অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রস্তাবিত ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মিত হতে যাচ্ছে। পূর্বাচলের ১৯ নং সেক্টরের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি) এলাকায় একশ’ একর জমিতে লিজ দেয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তাই এখনই ১৪২ তলা আইকনিক নির্মাণকাজ শুরু করতে কোনো বাধা রইলো না। সহসাই আইকনিক টাওয়ার নির্মাণকাজ শুরু করবে কনসোর্টিয়াম অফ পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড অ্যান্ড কাজিমা করপোরেশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এক বছরের বেশি সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের কেপিসি গ্রুপ এক প্রস্তাবে পূর্বাচলের ১৯ নং সেক্টরে সিবিডি এলাকায় ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার, আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম (৫০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন), ১০ হাজার ধারণক্ষমতার একটি অত্যাধুনিক কনভেনশন সেন্টার, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মর্ডান মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল নির্মাণসহ ইকোপার্ক ও গলফ কোর্স উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য একটি প্রস্তাব দেয়। এসব প্রস্তাব নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কেপিসি গ্রুপের দফায় দফায় বৈঠক হয়।
কেপিসি গ্রুপ তাদের প্রস্তাবে জানায়, অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আমেরিকার নেডেল ইনকরপোরেশন এবং সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণে বিশ্ববিখ্যাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মধ্যপ্রাচ্যের অ্যারাবিয়ান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (এসিসি) কেপিসি গ্রুপের নির্মাণ সহযোগী হিসেবে নিয়োজিত থাকবে। তারা প্রস্তাবে উল্লেখ করেন, এসব স্থাপনাগুলো নির্মাণ করতে প্রায় আড়াইশ’ একর জমি তাদের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ১৯ নং সেক্টরে অবস্থিত সিবিডি’র আওতাভুক্ত ১১৩ একর জমির মূল্য একরপ্রতি ১০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য সেক্টরে কমবেশি ১০৩ একর জমির মূল্য প্রতি একর ৭ কোটি টাকা। এসব জমির মূল্য বার্ষিক চারটি সমান কিস্তিতে ১৫ বছরে পরিশোধ করা হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়ার পর ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণের জন্য জমি লিজ দেয়ার কাজ শুরু করে রাজউক। প্রতিষ্ঠানটির ০৭/২০১৭তম কর্তৃপক্ষের সভায় নিলাম দরপত্র অনুমোদন পায় এবং নয় সদস্যের মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। নিলাম দরপত্র আহ্বানের পর মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস লিমিটেড, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড, স্ট্র্যাটেজিক গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট, ইনকরপোরেশন, মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এবং আন্না করপোরেশন (বিডি) লিমিটেড দরপত্র দলিল কিনে।
কিন্তু দরপত্র দাখিল করে স্ট্র্যাটেজিক গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট ইনকরপোরেশন- নেডেল কনসোর্টিয়াম এবং কনসোর্টিয়াম অফ পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড অ্যান্ড কাজিমা করপোরেশন। এর মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট ইনকরপোরেশন-নেডেল কনসোর্টিয়াম প্রতি একর জমির দাম ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং কনসোর্টিয়াম অফ পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড অ্যান্ড কাজিমা করপোরেশন ৩০ কোটি ২৫ লাখ একশ’ টাকা দর দেয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কনসোর্টিয়াম অফ পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড অ্যান্ড কাজিমা করপোরেশন-এর দরপ্রস্তাব গ্রহণ করার সুপারিশ করে মূল্যায়ন কমিটি। এর ভিত্তিতেই রাজউকের সর্বশেষ বোর্ড সভায় বিষয়টি অনুমোদন পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্যারিস-এর আইফেল টাওয়ার, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা, কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার-এর মতো ১৪২ তলা আইকন টাওয়ারটি নির্মিত হলে এটি বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টাওয়ার হিসেবে পরিচিতি পাবে। ফলে বাংলাদেশ মর্যাদার উচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও পর্যটন শিল্পে এক অভূতপূর্ব সাফল্যের বিপ্লব বয়ে আনবে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে সর্বোত্তম ও স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি আদর্শ শহর গড়ে তোলার জন্য পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ঢাকার অদূরে শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীর সংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থানে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার সাড়ে চার হাজার একর, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় এক হাজার ৫৭৭ একর এবং ঢাকা জেলার খিলক্ষেত থানার দেড়শ’ একর জমি অর্থাৎ সব মিলিয়ে ছয় হাজার ২২৭ একর জমিতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প অবস্থিত।
প্রকল্পের আওতায় মোট প্লটের সংখ্যা সাতাশ হাজার আটটি। এর মধ্যে আবাসিক প্লটের সংখ্যা ২৫ হাজার ১৬টি, বাণিজ্যিক প্লট এক হাজার ৩৩টি, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট ৪২৩টি, প্রশাসনিক প্লট ৪৭৩টি এবং ডিপ্লোম্যাটিক প্লট ৬৩টি। প্রকল্পটিকে একটি অত্যাধুনিক স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ১৯ নং সেক্টরে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি)- তে ২৪৫ একর, ১ নং সেক্টরে কমবেশি এক লাখ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি আর্ন্তজাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জন্য ৩৭ দশমিক ৪৯ একর, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, ইকোপার্ক, গলফ কোর্স, পাঁচ তারকা হোটেল, ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ লেক নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে জমি রাখা হয়েছে।