আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
বরাদ্দে অনিয়ম: ফতুল্লায় বিসিকে ৩০ প্লটের ওপর নিষেধাজ্ঞা

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার শাসনগাঁয়ে অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীতে ৩০টি প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।  তিন দশক আগে উক্ত প্লটের জন্য ২৩ জন ব্যবসায়ী ব্যাংকে টাকা জমা দিলেও তাঁদের প্লট বুঝিয়ে দেয়নি বিসিক শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ওই প্লটগুলো চড়া দামে অন্যদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই ২৩ ব্যবসায়ী উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলে বিরোধপূর্ণ ৩০ প্লটে কোনো ধরনের কার্যক্রম চালানোর ওপর এক বছরের স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিরোধপূর্ণ প্লটগুলোতে আদালতের নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি শিল্প ইউনিটকে কেন্দ্রীভূত করে পুনর্বাসন ও নতুন কারখানা স্থাপনে ১৯৮৫ সালে মনোটাইপ শিল্পনগর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় সরকার। ১৯৮৮-৮৯ সালে বিসিক শিল্পনগরীতে ৩ কাঠা এবং ৫ কাঠা আয়তনের প্লট বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিসিক কর্তৃপক্ষ। পরে ১৯৯০ সালে বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পঞ্চবটীর শাসনগাঁও এলাকায় ৫৮ দশমিক ৫২ একর জায়গার ওপর বিসিক হোসিয়ারি শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। হোসিয়ারি শিল্পনগরীর ৭১৪টি ইউনিটের মধ্যে পাঁচ কাঠার ১৮৬টি বড় প্লট এবং তিন কাঠার ৫২৮টি ছোট প্লট রয়েছে।

এদিকে ১৯৮৮-৮৯ সালে বিসিক শিল্পনগরীর বিজ্ঞপ্তি দেখে ৩০টি প্লটের জন্য ২৩ জন ব্যবসায়ী বিসিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অর্থাৎ জনতা ব্যাংক এসটিডি-৭ সৈয়দ আলী চেম্বার শাখায় অর্থ জমা দিয়ে বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতির কাছ থেকে রশিদ গ্রহণ করেন। তবে দীর্ঘদিনেও তাদের ওই প্লটগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং বিরোধপূর্ণ ওই প্লটগুলো ২০১৬ সালের জুন মাসে বর্গফুট হিসেবে প্লট আকারে ১২ জন শিল্প মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয় বিসিক কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওই ২৩ ব্যবসায়ীর পক্ষে ওসমান গনি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ ওই ৩০টি প্লটে কোনো ধরনের কার্যক্রম না করতে ৬ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেন। এরপর চলতি বছরের গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি জাফর আহমেদ এর দ্বৈত বেঞ্চ আরও ১ বছরের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেন। এছাড়া, ওই ২৩ জন ব্যবসায়ী বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা (নং ৮৬৬/২০১৭) করেন। এদিকে, গতকাল বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ওই ৩০টি প্লটে নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন ওই ২৩ ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল বলেন, ২৩ জন ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এখনও উচ্চ আদালতের আদেশের কোনো কাগজ আমি পাইনি। তাঁরা নারায়ণগঞ্জ আদালতেও একটি মামলা করেছেন বলে শুনেছি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীর স্টেট অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্লট বুঝে পায়নি এমন ২৩ জন ব্যবসায়ী হাইকোর্টে রিট পিটিশন ও নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলা করেছেন। তৎকালে বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দের জন্য দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। তবে ওই ২৩ জন ব্যবসায়ী যথাযথ নিয়মে বিসিক শিল্পনগরীর বরাবরে আবেদন করেননি।

তাঁরা টাকা জমা দিয়েছিলেন হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের বরাবরে। তাঁরা বিসিকের কোনো অ্যাকাউন্টে টাকাও জমা দেননি এবং আবেদনও করেননি। এ জন্য তাঁরা প্লট বুঝে পাননি। এছাড়া, ওই সময় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে। কারো একার সিদ্ধান্তে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

সম্পাদনা: জেডএইচ/আরবি/এমএন