আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
‘হলো ব্লক’ ইটের বিকল্প

পঞ্চগড়ে শহরের উপকণ্ঠে তালমা নদীর তীরে হাবিব অ্যান্ড সান ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরীামূলকভাবে উৎপাদন করছে টাইল্স ও হলো ব্লক। কাঁচামাল বালু আর পাথরের গুঁড়ার সাথে সিমেন্ট মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব আন্তর্জাতিক মানের এই টাইল্স ও হলো ব্লক।
শুরুতে স্বল্প পরিসরে হলেও আগামীতে আরো বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনে যাবে এই শিল্প কারখানা। এই প্রতিষ্ঠানে শিতি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রে প্রকাশ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বাড়ি তৈরিতে ইটের ব্যবহার বাড়ছে দ্রুত তালে। ইট তৈরিতে মাটির উপরিভাগ কেটে ফেলায় জমির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে। সেই সাথে ইট পোড়াতে হচ্ছে কাঠ-কয়লা দিয়ে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। অথচ ইটের পরিবর্তে হলো ব্লক দিয়ে ঘর তৈরি করলে খরচ পড়ে অনেক কম। আর এই ব্লক তৈরিতে পরিবেশের কোনো তি হয় না। পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে পাওয়া যায় প্রচুর বালু ও পাথর। বালু ও পাথরের গুঁড়ার সাথে সিমেন্ট মিশিয়ে তৈরি হয় পরিবেশবান্ধব হলো ব্লক। হাবিব অ্যান্ড সানের কর্মকর্তারা জানান, পাঁচটি ইটের সমান একটি হলো ব্লক। বাজারে প্রথম শ্রেণীর পাঁচটি ইটের মূল্য প্রায় ৫০ টাকা। অথচ একটি হলো ব্লকের মূল্য মাত্র ৩২ টাকা। এই ব্লক দিয়ে ঘর নির্মাণে সিমেন্টের খরচ ও মজুরি কম প্রয়োজন হয়। ব্লকের মাঝখানে ফাঁকা থাকায় বাইরের তাপ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। তাই গরমের সময় ঘর থাকে শীতল। হলো ব্লক দিয়ে তৈরী ঘর রঙ করার প্রয়োজন হয় না। তারা জানান, বর্তমানে আমাদের একটি মেশিন দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার হলো ব্লক তৈরি হচ্ছে। আরো মেশিন আসছে, যা স্থাপন করলে এখানে প্রতিদিন ৫০ হাজার হলো ব্লক তৈরি হবে।

হলো ব্লক ছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানে তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের টাইল্স। বিদ্যুৎ-গ্যাস না পুড়িয়ে স্থানীয় কাঁচামাল বালু, পাথরের গুঁড়ার সাথে সিমেন্ট ও রঙ মিশিয়ে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন টাইল্স তৈরি হচ্ছে এখানে। শুরুতে ম্যানুয়ালিভাবে তৈরি করা হলেও আগামীতে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে এখানে উৎপাদিত হবে আন্তর্জাতিক মানের টাইল্স। এখানে উৎপাদিত টাইলসের মান আন্তর্জাতিক মানের এবং দাম কম হওয়ায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে তা বিদেশেও রফতানি করা যাবে। চীন থেকে আনা একটি টাইল্স বাংলাদেশের বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। অথচ এখানে উৎপাদিত একই মানের টাইলসের মূল্য মাত্র ৪০ টাকা।

এ নিয়ে কথা বললে হাবিব অ্যান্ড সান ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, আমরা স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে হলো ব্লক ও টাইল্স উৎপাদন করছি। আমাদের কারখানায় বিদ্যুৎ বা গ্যাস ব্যবহার না করায় পরিবেশের কোনো তি হয় না। স্থানীয় সহজলভ্য কাঁচামাল এবং বিদুৎ-গ্যাস ব্যবহার না করায় আমাদের উৎপাদন খরচও পড়ছে কম। তাই একেবারে সুলভ মূল্যে আমরা আমাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছি। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের কারখানায় ৮০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। সম্পূর্ণ উৎপাদনে গেলে এখানে ৩০০ শ্রমিক কাজের সুযোগ পাবেন। শুধু হলো ব্লক আর টাইল্সই নয়; এখানকার সহজলভ্য কাঁচামাল ধান, গম ও ভুট্টার ডাঁটা দিয়ে আগুন নিরোধক রুফ টাইল্স তৈরির পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে পাশের দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানে বড় বাজার রয়েছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আমরা খুব সহজে উৎপাদিত টাইল্স, হলো ব্লকসহ অন্যান্য পণ্য এসব দেশে রফতানি করতে পারব।