
রাজধানীর চকবাজারের উর্দু রোডে একটি ভবনে টাইলস লাগানোর কাজ করছিলেন রাসেল তালুকদার (২০)। যে জায়গায় কাজ করছিলেন রাসেল, এর কাছেই ছিল নির্মাণাধীন ভবনটির লিফট। রাসেল বুঝতে পারেননি। লিফটের নির্মাণাধীন জায়গাটির কোনো চিহ্নও দেওয়া ছিল না। তিনি ওই অরক্ষিত জায়গায় পড়ে যান। রাসেল বলছিলেন, ‘পইড়্যা যাওয়ার পর আমার কিছু মনে নাই। এরপর হাসপাতালে আছিলাম। এখন বাম পা নষ্ট হয়্যা গেছে। মেরুদণ্ডের সমস্যা। সোজা হইয়্যা দাঁড়াইবার পারি না।’
গত মার্চ মাসের শেষ দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। যে বাড়িতে কাজ করছিলেন, সেই মালিক কিছু টাকা দিয়েছেন। চিকিৎসার বাকি অর্থ দিতে হয়েছে নিজের সঞ্চয় থেকে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন এই যুবক। রাসেলের এক ভাই ও বোনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। রাসেলের মা এখন নিজেই উপার্জন করেন। পরিশ্রমী দেহটি এখন কর্মহীন। কিন্তু রাসেল এমনটা থাকতে চান না। বলছিলেন, ‘আমারে একটু সাহায্য করার কেউ নাই। মালিক বেশ কিছু টাকা দিছিল। সব তো চিকিৎসায় শ্যাষ। আমারে যদি কেউ একটা ছোট দোকান করার কিছু ট্যাহা দ্যায়, তাও সংসারটা চলে।’
২০১৭ সালে কর্মক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে নির্মাণ খাতে। এ খাতে মারা গিয়েছে তাঁদের সংখ্যা ১৩১ জন। এবং সবচেয়ে বেশি ৭৮৪ জন শ্রমিক মারা গেছেন পরিবহন খাতে। ২০১৬ সালের তুলনায় এই দুই খাতেই নিহত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। ওই বছর পরিবহন খাতে নিহত হন ২৪৯ আর ৮৫ জন নির্মাণশ্রমিক।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘পরিবহন, পাথর ভাঙা বা নির্মাণ খাতের মতো খাতে শ্রমঘণ্টা, মজুরির এসবের ক্ষেত্রে নিয়ননীতির কোনো বালাই নেই। গাছ থেকে ফল পড়ার মতো একটি করে জীবন টুপ করে ঝরে যায়, কেউ খেয়াল রাখে না।’
ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশের (ইনসাব) হিসাব অনুযায়ী দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ শ্রমিক বা তাঁদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক মিলে মিটমাট করে ফেলেন। নামমাত্র অর্থ দিয়ে বা না দিয়েই মালিক পার পান।
ইনসাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পত্রিকায় নির্মাণশ্রমিকের নিহত হওয়ার যে খবর আসে, প্রকৃত সংখ্যা তার অনেক বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর পাওয়াই যায় না।
তৈরি পোশাকশিল্পে বেশি দৃষ্টি দিয়ে অন্য খাতে সরকার অবহেলা করছে—শ্রমিক সংগঠনের এই অভিযোগ মানতে রাজি নন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘নির্মাণ খাতের সংগঠনগুলোর সঙ্গে বার কয়েক বসেছি। এ খাতে অন্য সময়ের তুলনায় নিরাপত্তা বেশি নেওয়া হয়।’