আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
তড়িঘড়ি করে গৃহঋণের বিতর্কিত পরিপত্র বাতিল

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পাঁচ শতাংশ সুদে গৃহঋণের নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে সরকার। তবে সেটি এখনো প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়নি। কিন্তু এর আগেই সরকারি ব্যাংক থেকে শুধুমাত্র নিজেদের কর্মকর্তাদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ নেয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১৫ মে) বিতর্কিত একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

তড়িঘড়ি করে জারি করা ওই পরিপত্রটি উপসচিব মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন। তাতে বলা হয় শুধুমাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ১ কোটি ও সর্বনিম্ন ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।

এ পরিপত্রের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। এ প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জারি করা পরিপত্রটি দ্রুত প্রত্যাহার করার জন্য গতকাল বুধবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রাহমানকে নির্দেশ দেন। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ পরিপত্রটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকারের যে কোনো বিভাগকেই এ ধরনের পরিপত্র জারির আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মতামত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তা নেয়নি । এদিকে ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮’-এর একটি খসড়া গত মাসে চূড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ। অনুমোদনের জন্য এই খসড়া এখন মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

অর্থ বিভাগের চূড়ান্ত নীতিমালার আওতায় জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রে সর্বোচ্চ ১ কোটি ও সর্বনিম্ন ৬০ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল।

সকল সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অর্থ বিভাগ কর্তৃক চূড়ান্ত নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতনকাঠামোর পঞ্চম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা, যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার বা এর বেশি তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে গৃহনির্মাণে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা। বেতনকাঠামোর নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বা যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

দশম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড বা নয় হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা আট হাজার ২৫০ টাকা থেকে আট হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন ৩০ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য পাবেন ২০ লাখ টাকা।

আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জারিকৃত পরিপত্র অনুয়ায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অফিস সহায়ক ঋণ পাবেন ৬০ লাখ টাকা, গাড়িচালক ৬৫ লাখ, ডেসপার রাইডার ৬৫ লাখ, ক্যাটালগার ৭০ লাখ, হিসাবরক্ষক ৭০ লাখ, কম্পিউটার অপারেটর ৭০ লাখ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ৭০ লাখ, অফিস সহকারী বা সাঁট মুদ্রাক্ষরিক ৭০ লাখ, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক-কাম কম্পিউটার ৭০ লাখ, প্রশাসনিক বা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ৭৫ লাখ, সহকারী মেইনন্টেন্যাস ইঞ্জিনিয়ার ৮০ লাখ, সহকারী প্রোগ্রামার ৮০ লাখ, সহকারী সচিব ৮০ লাখ, সিনিয়র সহকারী সচিব ৮০ লাখ, উপসচিব ৮৫ লাখ, যুগ্মসচিব ৯০ লাখ, অতিরিক্ত সচিব ৯৫ লাখ এবং সিনিয়র সচিব বা সচিব বা ভারপ্রাপ্ত সচিবদের জন্য ১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল।

কিন্তু অর্থমন্ত্রীর নির্দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। জাগোনিউজ