আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
নির্দেশনা বাস্তবায়ন করুক রাজউক

যেকোনো সভ্য শহরে একটি ভবন নির্মাণ করতে হলে কিছু পুরবিধি মেনে চলা জরুরি। যথাযথ আনুষ্ঠানিকতা ব্যতিরেকে ভবন তৈরির নকশা অনুমোদন করানোও সেখানে অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু ঢাকার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে অর্থ হলে সব অবৈধ বিষয় বৈধ হয়ে যায়। আমাদের প্রিয় শহরের নাম মেগাসিটির তালিকায় উঠলেও ওই তালিকা তৈরি হচ্ছে জনসংখ্যার বিচারে, পুরপরিকাঠামোর মাপকাঠিতে নয়। এ শহরের অধিকাংশ ভবন নির্মাণের উপকরণ পরীক্ষা করা হয়নি। এসব বহুতলে বিদ্যুৎ সংযোগের সঠিক ব্যবস্থা নেই। অগ্নিনির্বাপণের বন্দোবস্ত অকিঞ্চিত্কর। স্বভাবতই যখন-তখন ভবন ভেঙে পড়ে, যত্রতত্র আগুন লাগে। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিপুল হলে কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে যায়, তদন্ত কমিটি গঠন হয়, অব্যবস্থা রোধে আশ্বাস দেয়; কিন্তু অনুকূল ভবন তৈরির শর্ত পূরণের অভাবে প্রতিশ্রুতির একটিও পালিত হয় না। পুনরায় পুরবিধির ফাঁকফোকর গলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে পুর আইন অমান্য করে ব্যাঙের ছাতার মতো শহরের যেখানে-সেখানে বেআইনিভাবে গজিয়ে ওঠে বহুতল ভবন। এমন অবস্থায় সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবনের শ্রেণী ঠিক না থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ মিলবে না। আশা করা যায়, এতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এ ঘোষণা যেন শুধু নির্দেশনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এখানে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজউক অনুমতি না দিলে সংশ্লিষ্ট ভবনে যেন বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়া হয়, সেটিও তদারক করা প্রয়োজন।

মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ভবনে বসবাস বা ব্যবহারের আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ব্যবহার বা বসবাস সনদ নিতে হবে। আইন চালুর পর ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এ ১০ বছরে প্রায় ৪০ হাজার ভবন নির্মাণ হয়েছে রাজধানীতে। অথচ মাত্র ১৬২টি ভবন ওই সনদ নিয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ। ব্যবহার সনদ না নেয়ায় নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিনা, তা নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো ভবন মালিক অনিয়ম করে নকশায় পরিবর্তন আনলেও তা ধরা পড়ছে না। ফলে নির্মিত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলেও তা চিহ্নিত হচ্ছে না। ঢাকাকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যাদের দায়িত্ব ছিল, তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। করলে অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণ করা সম্ভব ছিল না। রাজধানীতে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা উচিত। যেসব কর্মকর্তার আমলে এসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল, তাদের এবং ভবন মালিককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বহুতল অধিকাংশ ভবনেরই নকশা নেই। এসব ভবনে আগুন লাগলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। তখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের নকশা না দেখেই অন্ধকারে উদ্ধারকাজ চালাতে হয়। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ে। যারাই ভবন নির্মাণ করুক না কেন, অন্তত যথাযথভাবে অনুমোদন নিয়ে তৈরি করলে ভবনগুলো ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং দুর্ঘটনা তেমন একটা ঘটবে না। অনেক ক্ষেত্রে নির্মাণের সময় অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি ঘটছে। নির্মাণের সময় নকশার চেয়ে ডানে-বাঁয়ে এক-দেড় ফুট বাড়িয়ে ফেলছেন কিংবা আটতলার অনুমোদন নিয়ে সাড়ে আট বা নয়তলা বানিয়ে ফেলছেন। নির্মাণ শেষে ব্যবহার সনদ না নেয়া হলেও এসব ভবন মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এমন প্রবণতা বন্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে। সেক্ষেত্রে সনদ ব্যতিরেকে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া বন্ধ রাখার বিধানটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে রাজউককে আরো সক্রিয় হতে হবে।