আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
পরিকল্পনাবিদ ছাড়াই ‘পরিকল্পিত’ আবাসন!

প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব দেশবাসীর জন্য পরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিত করা। তাদের কাজ পরিকল্পিত নগরায়ন। অথচ এই প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো পরিকল্পনাবিদ। অন্য দপ্তরের পরিকল্পনাবিদদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৮ বছর ধরে এভাবেই চলছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।

ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, পরিকল্পনাবিদ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে পরিকল্পিত আবাসনের ব্যবস্থা করছে। তারা যে আবাসন ও নগর তৈরি করছে, সেগুলো ভবিষ্যতে জঞ্জালে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য এতদিনে প্রতিষ্ঠানটি বুঝতে পারছে যে, পরিকল্পনাবিদ ছাড়া তাদের আর চলছে না।

স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল গৃহসংস্থান অধিদপ্তর। ২০০০ সালে নাম পরিবর্তন করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ করা হয়। গৃহসংস্থান অধিদপ্তর নাম থাকার সময়েও কোনো পরিকল্পনাবিদের পদ ছিল না প্রতিষ্ঠানটিতে। ২০০০ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আইন ও প্রতিষ্ঠানটির জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) তৈরির সময়েও কোনো পরিকল্পনাবিদের পদ রাখা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির ৫২৯ জন স্থায়ী জনবলের মধ্যে কোনো পরিকল্পনাবিদ নেই।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আক্তারুজ্জামান বলেন, সংস্থাটির অর্গানোগ্রামে নগর পরিকল্পনাবিদ বা পরিকল্পনাবিদ বলে কোনো পদ নেই। যখন প্রয়োজন হয়, তখন স্থাপত্য অধিদপ্তর বা অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করানো হয়। তবে এখানে পরিকল্পনাবিদ পদ থাকা খুবই জরুরি। বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনাবিদের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান  বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে পরিকল্পনাবিদ না থাকার কথা তিনিও জানেন। এত জনবলের বেতন সরকার দিচ্ছে, অথচ যে প্রতিষ্ঠানে পরিকল্পনাবিদ থাকা বাঞ্ছনীয়, সেই প্রতিষ্ঠানেই কোনো পরিকল্পনাবিদ নেই। দু’জন পরিকল্পনাবিদের বেতন খুব বেশিও নয়। এ পদে প্রেষণে আমলাদের নিয়োগ দিয়ে বিপুল অর্থ গুনছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়ন করা প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনায় অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (প্রশাসন) মুশফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অর্গানোগ্রাম তৈরির প্রস্তুতি চলছে। সেখানে পরিকল্পনাবিদ হিসেবে দুটি পদ রাখার কথা রয়েছে। যারা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবান প্ল্যানিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করবেন, তারা এ পদে নিয়োগ পাবেন। কারণ এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনাবিদ ছাড়া চলে না।

জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটি মূলত কারিগরিভিত্তিক। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির কাজের মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা। তারা বিভিন্ন এলাকার পরিকল্পিত নগরায়ন ছাড়াও খাস জমি, সরকারি জমি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়া জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্ত। এখানে শীর্ষ পর্যায়ের ছয় কর্মকর্তার চারজনই আমলা। তারা প্রেষণে প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিযুক্ত। অন্য দু’জন পূর্ত বিভাগ থেকে প্রেষণে কর্মরত। দু’জনই পুরকৌশল বিষয়ের প্রকৌশলী (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার)।

দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পদ চেয়ারম্যান হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ পান একজন অতিরিক্ত সচিব। চারজন বোর্ড সদস্যের মধ্যে দু’জন যুগ্ম সচিব। প্রেষণে নিযুক্ত অন্য দু’জন পূর্ত বিভাগের ক্যাডারভুক্ত। সচিব পদটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন যুগ্ম সচিব প্রেষণে দায়িত্ব পালন করেন। পাঁচজন

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পদ আছে, যারা সবাই পুরকৌশল বিষয়ের। এ ছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী যারা আছেন, তাদের কেউই পরিকল্পনাবিদ নন। এ ছাড়া উপপরিচালক, আইন কর্মকর্তা, প্রোগ্রামার, আর্কিটেক্টসহ নানা পদ থাকলেও নেই কোনো পরিকল্পনাবিদ। সূত্র: সমকাল।