আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
হঠাৎ রডের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক

দেশে হঠাৎ অস্বাভাবিক রডের দাম বেড়েছে। জানা গেছে, মাত্র দুই মাসেই রডের দাম বেড়েছে ৬ হাজার টাকা। আর গত বছর জুন থেকে এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত এই ৮ মাসে দাম বেড়েছে ১৫ হাজার টাকা। যদিও মার্কিন ডলারের দাম ও রড তৈরির কাঁচামালে খরচ ৩ শতাংশ বেড়েছে। এই অজুহাতে ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর অভিযোগ ভৌত অবকাঠামো ও আবাসন নির্মাণ শিল্প জড়িত ব্যবসায়ীদের।

তবে রড প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

এ প্রসঙ্গে কনস্ট্রাকশন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মালিকদের সংগঠন বিএসিআই সভাপতি প্রকৌশলী মুনীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাত্র এই দুই মাসে ৬ হাজার টাকা বাড়িয়ে প্রতি টন রড বিক্রি করা হচ্ছে ৫৯ হাজার টাকা। এর আগে ২০১৭ সালের জুনে রডের দাম একলাফে ৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৪৫ থেকে ৫৩ হাজার টাকা করা হয়। অর্থাৎ, মাত্র ৮ মাসে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত রডের দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। যদিও ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত কাঁচামালের দাম বেড়েছে।

তার দাবি, নির্বাচন সামনে রেখে উন্নয়ন প্রকল্প যখন সরকার দ্রুত শেষ করতে চায়, তখনই বাড়ানো হয়েছে রডের দাম।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী তানভিরুল হক প্রবাল বলেন, এখন প্রায় ৬০ হাজার টাকায় প্রতি টন রড কিনতে হচ্ছে। মাত্র ৮ মাসে প্রতি টন রডে ১৫ হাজার টাকা বাড়ালে, প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। ফলে এক বর্গফুট ফ্ল্যাটে ৫ কেজি রড ব্যবহার করায় এখন বাড়তি খরচ হচ্ছে ৭৫ টাকা। সে হিসাবে এক হাজার বর্গফুটের একটি ছোট ফ্ল্যাট নির্মাণে খরচ ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে আবাসন ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবাসন শিল্পে ব্যবহৃত অন্যান্য উপকরণের দামও বাড়ছে।

দেশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এমএস রড ও ইস্পাত সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেউলিয়া হওয়ার সম্মুখীন।

১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এমন অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই)। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বলেছেন অর্থমন্ত্রী।

বিএসিআই সভাপতি প্রকৌশলী মুনীর উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত পত্রে বলা হয়, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামোসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়ক হিসেবে বিএসিআই সদস্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করে আসছে। অতি সম্প্রতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন যে, হঠাৎ করে দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের মূল উপাদান এমএস রডের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরও বৃদ্ধির প্রবণতা এখনো অব্যাহত আছে। ফলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের গতি মন্থর হয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই দুই মাসে রডের মূল্য প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেসব কারণ উল্লেখ করছে, তার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে বিলেট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। এই কারণ দেখিয়ে ইস্পাত সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩ থেকে ৪টি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ও নিজেদের মধ্যে যোগসাজশে এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রডের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে চলছে। প্রকৃতপক্ষে বিলেট দেশেই তৈরি করা হয়। আর খুব নগণ্য পরিমাণ বিলেট আমদানি হয়। বিলেটের কাঁচামালের দাম ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য, যা সামগ্রিকভাবে রডের মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে রডের মূল্য ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি অযৌক্তিক এবং অনৈতিক বলে মনে করছে অবকঠামো নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্তমানে দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান রড প্রস্তুত করছে এবং দেশি চাহিদা মেটাচ্ছে। চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। নতুন করে কোনো শুল্ককরও বৃদ্ধি করা হয়নি। ফলে রডের মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে মনে করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বৃহৎ ৩ থেকে ৪টি প্রতিষ্ঠান রড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অতীতেও কয়েক দফা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করেছিল। কিন্তু সময়মতো সবার হস্তক্ষেপের কারণে সিন্ডিকেট বেশি দিন টিকতে পারেনি। এবার আগামী নির্বাচনে সরকারের ভাবমূর্তি ও জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করেছে বলে অবকাঠামো নির্মাণে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা মনে করছে।

ওই পত্রে আরও বলা হয়, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প, বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর গুণগতমান বজায় রেখে দ্রুত সম্পাদনের জন্য বদ্ধপরিকর। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনতিবিলম্বে রোধ করা না হলে- এক. সরকারের নির্মাণ প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়বে। দুই. বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপির বাস্তব অগ্রগতি অর্জিত হবে না। তিন. সরকারের গৃহীত ‘ভিশন-২০২১’ও বিঘ্নিত হবে। চার. ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে যাবে। যে কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্ঘলা বিঘ্নিত হবে এবং দেশে কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে। এমন অবস্থায় বাস্তবতার আলোকে রডের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা রুখে মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিএসিআই।

তবে রড প্রস্তুতকারক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাহবুবুর রশীদ জুয়েল বলেন, সাম্প্রতিককালে রডের দাম বাড়েনি। ক্রমান্বয়ে একটু একটু করে বেড়েছে। কারণ সাম্প্রতিককালে কাঁচামালের দাম বাড়ছে। দেশিভাবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কাঁচামাল পাওয়া গেলেও, বাকিটা আমদানি করতে হয়। উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তাই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই দাম বাড়ানো হয়েছে, আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।