আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
সিডিএ’র নিয়ন্ত্রণে আসছে আবাসন ব্যবসা

অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও প্রতারণার অভিযোগ আছে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নামসর্বস্ব আবাসন প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠছে। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে সরেও গেছে। এ অবস্থায় আবাসন ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
তবে কয়েক বছর আগেও সিডিএ এমন উদ্যোগ নিলেও এতোদিন মুখ থুবড়ে পড়েছিলো। অবশেষে চলতি মাস থেকেই আবাসন ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে যাচ্ছে সিডিএ। আবাসন ব্যবসা করতে হলে ১৫ মে এর মধ্যে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে আবেদন করতে হবে। এরপর নিবন্ধন পাওয়া গেলেই কেবল ব্যবসা করা যাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা গেছে, পাঁচবছর আগেই আবাসন কোম্পানিগুলোর নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ২০১৩ সালে সিডিএ থেকে দরখাস্ত আহŸান করা হয়। তখন ২৫৩টি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান (আবাসন কোম্পানি) নির্ধারিত ফি দিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। তখন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) থেকে আপত্তি তোলা হয়। নিবন্ধন ফি কমানো এবং রিহ্যাব সদস্য ছাড়া কাউকে নিবন্ধন না করানোর দাবি তোলা হয় রিহ্যাব থেকে। এ নিয়ে বিভিন্ন দেন দরবারের কারণে তা এতেদিন স্থবির হয়ে পড়েছিল। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে রিহ্যাবের দাবি নিয়ে নির্দেশনা পেয়েছে সিডিএ। রিহ্যাবের সদস্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলেও নিবন্ধন ফি কমানোর দাবি নাকচ করেছে মন্ত্রণালয়। ফলে আগের নির্ধারিত ফি দিয়েই আবাসন প্রতিষ্ঠানকে সিডিএ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। এজন্য অবশ্যই আবাসন প্রতিষ্ঠানকে রিহ্যাবের সদস্য হতে হবে। রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এই আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। আবাসন প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এরপরই নিবন্ধন সনদ প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে। এ পর্যন্ত চউকের কাছে ২৫০টির অধিক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে কথা হলে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও অথরাইজেশন কর্মকর্তা-২ মোহাম্মদ শামীম বলেন, রিহ্যাবের পক্ষে দুটি দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেন দরবার করছিল। এখন তাদের দাবিগুলোও নিষ্পত্তি হয়েছে। তাই প্রথম দফায় চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। এর পরপরই শর্তপূরণ করতে পেরেছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধন সনদ দেয়া হবে। নিবন্ধন নেই এমন কোনো ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারবে না। ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই নিবন্ধন নিয়েই ব্যবসা করতে হবে।
তিনি বলেন, নিবন্ধনের জন্য রিহ্যাবের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আবাসন খাতে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা বিশৃঙ্খলা অনেকটা কমে যাবে। প্রতিষ্ঠানগুলো আসবে জবাবদিহিতার আওতায়। প্লট বা ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে প্রতারণা কিংবা হয়রানির শিকার হবেন না সাধারণ মানুষ।
এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ শামীম বলেন, নতুন কোনো আবাসন প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে চাইলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় রিহ্যাবের সদস্য হয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সব সময় খোলা থাকবে। এখন যারা আবাসন ব্যবসায় নিয়োজিত তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
নিয়মানুযায়ী কোনো ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। যদি সিডিএর আওতাধীন এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করে তাহলে তাকে অবশ্যই সিডিএতে নিবন্ধিত হতে হবে। রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইনের ৫(১) ধারা অনুযায়ী, ‘কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রত্যেক রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট হতে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে।’
এতোদিন এ নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করেনি আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে এ খাতে নানা বিশৃঙ্খলা চলে আসছিলো। সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত হতে হয়েছিল প্রতারিত। অনেকের প্রতারক আবাসন ব্যবসায়ীদের হাতে সারা জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে পথে বসতে হয়েছে। নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে এ খাতে জবাবদিহতা সৃষ্টি হবে। প্ল্যান পাস থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে সিডিএ। এতে গ্রাহক প্রতারণার ফাঁদ বন্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হলে রিহ্যাব চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, আবাসন প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যানের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা (সিডিএ) একটি ডেটলাইন দিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে, অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের প্ল্যান পাস করাবে না।
তিনি বলেন, এতোদিন আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো কোন নিয়ন্ত্রণে ছিলো না। তাদের প্রত্যেককে একটা জায়গায় আনতে হবে। সিডিএর নিবন্ধনে রিহ্যাবের সদস্যপদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সিডিএর নিবন্ধনের ফলে প্রকৃত আবাসন ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। নিয়ন্ত্রণ থাকায় আবাসন খাতে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে আসবে।