আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
ভোলায় নির্মিত হচ্ছে আরও ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টার

ভোলায় নতুন করে আরও ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মিত হচ্ছে। উপকূলীয় জেলার সাত উপজেলায় এসব সেল্টার নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। সাইক্লেন সেল্টার হলো ঝড়ের সময় অন্যতম প্রধান নিরাপদ স্থান। ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়ণ প্রকল্প’র মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর অধীনে এসব স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণে অর্থায়ন করছে বিশ্ব ব্যাংক। আগামী ২ মাসের মধ্যে এসব কাজের টেন্ডার পক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলোর নিচতলা ফাঁকা রেখে তৃতীয় তলা পর্যন্ত করা হবে। দুর্যোগকালীন সময়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ২ হাজার মানুষের ধারন ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ২ লাখ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। জেলা এলজিইডি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

এ বিষয়ে এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভোলা উপকূলীয় জেলা হওয়াতে এখানে সাইক্লোন সেল্টার অতি গুরুত্ব বহন করে। দুর্যোগের সময় এসব আশ্রয় কেন্দ্রই হয়ে উঠে সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল। প্রতিটি কেন্দ্র বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ সকল পক্রিয়া সম্পন্ন করে চূড়ান্তভাবে টেন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছে।

শাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, প্রতিটি সাইক্লোন সেল্টারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা করে। এছাড়াও জেলায় একই প্রকল্পের মাধ্যমে ২২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো ৪২টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। এসব সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ সম্পন্ন হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্যোর্গের আতঙ্ক অনেটাই কমে আসবে বলে মনে করেন এলজিইডি’র প্রধান এই কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, অত্যাধুনিক ডিজাইনের এসব সাইক্লোন সেল্টারে সরাসরি অসুস্থ রোগীকে র‌্যামের মাধ্যমে দোতালায় উঠানো, গরু-ছাগল রাখা, বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব সাইক্লোন সেল্টারে জলোচ্ছ্বাসের সময় পানি সহজে সরে যাওয়ার জন্য নিচতলা ফাঁকা রাখা হয়েছে। আর দুই তলা ও তিন তলায় অন্যন্য সময় যখন ঘূর্ণিঝড় থাকবে না তখন স্কুল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া দুর্যোগের সময় এখানে মানুষ, গবাদি প্রাণী, প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিস-পত্রসহ অবস্থান করতে পারবেন। সরকারের নতুন নতুন এসব আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনে দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরিতে সহায়তা করবে।

জেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’র উপ-পরিচালক মো: শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, নতুন করে ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ উপকূলবাসীর জন্য একটি ভালো খবর। জেলায় বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে চার শতাধিক সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। দুর্যোগ মুহুর্তে এসব কেন্দ্রে চার লাখেরও বেশি মানুষ অবস্থান করতে পারে। এসব শেল্টারের অবস্থাও বেশ ভালো। সরকারের নতুন করে ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ দিপাঞ্চলে দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় অনেক কাজ দেবে। তবে আমাদের চরাঞ্চলগুলোতে আরো সাইক্লেন সেল্টার নির্মাণ প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

শাহাবুদ্দিন মিয়া আরো জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষ আগের চেয়ে দিন দিন সচেতন হচ্ছে। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষ আগাম সতর্কতা সংকেত পাচ্ছে। এতে করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক কম হচ্ছে বর্তমানে।

জেলার মোট ৯৬টি সাইক্লোন সেল্টারের মধ্যে সদর উপজেলায় নির্মাণ হবে ১৭টি। এর মধ্যে শীবপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ৪৯ নং দক্ষিণ রতনপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে একটি স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করা হবে। আর এ খবরে উচ্ছসিত স্থানীয় জনসাধারণ। তারা বলছেন, এখানকার মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে হয়। সাইক্লেন সেল্টার হলো ঝড়ের সময় অন্যতম প্রধান নিরাপদ স্থান। তাই এখানে নতুন আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণকে সরকারের একটি সময়উপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তারা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, এ এলাকায় একটি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ স্থানীয়দের প্রাণের দাবি ছিলো। সরকার সে দাবি পূরণ করায় আমরা অনন্দিত। বিগত দিনে এখানে কোন আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। বিশেষ করে বর্ষার সময় স্কুলের নিচের অংশ পানিতে ডুবে থাকত। তাই এখন সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ হলে স্থানীয়রা দুরবস্থার হাত থেকে রক্ষা পাবে ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবিধা হবে।

এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, দুর্যোগের সময় সকল টিউবয়েল পানির নিচে তলিয়ে যায়। তাই সাইক্লোন সেল্টারগুলোতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সম্পাদনা: আরএ/আরবি/এনএম