আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
বাজারে অস্থিরতা দূর করুন

যে কোনো দেশের অর্থনীতির চালচিত্র কেমন, তা বোঝা যায় কিছু সূচক এবং তথ্য-পরিসংখ্যানে। যেমন- রাজস্ব আদায়, উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যাংক ঋণের ব্যবহার, মূল্যস্ম্ফীতির হার ইত্যাদি। নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের নির্মাণকাজে প্রয়োজন পড়ে নির্মাণ উপকরণ। নির্মাণ কর্মকাণ্ড মন্দা থাকলে তার প্রভাব পড়ে রড, সিমেন্ট, বালু প্রভৃতি উপকরণের শিল্প-ব্যবসায়। বাংলাদেশে বালু মেলে যথেষ্ট, কিন্তু বহু বছর সিমেন্ট ও রডের মতো উপকরণের জন্য নির্ভরতা ছিল অন্য দেশের ওপর। এখন চিত্র ভিন্ন- দেশেই উৎপাদিত হয় প্রচুর রড ও সিমেন্ট। নির্মাণকাজে গতি থাকলে এসব উপকরণের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। চাহিদা ভালো থাকলে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এবং পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ীরা তার সুযোগ গ্রহণেরও চেষ্টা করেন। বিপরীতটিও হতে পারে- ‘বেশি বিক্রির কারণে লাভের হার কম রেখেও বেশি লাভ’। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সব ক্ষেত্রে সেটা হয় না। অনেক ব্যবসায়ী চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। তাদের কাছে ‘যত বেশি চাহিদা, তত বেশি দাম- আরও বেশি লাভ।’ বাংলাদেশে নির্মাণ কর্মকাণ্ডে চাঙ্গাভাব এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর কাছে সেই সুযোগটিই এনে দিয়েছে, যার সাক্ষ্য বহন করছে শনিবারের ‘সংকটে নির্মাণ খাত’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি। এতে বলা হয়, দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে কিছুটা গতিশীল হয়ে উঠেছিল আবাসন খাত। কিন্তু গত তিন মাসে রড, সিমেন্ট, পাথর ও ইটের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভায় রডের দাম বাড়ার জন্য মালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়েছে। অথচ বিশ্ববাজারে রড-সিমেন্টের দাম কমছে। রডের উৎপাদকরা বলছেন- ঋণের সুদ হার বৃদ্ধি, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, বন্দর সমস্যা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যা ইত্যাদি কারণে আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি। আবার আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পর্যবেক্ষণের পেছনে নিশ্চয়ই উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তাহলে কেন বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য রডের উৎপাদক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না, সে প্রশ্ন সঙ্গত। অন্যদিকে, বাজারে অস্থিরতার ন্যায়সঙ্গত কারণ থাকলে তার প্রতিবিধানেও সরকারের করণীয় থাকে এবং সংসদীয় কমিটি তেমন সুপারিশ করতেই পারে। পারস্পরিক দোষারোপ কিংবা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো হলে সরকারকে অবশ্যই তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতেও ব্যবসায়ে স্বেচ্ছাচার চলে না- এটা কিন্তু এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী এ নিয়ম মানতে চান না। তাদের কারণে চাল-ডাল-পেঁয়াজসহ নানা ধরনের খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য ধরনের পণ্যের বাজারে মাঝেমধ্যেই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। আরও দুর্ভাগ্য যে, সরকার তখন হয়ে থাকে অসহায় দর্শক। এর অবসান কি ঘটবে না?