আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
শেষ দিনে চট্টগ্রাম আবাসন মেলায় ঢল, ফ্ল্যাটে আগ্রহ প্রবাসীদেরও

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত চার দিনব্যাপী রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার ২০১৮ শেষ হচ্ছে আজ রোববার। শেষ দিনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গন। আজ লোক সমাগমের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ফ্ল্যাটও বিক্রি হচ্ছে অন্য তিন দিনের চেয়ে বেশি। এতে খুশি মেলা আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

প্রতিবারের মতো এবার মেলায় আগত দর্শনার্থীদের চাহিদা বেশি ছোট প্লট ও ফ্ল্যাটে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য হরেক রকম অফার দিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করছে আবাসন শিল্পে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আবাসন মেলায় শুধু প্লট বা ফ্ল্যাটই নয়, বাড়ি তৈরিতে ঋণ সুবিধা ও বাড়ি তৈরির অবকাঠামোগত নানা তথ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে স্টলগুলো থেকে। পছন্দের প্লট ক্রয় বা ফ্ল্যাট নির্মাণের বুকিং দেওয়ার সুযোগ রয়েছে মেলাতেই। আর মেলাতে বুকিং দিলেই মিলছে অর্থ ছাড়।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, ‘স্বপ্নীল আবাসন সবুজ দেশ, লাল সবুজের বাংলাদেশ’ এ স্লোগানে ৮-১১ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত আবাসন মেলায় এবার ৮৩টি স্টল রয়েছে। এই ফেয়ারে আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস সহ কয়েক লিংকেজ প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিতে পেরেছি। এই ফেয়ারে কো-স্পন্সর হিসাবে অংশগ্রহণ করছে ২১টি প্রতিষ্ঠান, সাধারণ স্টল ২১ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ১০টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭টি। সব মিলিয়ে অংশ নিচ্ছে ৫৯টি প্রতিষ্ঠান। ৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চার দিনব্যাপী এই ফেয়ার উদ্ধোধন করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব আবদুচ ছালাম।

এদিকে, এবার মেলায় রেডি ফ্ল্যাটের জন্য খোঁজখবর নিতে এসেছেন প্রবাসীরাও। মেলায় বিভিন্ন স্টলের ছাড় দেওয়ার কারণেও মেলায় এসেছেন দুবাই প্রবাসী মো. সালামত উল্লাহ। তিনি বলেন, আমি দুবাই থাকি। কিন্তু চট্টগ্রাম শহরে আবাসনের জন্য মানসম্মত একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার জন্য মেলায় আসলাম। কিন্তু ছাড় দেওয়া হলেও দামটা বেশি মনে হচ্ছে। বিভিন্ন স্টল ঘুরে ভেবেচিন্তে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার কথা ভাবছি। দামটা একটু নাগলের মধ্যে থাকলে প্রবাসী ক্রেতাদের জন্য সুবিধা হতো। পাশাপাশি প্রবাসীদের জন্য যদি সহজ শর্তে ঋণ নেওয়া যেত তবে আরও ভালো হতো।

সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো মেলা উপলক্ষে দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। কেউ দিচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়। এপিক প্রপার্টিজে ছাড় দিচ্ছে। এয়ারবেল প্রতি বর্গফুটের ওপর ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। আবার ইক্যুটি দিচ্ছে প্রতি বর্গফুটের দামের ওপর পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। মেলায় শুধু আবাসন প্রতিষ্ঠান নয়; এর সাথে বিভিন্ন ধরনের অফার ও তাদের সুযোগ-সুবিধা ক্রেতাদের জানাচ্ছেন ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় হাউস বিল্ডিং করপোরেশন, বেসরকারি আইপিডিসি, লংকাবাংলাসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

মেলায় সানমার স্টলের দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধিরা জানান, আমাদের অধিকাংশ ফ্ল্যাট প্রাথমিক অবস্থায় বুকিং হয়ে যায়। মেলায় আমরা এসেছি ক্রেতারা কী চাই, তাদের চাহিদা জানতে, পাশাপাশি আমাদের নির্মাণশৈলী এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে। ইক্যুটি স্টলের দায়িত্বে থাকা শ্যামল রায় বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন লোকেশনে আবাসিক ও বাণিজ্যিকসহ ১০টি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রতিটি লোকেশনের জন্য রয়েছে আলাদা রেট। তাই মেলা উপলক্ষে প্রতিটি লোকেশনের প্রতি বর্গফুটের রেটের ওপর দেওয়া হচ্ছে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়।

