকল্পে অবশ্য দেড় হাজার বর্গফুটেরও ফ্ল্যাট রয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২১ সালে।
স্যানমারের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য ছোট ফ্ল্যাট তৈরি করেছেন তাঁরা। এককালীন ১৫ শতাংশ টাকা দিয়ে ছোট ফ্ল্যাট বুকিং দিতে পারবেন ক্রেতারা। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য নগরের বায়েজিদ এলাকায় ‘স্যানমার গ্রিনপার্কে’ রয়েছে ৬০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট।
আবাসন প্রতিষ্ঠান সিএ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের (সিপিডিএল) বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের জন্য ছোট আকারের ফ্ল্যাট তৈরি করেছে নগরের ফিরিঙ্গিবাজারে। সবচেয়ে ছোট ফ্ল্যাটের আয়তন ৯৫০ বর্গফুট। সবচেয়ে বড় ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৭০০ বর্গফুটের। সিপিডিএলের হেড অব সেলস জিয়াউল হক খান জানান, তাঁরা মেলায় ১১টি আবাসন প্রকল্প এনেছেন।
এয়ারবেলের কম দামের ফ্ল্যাট রয়েছে কর্নেলহাট ও আগ্রাবাদ ছোটপুলে। কর্নেলহাট এলাকায় ৯৭৮ বর্গফুট এবং ছোটপুলে ৯৫৩ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনতে ক্রেতাদের ব্যয় করতে হবে ৩৬ লাখ টাকা।
এয়ারবেল ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিসের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী মাসুদ আলম বলেন, ৯৫০-১, ৭০৬ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁদের ছয়টি প্রকল্পে। মেলায় বুকিং দিলেই ছাড় পাবেন ক্রেতারা।
আবাসন প্রতিষ্ঠান এপিক নগরের কালামিয়া বাজার এলাকায় ৫০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট দিচ্ছে ক্রেতাদের। সেখানে ১ হাজার ২৭৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট মিলবে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ফারজানা রুপা বলেন, মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে আটটি প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে।
মেলায় আগত নগরীর আগ্রাবাদের বাসিন্দা ও বেসরকারি একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, বুকিং ফ্ল্যাটে ঝামেলা। সময় লাগে অনেক। কাজ শেষ হয় না ঠিকমতো। তাই দরকার রেডি ফ্ল্যাট।
তিনি বলেন, একটি বাড়ি করার স্বপ্ন সবার থাকে। এজন্য কতকিছুই না যাচাই-বাছাই করি। তবু অনেক সময় সবকিছু ঠিকঠাক হয়না। কিন্তু এসব ঝামেলা ছাড়াই যদি তৈরি ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। তাহলে সব ঝামেলার অবসান হয়।
রিহ্যাবের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, উদ্বোধনী দিনে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। দর্শনার্থীও সেভাবে ছিল না। তবে আজ (শুক্রবার) দর্শনার্থীদের জন্য হাঁটা যাচ্ছে না মেলায়।
এদিকে, ক্রেতাদের আগ্রহকে কেন্দ্র করে আবাসন খাত দীর্ঘদিনের খরা থেকে বেরিয়ে আসবে বলেও মনে করেন রিহ্যাব নেতারা। এ ব্যাপারে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, শুক্রবার ছুটির দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি বেশি আশা করেছিলো ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের সে আশা পূরণ হয়েছে। শনিবারও বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীদের জন্য হাঁটা যাচ্ছে না মেলায়।
সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এনএম