আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
৬০০ রেল স্টেশনে আবাসন প্রকল্প গড়ার ভাবনা শুরু

বাড়ি হবে একেবারে রেল স্টেশনের গায়েই৷ সেই আবাসন তৈরি করবে রেলই৷ আবাসনে ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন যে কেউই৷ রেলের কর্মী না হয়েও আপনার ঠিকানা হতেই পারে স্টেশন সংলগ্ন কোনও রেল কলোনিতে৷ ভারতীয় রেলের নয়া স্টেশন উন্নয়ন প্রকল্পে গোটা দেশে ৬০০টি স্টেশন -সংলগ্ন রেলের জমিতে আবাসন গড়ার ভাবনা শুরু হয়েছে৷

প্রাথমিকভাবে যে -সব স্টেশনকে বলে বেছে নেওয়া হয়েছে , তার মধ্যে হাওড়া, শিয়ালদহও রয়েছে৷ দুই স্টেশনেই প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া এলাকা ছাড়াও আশপাশে রেলের প্রচুর জমি রয়েছে৷ যার বেশির ভাগ জমিতে গুদাম , মালপত্র আনা -নেওয়ার অফিস, ভগ্নপ্রায় কোয়াটার্স রয়েছে৷ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত স্টেশনগুলোর বাণিজ্যিকীকরণে বেশ কিছু দিন ধরেই ভাবনা -চিন্তা করছে ভারতীয় রেল৷ এই পরিকল্পনা মতোই বিভিন্ন স্টেশন
কমপ্লেক্সে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর , শপিং মল , ফুড প্লাজা ইত্যাদি তৈরি করে উত্সাহী ক্রেতাদের টেনে আনার কথা ভাবা হয়েছিল৷ এক -একটি স্টেশনকে ৪৫ বছরের লিজে ব্যক্তিগত মালিকানায় তুলে দিয়ে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে ভাড়া আদায় করে রেলকে অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করাই ছিল এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য৷

কিন্তু , ‘মাত্র ’ ৪৫ বছরের জন্য স্টেশন লিজ নেওয়াকে লাভজনক বলে মনে করেনি অনেক ব্যবসায়ী সংগঠনই৷ প্রথম দফায় যে ২৩টি স্টেশনকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল , তার অনেকগুলিতেই নতুন কিছু করায় উত্সাহী হননি ব্যবসায়ীরা৷

ভারতীয় রেল -সূত্রে জানা গিয়েছে , ব্যবসায়ীদের কাছে স্টেশন উন্নয়ন প্রকল্প জনপ্রিয় করতে আগের প্রস্তাবগুলোকে আরও নমনীয় করার ভাবনাচিন্তাও চলছে৷ ৪৫ বছর লিজের সময়সীমা বাড়িয়ে ৯৯ বছর করা এবং ব্যস্ত স্টেশনগুলোর পাশে রেলের জমির ২০ শতাংশে সর্বসাধারণের জন্য আবাসন তৈরি সেই ‘নমনীয়তা ’রই নজির৷

তবে, রেলের জমিতে আবাসন তৈরি প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে স্টেশনস ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের (আইআরএসডিসি ) চেয়ারম্যান সঞ্জীবকুমার লোহিয়া জানিয়েছেন, এই আবাসন একেবাসে
সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হবে৷

ছোট ও মাঝারি-দু’ধরনের ঘর তৈরি হবে৷ আইআরএসডিসি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে , কেউ যেন এমন না মনে করেন যে রেলের জমিতে বিলাসবহুল বাংলো গড়ে তা বিক্রি করা হবে উচ্চবিত্তদের কাছে৷ পরিকল্পনার অন্যতম আকর্ষণ আবাসনে সর্বসাধারণের অধিকার৷ এত দিন রেল কলোনির বাসিন্দা হতে গেলে পরিবারের অন্তত এক জনকে রেলকর্মী হতেই হত৷

সেই অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসে রেলকর্মী নন, এমন ব্যক্তিদেরও এই ‘রেল কলোনিতে’ ফ্ল্যাট কেনার অধিকার দেওয়া হচ্ছে৷ আশা করা হচ্ছে, এর ফলে স্টেশন উন্নয়নের পরিকল্পনা আশাতীত সাফল্য পাবে৷

আইআরএসডিসি জানিয়েছে, দেশের ৬০০টি স্টেশনে আবাসন তৈরির যে পরিকল্পনা প্রাথমিক ভাবে হয়েছে, তাতে আনুমানিক খরচ হবে এক লক্ষ কোটি টাকা৷ এই আবাসন সেই ধরনের মানুষের কথা মাথায় রেখে, যাঁরা
যাতায়াতের জন্য গণপরিবহণের উপর নির্ভরশীল৷ বাড়ির কাছেই যাতে তাঁরা রেলস্টেশন এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাসস্ট্যান্ডও পান , সে কথা ভেবেই এই পরিকল্পনা৷

রেলবোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে , প্রথম দফায় ১৩০টি স্টেশনকে এ জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে৷

কোন কোন স্টেশন , সেই সম্পর্কে এখনও রেলের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে অবশ্য কিছু জানানো হয়নি৷ তবে এই রাজ্যের সবচেয়ে ব্যস্ত দু’টি স্টেশন –হাওড়া ও শিয়ালদহ তালিকায় রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে৷

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রের বক্তব্য , ‘স্টেশনে আবাসন নির্মাণ নিয়ে বৈঠকটি একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনা৷ এখনও আমার কাছে পুরো তালিকা আসেনি৷ তবে, হাওড়া ও শিয়ালদহের নাম আছে বলেই শুনেছি৷

পূর্ব রেলের একাধিক আধিকারিক জানিয়েছেন , হাওড়া ও শিয়ালদহের মতো অবস্থানগত সুবিধা গোটা দেশে খুব কম স্টেশনেই রয়েছে৷ এই দুই স্টেশনকে কেন্দ্র করে বিরাট বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে৷ সেই সঙ্গেই অবশ্য এই পরিকল্পনা ভবিষ্যতের বেসরকারিকরণ উদ্যোগের সলতে পাকানো বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ সাধারণ মানুষ আদৌ আবাসন পাবেন কিনা , সে নিয়েও সংশয় রয়েছে অনেকের মধ্যে৷ বাণিজ্যিকীকরণে নয়া
উদ্যোগস্টেশনে আবাসন নির্মাণ নিয়ে বৈঠকটি একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনা৷ এখনও আমার কাছে পুরো তালিকা আসেনি৷ তবে, হাওড়া ও শিয়ালদহের নাম আছে বলেই শুনেছি৷