আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
সুদের হার বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আবাসন খাতের গ্রহীতারা

তারল্য সংকটের প্রভাব পড়ছে পুরো আর্থিক খাতে। এ কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশের মুদ্রাবাজার, শেয়ারবাজার এবং আবাসন খাত। এতে ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেটের দ্বারস্থ হচ্ছে। ইতোমধ্যে কলমানি রেট বেড়ে গেছে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে আমানতের সুদের হার, যার আঁচ আবাসন খাতেও লেগেছে।
বিভিন্ন ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, তারল্য সংকটে আমানতের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে তাদেরও সুদের হার বাড়াতে হচ্ছে। গত ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবাসন ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট থাকলেও তা বর্তমানে ডাবল ডিজিটে পৌঁছে গেছে। গত ডিসেম্বর মাসে ডিবিএইসের সুদহার সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাশেংর মধ্যে ছিল; বর্তমানে তা ১৩ দশমকি ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমানে এসআইবিএলের এই হার ১৪ শতাংশ, ফারমার্স ব্যাংকে ১৫ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকে ১২ শতাংশ, এবি ব্যাংকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।
জানা গেছে, সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন গ্রাহক। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্র জানিয়েছে, সুদের হার বৃদ্ধিতে অনেক গ্রাহক চিন্তিত। কেউ কেউ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, ২০১০ সালে দেশের শেয়ারবাজারে মন্দার পর থেকে আবাসন ব্যবসায়ও নেতিবাচক প্রভাবের শুরু। এর আগে শেয়ার ব্যবসা ও দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা থাকায় আবাসন খাতও ছিল চাঙ্গা। শেয়ারবাজারে ধস নামার পর মানুষের হাতে নগদ অর্থপ্রবাহও কমে যায়। সেই থেকে আবাসন খাতে জেঁকে বসেছে মন্দাভাব, যা এখনো চলছে। এ ছাড়া ২০১২ সাল থেকে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। এখনো রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজমান। এ কারণেও ফ্ল্যাটের ক্রেতা কমে গেছে। এমনকি যেসব ক্রেতা বুকিং দিয়েছেন, তারাও অবশিষ্ট অর্থ শোধ করে ফ্ল্যাট বুঝে নিচ্ছেন না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট। বিদ্যুৎ সংযোগ সীমিত আকারে দেওয়া হলেও নতুন করে গ্যাসের সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার পরও রেজিস্ট্রি করছেন না।
এ বিষয়ে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (এইচবিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, মুদ্রাবাজারে তারল্য সংকটে সুদহার বেড়েছে। এটি চাহিদার ওপর নির্ভর করে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুদের হার বেড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাহক। তবে তিনি বলেন, এইচবিএফসির সুদহারে পরিবর্তন করা হবে না। কারণ আমাদের ফান্ড আসে সরকারিভাবে।
এ বিষয়ে ডিবিএর সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ২০১৭ সালে ব্যাংক ঋণে সুদের হার ছিল ৫-৬ শতাংশ, আর লেন্ডিং রেট ছিল ৯-১১ শতাংশ। ব্যাংকে লাখো কোটি টাকা অলস ছিল। তারল্য সংকট মেটাতে ব্যাংক নতুন করে ফান্ডের পেছনে দৌড়াচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে আগ্রাসী আমানত সংগ্রহে নামতে হচ্ছে। এতে সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাহক। এপ্রিলে আসছে আইডিবির ৮৬৫ কোটি টাকার ফান্ড
আগামী এপ্রিলের মধ্যে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (এইচবিএফসি) আইডিবির ফান্ড পাচ্ছে। ইতোমধ্যে আইডিবির সঙ্গে ঋণ চুক্তি হয়েছে, যা আগামী ২০ বছরে পরিশোধ করা যাবে। এ বিষয়ে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (এইচবিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেবাশীষ চক্রবর্তী আমাদের সময়কে বলেন, আগামী ৪ এপ্রিল ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, পল্লীর জনগণের জন্য বিশেষ আবাসন ঋণ কর্মসূচি নিয়েছে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন। কৃষিজমি রক্ষা করে গ্রামীণ আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে হাউস বিল্ডিং করপোরেশন বাংলাদেশ পল্লী ও উপশহর আবাসনে অর্থায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮৫৬। দেশের শহরতলি ও পল্লী এলাকায় ১ হাজার ৪৬টি বহুতল আবসিক ভবন নির্মাণ করা হবে, যাতে আবাসিক ইউনিট থাকবে ৭ হাজার ৯৭৬টি। পল্লী এলাকার জনগণ এখান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারবেন। এ ছাড়া গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থানও হবে।
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া বলেন, সুদের হার বৃদ্ধিতে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর উত্তরণে আবাসন খাতের জন্য আলাদা ফান্ড করার পরামর্শ দেন তিনি।