
মন্দা কাটিয়ে আবারও দেশের আবাসন খাতে সুদিন ফিরছে। যার প্রত্যক্ষ প্রতিফলন ঘটেছে রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ারে। এবারের মেলায় ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো পাঁচশত কোটি টাকার। কিন্তু গত চারদিনে আমরা মেলায় ৩৬৩ কোটি টাকা অর্জন করতে পেরেছি। তবে প্রত্যেক আবাসন প্রতিষ্ঠানে মেলা চলাকালীন অফারগুলো আগামী সাতদিন পর্যন্ত বলবৎ রাখা হবে। আশা করি এই সময়ের মধ্যে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবো। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু’তে আয়োজিত চারদিনব্যাপী রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ারের শেষ দিন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন রিহ্যাবের ভাইস–প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনের চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী।
তিনি আরো বলেন, মেলার প্রথমদিন একজন রাজনৈতিক দলের প্রধানের রায়কে কেন্দ্র করে আমাদের ক্রেতা দর্শনার্থীর সংখ্যা কম ছিলো। তবে তারপর দিন থেকে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। চারদিনের এই মেলায় সর্বমোট ১১ হাজার ৩০০ ক্রেতা–দর্শনার্থী এসেছেন। যেটি দেশের আবাসন খাতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক দিক।
তিনি বলেন, অর্থ পাচার রোধে আমরা কোনো শর্ত ছাড়া আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশের অভাবে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এখন অনেকে মালয়েশিয়াকে ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে পছন্দ করছেন। মূলত অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে প্রশ্ন থাকার কারণে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরণের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। অপ্রদর্শিত আয়ে ফ্ল্যাট, প্লট কিনলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে অনেকের অর্থ থাকা সত্বেও বিনিয়োগে করছেন না।
আবদুল কৈয়ূম বলেন, আবাসন খাতের উন্নতির জন্য আমরা সরকারের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করা হলে এই দেশকে আরো এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করতে আমরা আবাসন ব্যবসায়ীরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে ‘সকলের জন্য বাসস্থান’ নিশ্চিতকল্পে রিহ্যাব সদস্যগণ অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম শহরকে বর্তমানে আরো সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে হাটহাজারী, আনোয়ারা, পটিয়াতে স্যাটেলাইট সিটি তৈরি করা যেতে পারে। এই কার্যক্রমে রিহ্যাব সদস্যদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বন্দর নগরীর আবাসন সমস্যা বহুলাংশে সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি আরো বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। সরকারের রাজস্ব আয়, দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান এবং রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ প্রায় ২৭০ প্রকার লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে নির্মাণ খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সাথে ৩৫ লাখ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের খাবারের যোগান দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দাবি, আবাসনে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে অবশ্যই হাউজিং লোন নামে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে হবে। ফ্ল্যাট কেনার সময় যাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগরিকেরা এ তহবিল থেকে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারে। আমরা আশা করি আগামী বাজেটে এর প্রতিফলন দেখতে পাবো।
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, গত ২০০৯ সালে ফ্ল্যাট ক্রেতাদের জন্য সরকারের ৭০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছিলো। এসব ঋণ শতভাগ পরিশোধও হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি–দেশের আবাসন শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ফ্ল্যাট ও প্লট রেজিস্ট্রেশন ব্যয়। সার্কভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় খুবই বেশী। এমনিতেই জমির মূল্য বাড়ছে। এর সাথে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বেড়ে যায়। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন ব্যয়ের এই উচ্চহারের ফলে ক্রেতারা ফ্ল্যাট কেনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় যেনো ৬ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের পরিচালক ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির কো–চেয়ারম্যান–১ মোহাম্মদ ওমর ফারুক, রিজিওনাল কমিটির কো–চেয়ারম্যান–২ ইঞ্জিনিয়ার দিদারুল হক চৌধুরী, রিজিওনাল কমিটির প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক এএসএম আবদুল গাফফার মিয়াজী, রিজিওনাল কমিটির সদস্য হাজী দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান, মো. কামাল উদ্দিন, মো. জাফর, হৃষিকেশ চৌধুরী, রিহ্যাব ফেয়ার আয়োজক কমিটির সদস্য মো. রেজাউল করিম, মহিউদ্দিন খসরু, মাহবুব সোবহান জালাল, আব্দুল মতিন চৌধুরী, মো. শফিক ও ইঞ্জিনিয়ার শেখ নিজামুদ্দিন।