
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নির্দেশ উপেক্ষা করে এখনো চলছে সাভারে মধুমতির কার্যক্রম। নির্দেশের পর তিনদিন অতিবাহিত হলেও এখনো মধুমতি মডেল টাউনের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়নি, প্রতিদিন চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উচ্চ আদালত থেকে অবৈধ ঘোষিত সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার এলাকায় অবস্থিত মধুমতি মডেল টাউনে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক ভবন।
আদালতের রায় অনুযায়ী প্রকল্পের ভরাট করা মাটি অপসারণ করে ৬ মাসের মধ্যে যেখানে জলাভূমিগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কথা ছিল সেখানে এখন চলছে ১০টিরও বেশি বাড়ির কাজ।
কয়েকটি বাড়িতে মানুষ বসবাস শুরু করেছে এবং মধুমতি মডেল টাউনের ভেতরে গড়ে উঠেছে অনেক দোকানপাট। এছাড়া রয়েছে অনেক শ্যুটিং স্পট যেখানে অসামাজিক কার্যকালাপ চলার অভিযোগ রয়েছে।
মধুমতি মডেল টাউনের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের সঙ্গে যোগসাজশে মধুমতি মডেল টাউন ঐক্য পরিষদ নেতারা ও কয়েকজন প্লট মালিক এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে রোববার রাতে নিজ সংসদীয় এলাকা সাভারের হেমায়েতপুরে এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার, ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর জেনারেল ম্যানেজার ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন মধুমতি টাউনের বিরুদ্ধে। কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশ কোনো কাজেই আসছে না। উল্টো মধুমতি টাউনের ভেতরে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। অপরিচিত লোকজনের প্রবেশ কড়াকড়ি করা হয়েছে।
২০১২ সালের সাত আগস্ট মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পটিকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন আদালত। ২০১৩ সালের ১২ জুলাই ওই রায়ের পুরোটা প্রকাশিত হয়। রায়ে প্রকল্পটিকে অবৈধ উল্লেখসহ প্লট ক্রেতাদের দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা ফেরত দিতে মধুমতি মডেল টাউন আবাসিক প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডসহ পক্ষগুলোর পৃথক পাঁচটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেয়া হয়।
রায়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ওই এলাকায় অবস্থিত প্রকল্পের জায়গা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভরাট করা মাটি অপসারণ করে ৬ মাসের মধ্যে জলাভূমিগুলোকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে আবাসন কোম্পানি মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডকে।
রায়ে বলা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই আবাসন কোম্পানি মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেড গত ২০০৩ সালে আমিন বাজার এলাকায় মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প নামে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
এ প্রকল্পের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বেলা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে ২০০৪ সালে। প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত রুল জারির পাশাপাশি প্রকল্পের কাজে স্থগিতাদেশ দেন।
২০০৫ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্টের রায়ে ওই প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে বন্যাপ্রবাহ এলাকাকে সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেড ও বেলাসহ অন্যরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। এসব আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আপিল বিভাগ প্রথমে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মধুমতি মডেল টাউনের দায়িত্বে থাকা সহকারী সার্ভেয়ার আবুল হোসেন বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই আমরা এখানে নতুন নতুন বাড়ি করছি। আর এখনো আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে কেউ এখানে আসেনি।