মেলায় ঘুরতে আসা সৌদি প্রবাসী নুরুল আমিন বলেন, গত বছর মেলা থেকে একটি ফ্ল্যাটের বুকিং দিয়েছিলাম। দাম কেমন ও সুযোগ-সুবিধা জানতে মেলায় এসেছি। এবার আমার ভাইয়ের জন্যও দেখতে এসেছি। ভালো লাগলে বুকিং দেব।

এ প্রসঙ্গে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের সিনিয়র বিজনেস এক্সিকিউটিভ রিয়াদ হোসেন বলেন, মেলা উপলক্ষে লংকাবাংলা ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ি নির্মাণ এবং ফ্ল্যাট কেনার জন্য লোন দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া সব প্রসেসিং ফি শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের জন্য ১০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

মেলা সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২৫০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও সেখানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ফ্ল্যাট বিক্রি করে আবাসন কোম্পানিগুলো। এবারের মেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার।

এদিকে, রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামের ক্রেতাদের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে তাঁরা মেলায় স্টল দিয়েছেন। প্রতিদিন অনেক ক্রেতা-দর্শনার্থী ফ্ল্যাটের খোঁজখবর নিচ্ছেন। চট্টগ্রামে তাঁদের কোনো আবাসন প্রকল্প নেই। ঢাকার মিরপুরে ‘বিজয় রাকিন সিটি’ প্রকল্পের ফ্ল্যাটের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরছেন স্টলের কর্মীরা। প্রায় ৫০ বিঘা জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে বিজয় রাকিন সিটি। খেলার মাঠ, বিদ্যালয়, ব্যায়ামের জায়গা, ক্লাব হাউসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই প্রকল্পে। এই প্রকল্পে ১৫ তলা করে ৩৬টি আবাসিক ভবনে ১ হাজার ৯৫০টি ফ্ল্যাট রয়েছে।

সৈকত বড়ুয়া বলেন, বিজয় রাকিন সিটির বেশির ভাগ ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেছে। ক্রেতাদের সাড়া পাওয়ায় এই প্রকল্পের পাশাপাশি কাঁচপুরে ১৫০ বিঘা জমিতে নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তাঁরা।

মেলায় আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন লিমিটেড প্লট ও ফ্ল্যাটের প্রকল্প নিয়ে এসেছে। এবারের মেলায় তারা ঢাকার ২৭টি অ্যাপার্টমেন্টের প্রকল্প ও মতিঝিলের কাছে ‘গ্রিন মডেল টাউন’ নামের প্লটের একটি প্রকল্পের প্রচারণা চালাচ্ছে।

ঢাকার প্রতিষ্ঠান কনকর্ড অবশ্য অনেক দিন ধরে চট্টগ্রামেও অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসায় রয়েছে। মেলায় প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের প্রকল্পগুলোর প্রচারণা চালাচ্ছে। চট্টগ্রামের উত্তর খুলশীতে ‘কনকর্ড আলপনা’ নামের অত্যাধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প তুলে ধরছে ক্রেতাদের কাছে।

র্যাংকস এফসি প্রপার্টিজ লিমিটেড মেলায় মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত শ্রেণির জন্য চট্টগ্রামে ফ্ল্যাট প্রকল্প নিয়ে এসেছে। গত এক বছরে প্রতিষ্ঠানটি তিনটি প্রকল্প হস্তান্তর করেছে। বর্তমানে দক্ষিণ খুলশী, কাতালগঞ্জ, মেহেদীবাগ, হালিশহর ও আগ্রাবাদে তাদের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ খুলশী এলাকায় বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের প্রকল্পের প্রচারণা চালাচ্ছে।

রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রিজিওনাল কমিটি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, এবারের সাড়া অন্যান্য যেকোন সময়ের তুলনায় বেশি। আবাসন ব্যবসা যে ইতিবাচক ধারায় ফিরছে এটা তারই প্রমাণ।

মেলা প্রসঙ্গে রিহ্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কনভেনার এএসএম আবদুল গাফফার মিয়াজি বলেন, বিগত সময়ে চট্টগ্রামে ১০টি ফেয়ার সফলভাবে সম্পন্ন করেছে রিহ্যাব। বিগত আয়োজনের ধারাবাহিকতায় এবারও একটি সফল ফেয়ার আমরা উপহার দিচ্ছি। আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে এই মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রিহ্যাব মেলায় সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মনের মতো ফ্ল্যাট বা প্লট খুঁজে নিতে ক্রেতাদের সাহায্য করবে। কয়েকটি ব্যাংকে সুদের হার কমে আসার কারণে এক অঙ্কে সুদে গৃহঋণ দিলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি। আমরা চাই সরকারে পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এ শিল্পের স্থবিরতার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি। বর্তমানে ১৬ শতাংশের ওপর নিবন্ধন ফি দিতে হয়। এটি কমিয়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার।

সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এমএন