
কিছু দিন আগেই সংস্কারের দৌলতে শ্রীরামপুরের সন্ত ওলাফের ড্যানিশ গির্জা নতুন চেহারা পেয়েছে। ডেনমার্কের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় এই উদ্যোগ ইউনেস্কো-র তরফেও স্বীকৃতি কুড়িয়ে নিয়েছে। এবার ভারত-ফ্রান্স সংস্কৃতি সেতুর উৎসব বঁজ্যুর ইন্ডিয়া-র মঞ্চ থেকে চন্দননগরের ইন্দো-ফরাসি ইতিহাস রক্ষার ডাক উঠল। তবে এ যাত্রা দেশি-বিদেশি কোনও সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকা নয়। স্থানীয় নাগরিক সমাজ ও গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ইতিহাসপ্রেমী লোকজনের মধ্যে থেকেই ডিজিটাল পরিসরে আর্জি জানিয়ে টাকা উঠে আসবে বলে কলকাতায় ফ্রান্সের কনসাল জেনারেল দামিয়াঁ সিয়েদ জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার থেকে চন্দননগরে চলছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুর প্রশাসনের সহযোগিতায় চন্দননগর কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, নাগপুর বা ফ্রান্সের কনফ্লুয়েন্স মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞেরা মিলে চন্দননগরকে ঘিরে নানা উৎকর্ষের সম্ভাবনা জরিপ করবেন।
এই কাজের অন্যতম পুরোধা, স্থপতি ঐশ্বর্য টিপনিসের কথায়, স্মৃতি নিয়ে আদিখ্যেতা করছি না। অতীতকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচার রাস্তা খুঁজছি। যার হাত ধরে চন্দননগর থাকার বা বেড়ানোর একটা সজীব, সচল জায়গা হয়ে উঠবে।
যেমন, চন্দননগরে গঙ্গা সংলগ্ন স্ট্র্যান্ডের ‘ভূতের বাড়ি’ সাবেক রেজিস্ট্রি বিল্ডিং-কে সারিয়ে তুলেই কাজ শেষ হবে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বাড়িটা প্রাসঙ্গিক করে তোলাই চ্যালেঞ্জ। পুরনো স্মারকগুলিকে জনজীবনে কাজে লাগানোর পথ খুঁজতে স্থাপত্যবিদ্যা, ডিজাইন, সাহিত্য, ইতিহাসের ছাত্র ও বিশেষজ্ঞেরা মিলে একটি কর্মশালা করবেন। আড্ডার আসরে সামিল হবেন চন্দননগরের শ্রীধর দাসের মতো আলোকশিল্পী বা জলভরা-খ্যাত সূর্য মোদকের কর্তারা। ফরাসি কনস্যুলেট, ফরাসি সংস্কৃতিকেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল গোটা ২০ অনুষ্ঠান আয়োজন করলেও ভবিষ্যতের চন্দননগরের রূপরেখা ঠিক করার কাজটা সবার আলোচনাতেই উঠে আসবে।
গত আট বছর ধরে কয়েকটি ফরাসি সংস্থার সাহায্যে চন্দননগরে ইন্দো-ফরাসি ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত ১০০টি বাড়ি চিহ্নিত করেছেন ঐশ্বর্য টিপনিসরা। সেগুলির মধ্যে সাতটিকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দিয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। আরও কিছু বাড়িও পেতে পারে স্বীকৃতি। এর আগে ফরাসি সহযোগিতায় গড়ে ওঠা চন্দননগরের ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার (www.heritagechandernagore.com)-কেও এই প্রাচীন জনপদটির কথা ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা হবে।
বঁজ্যুর ইন্ডিয়া-র নানা অনুষ্ঠানে চন্দননগরকে ঘিরে গড়ে ওঠা ভাবনাচিন্তার ফসল গঙ্গার স্ট্র্যান্ডে এ দেশের ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দর জিগলার সামনে মেলে ধরা হবে। চন্দননগরকে ঘিরে নতুন করে শুরু ভারত ও ফ্রান্সের বন্ধুতার অধ্যায়!