আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা >> অমিত সম্ভাবনা অব্যবহৃত কেন?

ঢাকায় সূচিত তিন দিনব্যাপী পর্যটন মেলাটি ‘আন্তর্জাতিক’ হলেও এতে যে ‘অভ্যন্তরীণ পর্যটনে মানুষকে উৎসাহিত’ করার কথা বলা হচ্ছে, আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাই। মেলায় নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকার অংশগ্রহণ কেবল আমাদের দেশের পর্যটকদের বিদেশ গমন বাড়াবে না, তাদের নাগরিকদেরও গন্তব্য হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। বস্তুত রূপসী বাংলায় পর্যটনের যে অমিত সম্ভাবনা ছড়িয়ে রয়েছে, এর বহুলাংশ বিদেশি পর্যটকদের কাছে অনুন্মোচিত থাকে নিছক প্রচারের অভাবে। এই পর্যটন মেলা সেই সুযোগ তৈরি করবে বলে আমরা আশা করি। আমরা জানি, সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কতটা সমৃদ্ধ। এর বৈচিত্র্যও বিপুল। একদিকে যেমন রয়েছে অবারিত সমুদ্রসৈকত, অন্যদিকে রয়েছে নিবিড় ও গাঢ় সবুজ পার্বত্যাঞ্চল। রয়েছে সুন্দরবন, হাওরাঞ্চল। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদী, গ্রাম ও মাঠের দেশজোড়া সবুজ গালিচাও কম কিসে? তার পরও এখানে পর্যটন শিল্পের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ না হওয়ার কারণ মূলত প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা। অস্বীকার করা যাবে না যে, আধুনিক পর্যটন বলতে যা বোঝায়, বাংলাদেশে তার প্রসার অনেককালই আশাব্যঞ্জক ছিল না। আশার কথা, গত দেড় দশকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চল, বঙ্গোপসাগর সৈকত এবং সুন্দরবনে পর্যটন ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রায় হাজার বিলিয়ন ডলারের এ শিল্পের সম্ভাবনাকে নিজেদের কাজে লাগাতে হলে কেবল পর্যটন স্পট চিহ্নিত নয়; করতে হবে আরও অনেক কিছু। বিশেষ করে আবাসন ও বিনোদন সুবিধার প্রতি নজর দিতেই হবে। কক্সবাজারকে আমরা ‘বিশ্বের দীর্ঘতম’ প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত হিসেবে দাবি করার পাশাপাশি সেখানকার যোগাযোগ ও আবাসন ব্যবস্থাও বিশ্বমানের করে তুলতে হবে। বাংলাদেশের আরেক সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় যোগাযোগ ও আবাসন ব্যবস্থা আরও নাজুক। এর ওপর দুই সমুদ্রসৈকতেই রয়েছে দখলদারিত্ব ও অপরিকল্পিত নগরায়ন। বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের পর্যটন সুবিধাও তথৈবচ। সিলেট ও চট্টগ্রামের মনোরম পাহাড়ি অঞ্চল অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের জন্য চলনসই হলেও বিদেশি পর্যটকদের জন্য কতটা উপযোগী, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পর্যটন ক্ষেত্রগুলোর নিরাপত্তার দিকেও নজর দিতে হবে। দুর্যোগ ও দুর্বৃত্তের কবল হতে রক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে পর্যটক আসবেন কেন? একই সঙ্গে আরও কিছু পর্যটন স্পট চিহ্নিত করার দিকেও মনোযোগের দাবি জানাই আমরা। পানিপ্রধান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলো এ ক্ষেত্রে হতে পারে আকর্ষণীয় কেন্দ্র। যমুনা ও পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে দু-একটি পর্যটন কেন্দ্র যদিও গড়ে উঠেছে, খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের ছায়াঢাকা হিজল-করচ-বরুণ শোভিত ও অতিথি পাখি মুখর হাওরাঞ্চল রয়েছে একেবারেই অনুন্মোচিত। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অভাব নেই; প্রয়োজন এগুলোকে পর্যটন উপযোগী করে তোলা। পর্যটন মেলার মতো আয়োজনের পাশাপাশি সেদিকেও নজর দিতেই হবে। পর্যটনের অমিত সম্ভাবনা আর কতদিন অব্যবহূত থেকে যাবে?