
কক্সবাজারের প্রায় চার হাজার ৪০৯টি দরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে তাদের পুনর্বাসিত করা হবে। ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙ্গন এবং ভূমিধসের মত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের কারণে যারা বাড়ি-ঘর হারিয়েছেন, তারাই এ সুবিধা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. মোঃ নাজিবুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীনে ২০১৯ সালের মধ্যে কক্সবাজারে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য ১৩৯টি বহুতল ভবন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এতে আনুমানিক ব্যয় হবে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা। এসব বহুতল ভবন এবং ‘শেখ হাসিনা টাওয়ার’ নির্মাণের জন্য কক্সবাজার বিমানবন্দরের পাশে ২৫৩ দশমিক ৩৫ একর জমির উন্নয়ন কাজ চলছে বলে জানান আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গন থেকে প্রকল্প এলাকা রক্ষার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বাঁধ নির্মাণ করবে।
“আশ্রয়ণ প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর একটি। দরিদ্র ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আবাসনসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো- গৃহহীন, ভূমিহীন এবং আশ্রয়হীন দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে সুদ-মুক্ত ঋণ দিয়ে এবং বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য স¤পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজস্ব আয়ের পথ তৈরি করে দেয়া। যাতে তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে।
নজিবুর রহমান বলেন, রূপকল্প- ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এ প্রকল্পের কর্মকান্ড ভবিষ্যতে আরো জোরদার করা হবে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম শামসুদ্দিন বলেন, নদী ভাঙ্গন থেকে প্রকল্প এলাকা রক্ষার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বাঁধ নির্মাণ করবে।
আবুল কালাম আরো বলেন, প্রকল্পের জন্য ২৫৩ দশমিক ৩৫ একর জমির ডিজিটাল জরিপ এবং ৪৪ একর জমির উন্নয়ন ইতিমধ্যেই স¤পন্ন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো ২১২ একর জমির উন্নয়নে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস) এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডা. আতিক রহমান বলেন, জাতীয় অভিযোজন কর্মসূচি (এনএপিএ), জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনাসহ (বিসিসিএসএপি) জলবায়ু কার্যক্রমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্যেগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
ডা. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়ের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নেতৃত্বে রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড়ে গৃৃহহীনদের অধিকাংশ পরিবারই নতুন প্রকল্পে আশ্রয় পাবে। এরা বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরের পাশে একটি বস্তিতে বাস করছে। আশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবারগুলো শুঁটকি মাছের ব্যবসা করার সুযোগ পাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জেলার শুঁটকি মাছ উৎপাদক এম জাহেদুল ইসলাম ফারহাদ বলেন, শুঁটকি মাছের ব্যবসার উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ এ অঞ্চলে প্রথাগত শুঁটকি মাছ ব্যবসার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালে প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যেগ গ্রহণ করে। ২০১৯ সালের মধ্যে প্রায় ২.৫০ লক্ষ গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ২০১০ সালে ৪ হাজার ৮৪০কোটি ২৮লাখ টাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে তিনটি পর্যায়ে এ পর্যন্ত মোট ১,৭৫,৪৮৩ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ঘরবাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
সম্পাদনা: জেডএইচ/আসচৌ/এমজে