আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
চন্দ্রিমার ২১ প্লট কেলেঙ্কারি মামলার পুনঃতদন্ত দাবি

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া সত্ত্বেও প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন কয়েকজন। তাঁরা হলেন- আরডিএ’র সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও বেসরকারি সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ক্ষতিগ্রস্ত সেজে কমপেনসেটরি জোনে মাত্র ৫৫ হাজার টাকা কাঠা দরে ২১টি প্লট বাগিয়ে নেন তাঁরা। এভাবে প্লট হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি দুর্নীতি মামলা পুনঃতদন্তের আবেদন করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ২০১১ সালে দুদক দুটি মামলা করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় প্লট কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুটি মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন এসেছে। মামলা দুটি পুনঃতদন্তে আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনে ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করেন, আরডিএ’র সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও বেসরকারি সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত সেজে কমপেনসেটরি জোনে মাত্র ৫৫ হাজার টাকা কাঠা দরে ২১টি প্লট বাগিয়ে নেন। ২০১১ সালে দুদক দুটি মামলা করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে দুটি মামলা থেকেই অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেন। ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের আবেদনে আরও বলেন, নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে অভিযুক্তরা প্লটগুলো বরাদ্দ নেন। পরে চড়া দামে বিক্রি করে দেন। তাই মামলা দুটি পুনঃতদন্তের আবেদন করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, চন্দ্রিমায় ২০০১ সালে প্লট বরাদ্দ শুরু হয়। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিকদের জন্য ৮৯টি প্লট বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে ৭১টি প্লট ক্ষতিগ্রস্তদের নামে ৫৫ হাজার টাকা কাঠা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথম দফায় বাকি ১৮টি প্লট সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান (যুগ্ম সচিব), সাবেক প্রধান হিসাব উপদেষ্টা আবদুর রব জোয়ার্দ্দার, সাবেক এস্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক, সাবেক বেসরকারি সদস্য শীষ মোহাম্মদ, শামসুল হক, রেজাউন নবী দুদু, আলী হায়দার রানাসহ সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত সেজে ১৮টি প্লট নিয়ে নেন। ওই সময় সাধারণের জন্য প্রতি কাঠার দাম ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্লটগ্রহীতারা ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিগ্রস্ত সেজে প্লট নিতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ফাঁকি দেন। দ্বিতীয় দফায় আরডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদারের আমলেও একই কৌশলে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় তিনটি প্লট বরাদ্দ নেন এই সাবেক চেয়ারম্যান ও অপর দুই বেসরকারি সদস্য। বরাদ্দ নিয়েই সেগুলো চড়া মূল্যে বেচে দেন।

জানা যায়, প্রসপেক্টাসের শর্তানুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় প্লটের আবেদনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে এবং যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, শুধু তারাই এ কোটায় আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা প্রসপেক্টাস ক্রয় করেননি, ব্যাংক ড্রাফট বা জামানতও জমা দেননি। শুধু সাদা কাগজে আবেদন করে প্লট নিয়ে নেন।

অন্যদিকে, প্রসপেক্টাসের ৬নং শর্তানুযায়ী প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের এ মর্মে হলফনামা দিতে হয় যে তাদের নিজ নামে বা স্ত্রী ও ছেলে মেয়ের নামে রাজশাহীসহ দেশের বড় শহরগুলোয় বসবাসের জন্য কোনো বাড়িঘর বা জমি নেই। কিন্তু আরডিএ’র সাবেক দুই চেয়ারম্যান, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বেসরকারি সদস্যরা প্লট নেওয়ার সময় এ ধরনের কোনো হফলনামা দেননি। তারা তথ্য গোপন করে প্লট বরাদ্দ নিয়ে সরকারের ২০ লাখ ৮৬ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তরা দুর্নীতি পুনঃতদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার কামনা চেয়েছেন।