
ব্যাপক কর্মসংস্থান ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে আগামী বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) বিশেষ নজর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে নির্মাণ শিল্পে ব্যবহূত কাঁচামালের শুল্ক্ক কমানোর দাবি জানান তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সোনারগাঁও হোটেলে এনবিআর ও এফবিসিসিআইর পরামর্শক কমিটির ৩৯তম যৌথ সভায় এসব দাবি জানান তারা।
নতুন অর্থবছরের বাজেটের আগে বরাবরের মতো এনবিআর ও এফবিসিসিআই সরকারের নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করে। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এফবিসিসিআই সভাপতি বৈঠক সঞ্চালনার পাশাপাশি আগামী বাজেট নিয়ে সংগঠনের সাড়ে তিন শতাধিক প্রস্তাব তুলে ধরেন।
বৈঠকে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, রড, সিমেন্ট ও পাথরের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাথরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আমদানি হচ্ছে। এতে ৬৯ শতাংশ কর দিতে হয়। এ করহার পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আবাসন খাতে নিবন্ধন ব্যয় বর্তমানে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ। এই ব্যয় আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এটি কমাতে হবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মুনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, রডে ৩৫ শতাংশ, পাথরে ২৮ ও সিমেন্টে ১৮ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে। নির্মাণ উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে অনেকে কাজ ঠিকমতো করছেন না। এসব পণ্য তৈরিতে ব্যবহূত কাঁচামালের শুল্ক্কহার কমানোর দাবি জানান তিনি।
অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি জহিরুল হক চৌধুরী রডের কাঁচামাল আমদানিতে প্রতি টনে দেড় হাজার টাকা শুল্ক্ক তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিঙ্কারের শুল্ক্ক ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।
হালকা প্রকৌশল সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক এসএমই খাতের উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, এ খাতে কর আরোপের ক্ষেত্রে অনেক অসামঞ্জস্য রয়েছে। এমন কিছু কাঁচামাল রয়েছে, যা দেশে উৎপাদন হয় না, শতভাগ আমদানি করতে হয়। এসব কাঁচামালের কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন তিনি।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সি বলেন, কৃষক ও গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য শিল্পনীতিতে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ খাতে ভিয়েতনাম ৩৩০ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে। আর সেখানে বাংলাদেশ মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ডলার রফতানি করছে। যে আলুতে কৃষক লোকসান গুনছেন, তা প্রক্রিয়া করে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি সম্ভব। আলু প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম শাহদাত হোসেন বলেন, এ খাতে ৩২ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। ৬৫ কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হলে আগামী পাঁচ বছরে দুই বিলিয়ন ডলার রফতানিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এফবিসিসিআইর পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী চিকিৎসা মেশিনারিতে শুল্ক্ক ও ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ছাড় করানোর অনুরোধ জানান। এফবিসিসিআইর পরিচালক শমী কায়সার ই-কমার্স খাতকে করমুক্ত করার আহ্বান জানান।
রাজশাহী উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রোশেতী নাজনীন বলেন, উত্তরাঞ্চলের নারী উদ্যোক্তারা বাজেটে দেওয়া বরাদ্দের অর্থ পান না। শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক অর্থ বরাদ্দের পরিবর্তে সব অঞ্চলে দেওয়ার আহবান জানান তিনি।
প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন প্লাস্টিক পণ্য আমদানিতে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক্ক আরোপের প্রস্তাব দেন। ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি কামরুল ইসলাম গবেষণা ও উদ্ভাবনের কাজে ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইর পরিচালক আবু মোতালেব, নিজাম উদ্দিন, হাফেজ হারুন ও খন্দকার রুহুল আমিন, বিসিআইর সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, মোটরসাইকেল উৎপাদন ও সংযোজন সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ মোমেন ও আবদুস সালাম এবং পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনজুর মোর্শেদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।