
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মিত হচ্ছে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহুল কাঙ্খিত ‘রাজস্ব ভবন’। কিন্তু আমলাতন্ত্রের গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে এ ভবনের নির্মাণ কাজ। মূলত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক প্রশাসনের অপরিণামদর্শী একটি সিদ্ধান্তের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কর বিভাগের নামে বরাদ্দ পাওয়া দুই একর (প্লট নম্বর এফ-১ এ) জমিতে ভবনটি নির্মাণে ব্যায় হবে ৪৯৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পের শুরুতে ২০তলা ভিত্তির ওপর ১২তলা ভবন নির্মাণের কথা ছিল। পরে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন ছাড়াই ৩০তলা ভিত্তির ওপর ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সেখান থেকেই শুরু হয় বিপত্তি। এরপর ২ দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
শুক্রবার সরেজমিনে রাজস্ব ভবন ঘুরে দেখা গেছে, ভবনটির ৮তলা পর্যন্ত ছাদের কাজ শেষ হয়েছে। সাইডের দেয়াল করা হয়নি। বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে। ভবনের রক্ষণাবেক্ষণে কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, সর্বপ্রথম ১৯৯২ সালের ২০ এপ্রিল আয়কর অনুবিভাগের অনুকূলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তিন একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কাজ শুরু করতে না পারায় জায়গাটিতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট করা হয়। পরে ২০০১ সালের ৩ জুলাই পুনরায় কর বিভাগের নামে দুই একরের (প্লট নম্বর এফ-১ এ) জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই জমিতে রাজস্ব ভবন নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে।
২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এর আওতায় ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজধানীর আগারগাঁও ২০তলা ভিত্তির ওপর ১২তলা ভবন নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু শুরুতেই বাধে বিপত্তি। জমি অধিগ্রহণ ও দখল সংক্রান্ত জটিলতায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হয়। এ নিয়ে শুরু হয় আইনি লড়াই। শেষ পর্যন্ত আদালতে নির্দেশে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ জমির পূর্ণ দখলস্বত্ব নেয় এনবিআর। এরপর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। জিবি বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শোর পাইলিংয়ের মধ্যখানেই কাজ ছেড়ে দেয়। পরে আরেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সকে কাজ দেয়া হয়।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে এনবিআরের তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০তলার বদলে ৪০তলা ভবন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আহ্বান করেন। ওই সভায় ৩০তলা ভবন নির্মাণে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। অদূর ভবিষ্যতে শেরেবাংলা নগরের প্রশাসনিক এলাকায় বেবিচকের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে- এমন অপরিণামদর্শী কল্পনাপ্রসূত চিন্তা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেটি পরে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে এনবিআর আরডিপিপিতেও উল্লেখ করে। যদিও এ সিদ্ধান্তের পেছনে সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এরপর সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়। অথচ নিয়ম অনুযায়ী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়নি। এ নিয়ে সরকারি দুই সংস্থার মধ্যেই মনোমানিল্য সৃষ্টি হয়।
সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় এনবিআর ভবনের সংশোধিত ব্যয় অনুমোদন করা হয়। অনুমোদিত ব্যয় ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা থেকে ৩৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০তলা না করে ১২তলা ভবন করতে হবে। কেননা, বিমানবন্দর কাছাকাছি রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৩০তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা হয়। যেখানে স্থাপত্য অধিদপ্তর, পরিকল্পনা কমিশন ও আইএমইডির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সে সময় এ বিষয়ে কেউ আপত্তি জানায়নি। তবে সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে সেটিকে তারা শৃঙ্খলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করে।
তিনি আরও বলেন, একনেকে অনুমোদিত সংশোধিত প্রকল্পের কার্যবিবরণী না পাওয়ায় নতুন টেন্ডার আহ্বান করা যাচ্ছে না। আগের ঠিকাদার জিকে বিল্ডার্সের চুক্তি শেষ হয়েছে। তাই সর্বপ্রথম নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হবে। এটি করতে প্রায় ৩ মাস সময় লাগবে। এরপর পুরোদমে কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হবে। শুরু হবে সাজসজ্জার কাজ। আশা করা যায়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে। তথ্যসূত্র : যুগান্তর।